ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্নীতি রোধের উপায় নিয়ে কাল তিন প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য শুনবে হাইকোর্ট

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় ক্ষোভ

প্রকাশিত: ২৩:১৭, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় ক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি রোধে সমন্বিতভাবে কিভাবে কাজ করা যায় সে বিষয়ে মতামত জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট। আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের আদালতে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ। এছাড়া আদালত ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি) এ তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, দুর্নীতি তদন্তে কমিটি পুনর্গঠন করে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গবর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে প্রধান ও উপমহাব্যবস্থাপক সারোয়ার হোসেনকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান, দুই মহাব্যবস্থাপক কবির আহমেদ ও নুরুল আমিন। মঙ্গলবার সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব নুরুর রহমানকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর আগে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) অনিয়ম তদন্ত করতে কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। নির্দেশানুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ ৫ সদস্যের কমিটির তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেন। পরে আদালত কমিটিতে সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম এবং সাবেক সচিব নুরুর রহমান অন্তর্ভুক্ত করে আদেশ দেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যে ধরনের অনিয়ম ও লুটপাট হয়েছে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না হয়, এ জন্য পরামর্শ দেবে কমিটি। তারা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের ঘটনা খতিয়ে দেখবে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের যারা দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখবে কমিটি। এছাড়া কমিটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের যে কোন বিভাগ, কর্মকর্তার পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলে হাইকোর্টের আদেশে বলা হয়। এ দিকে আদালতের আদেশ অনুযায়ী, মঙ্গলবার ১৪৩ জন ঋণ খেলাপীর হাজির হওয়ার কথা ছিল। সেখানে ৫১ জন হাজির হয়েছিলেন। বিষয়টি নজরে আসার পর হাইকোর্ট বলে, আদালতের তলবে যারা আজকে আসেননি, তাদের আরেকবার সুযোগ দেয়া হবে। এরপরও তারা আদালতে হাজির না হলে প্রয়োজনে গ্রেফতার করে কোর্টে হাজির করা হবে। আদালতে ঋণখেলাপীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী গাজী মোস্তাক আহমেদ। গত ২১ জানুয়ারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং এ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে পাঁচ লাখ টাকা ও তার বেশি অর্থঋণ নিয়ে খেলাপী হওয়া এমন ২৮০ ব্যক্তিকে তলব করেন হাইকোর্ট। ২৩ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি তাদের পর্যায়ক্রমে আদালতে হাজির হয়ে ঋণ ও তা পরিশোধের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানাতে বলা হয়। আদালতের আদেশ অনুযায়ী আজ ১৪৩ জন ঋণ খেলাপীর হাজির হওয়ার কথা ছিল। ওইদিন অবসায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিকুইডেটর) আসাদুজ্জামান খানের পক্ষে আদালতে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মেজবাহুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কাজী এরশাদুল আলম। অন্যদিকে বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, পি কে হালদার ও তার সহযোগীরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা দুদক কিছুই করতে পারল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বশীল নির্বাহী পরিচালক ও উপ-পরিচালকরা পিপলস লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মধু খেয়েছে। পিপলস লিজিংয়ে এতকিছু ঘটে গেল অথচ তারা কিছুই করেনি। এ সময় আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে চোর ও ডাকাত বলে সম্মোধন করেন। দুদক প্রসঙ্গে আদালত বলে, পি কে হালদারের বিষয়ে আমরা আদেশ দিলাম সেই কবে। আর জানুয়ারিতে এসে দুদক বলল, পি কে হালদার পালিয়ে গেছে। এ সময় আদালত বাংলাদেশ ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা ও তাদের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন। আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম, ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে এ্যাডভোকেট গাজী মোস্তাক আহমেদ, পিপলস লিজিংয়ের সাময়িক অবসায়কের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
×