ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আয়ান আব্রাজ

সময় এখন ওসাকার

প্রকাশিত: ২১:৫১, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সময় এখন ওসাকার

গত অক্টোবরে তেইশ বছরে পা রাখেন নাওমি ওসাকা। এই বয়সেই বিশ্ব টেনিসের সব আলো নিজের করে নিয়েছেন তিনি। সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে চ্যাম্পিয়ন হয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। এই বয়সেই চার গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ওসাকা। শুধু তাই নয়, ৩০ বছরের মধ্যে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে প্রথম চার গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে তার সবকটিতেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়লেন তিনি। তার আগে এই রেকর্ড গড়েছিলেন মনিকা সেলেস। করোনাভাইরাসের কারণে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শুরুটা হয়েছিল একটু দেরিতে। নিয়মের কড়াকড়িও ছিল একটু বেশি। কড়া লকডাউনের কারণে ১৪ দিন কঠিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে খেলোয়াড়দের। সব বাধা অতিক্রম করেই নতুন মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের দুর্দান্ত সূচনা করেন ওসাকা। তবে সেমিফাইনালে নিজের শৈশবের আদর্শ সেরেনা উইলিয়ামসকে যখন উড়িয়ে দিয়েছিলেন তখনই তার পক্ষে বাজি নিয়ে নিয়েছিলেন টেনিসবোদ্ধাদের অনেকেই। শেষ পর্যন্ত সেই বাজি ওসাকার পক্ষেই গেল। ফাইনালে শৈশবের এক প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বীর বিপক্ষেও সেই বিধ্বংসী রূপে হাজির হন ওসাকা। শনিবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে যুক্তরাষ্ট্রের জেনিফার ব্র্যাডিকে সরাসরি ৬-৪ এবং ৬-৩ গেমে হারিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ গ্র্যান্ডস্লাম শিরোপা উঁচিয়ে ধরলেন তৃতীয় বাছাই। আর তাতেই জাপানী তারকা জায়গা করে নিলেন ইতিহাসের সোনালী পাতায়। মনিকা সেলেসের পর প্রথম নারী খেলোয়াড় হিসেবে ক্যারিয়ারের প্রথম চার গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালই জিতে নিলেন ২৩ বছর বয়সী ওসাকা। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি অস্ট্রেলিয়ান ওপেন এবং ২০১৮ ও ২০২০ সালে জিতেছেন ইউএস ওপেন। গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালে শতভাগ জয়ের রেকর্ড অক্ষত রেখে বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসাও নিশ্চিত করেন ওসাকা। অন্যদিকে নিজের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম ফাইনালে হারলেও এক লাফে নয় ধাপ এগিয়ে ১৩ নম্বরে উঠে এসেছেন ২৫ বছর বয়সী ব্র্যাডি। শৈশবে ফ্লোরিডার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে নিয়মিত পরস্পরের মুখোমুখি হলেও পেশাদার টেনিসে ওসাকার মতো দ্রুত পাদপ্রদীপের আলোয় আসতে পারেননি ব্র্যাডি। এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আগে গ্র্যান্ডস্লাম মঞ্চে তার সেরা সাফল্য ছিল গত বছর ইউএস ওপেনের সেমিফাইনালে খেলা। সেখানেও ব্র্যাডির স্বপ্নযাত্রা থেমেছিল ওসাকার কাছে হেরে। এবারও তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন ওসাকা। করোনাভাইরাসের কারণে গত মৌসুমের বেশিরভাগ সময়ই আতঙ্কে ছিলেন খেলোয়াড়রা। এই সময় খেলা হলেও গ্যালারিতে দর্শক ছিল না। গত বছরের শেষের দিকে ইউএস ওপেনেও ওসাকা জিতেছিলেন দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। তবে এবারের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের প্রথমদিকে দর্শকদের উপস্থিতির অনুমতি ছিল। যদিওবা পরে লকডাউন দিলে আবারও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। তবে ফাইনাল ম্যাচে সাড়ে ৭ হাজার দর্শক প্রবেশের অনুমতি ছিল। আর ফাইনালে দর্শক থাকায় বাড়তি রোমাঞ্চ ছুঁয়ে গেছে খেলোয়াড়দের। তাতে রোমাঞ্চিত হয়েছেন ওসাকা নিজেও। এ প্রসঙ্গে বর্তমান বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে থাকা ওসাকা বলেন, ‘মাঠে দর্শক থাকার অনুভূতিটা দারুণ। আগের গ্র্যান্ডস্লাম খেলেছিলাম দর্শকদের ছাড়াই। তাদের প্রাণশক্তি সঙ্গে থাকা মানে অনেক কিছু।’ এদিকে, পুরুষ এককে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনকে নিজেরই বানিয়ে নিয়েছেন নোভাক জোকোভিচ। ফাইনালে উঠবেন, আর শিরোপা জিতবেন না- মেলবোর্ন পার্কে কখনও এমনটা হয়নি তার। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি সার্বিয়ান তারকার। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের রড লেভার এ্যারেনায় রবিবার ফাইনালে প্রথম সেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও পরের দুই সেটে দাঁড়াতেই পারলেন না ড্যানিল মেদভেদেভ। চতুর্থ বাছাই এই রাশিয়ানকে সরাসরি সেটে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ছেলেদের এককে শিরোপা ধরে রেখেছেন র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ খেলোয়াড় জোকোভিচ। ফাইনালে ৭-৫, ৬-২ এবং ৬-২ গেমে জেতেন ৩৩ বছর বয়সী এই সার্বিয়ান। প্রতিযোগিতায় এটি তার টানা তৃতীয় ও সব মিলিয়ে নবম শিরোপা। ছেলেদের এককে সবচেয়ে বেশি ২০টি করে গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতা রজার ফেদেরার ও রাফায়েল নাদালের রেকর্ড স্পর্শের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন নোভাক জোকোভিচ। জিতলেন অষ্টাদশ শিরোপা। এদিন জোকোভিচ ছিলেন আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এক ঘণ্টা ৫৩ মিনিটে ম্যাচ শেষ করেন তিনি। রড লেভার এ্যারেনায় ৯ নম্বর শিরোপা উঁচিয়ে ধরে জোকোভিচ বলেন, প্রত্যেক বছর আমি তোমাকে আরও বেশি করে ভালবাসী। ভালবাসার এই সম্পর্ক শুধু এগিয়েই যাবে। ২০০৮ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের স্বাদ পেয়েছিলেন জোকোভিচ। এই মেলবোর্নেই তার স্বপ্ন-যাত্রার সূচনা হয়েছিল। সেইসঙ্গে ইতিহাসেও জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। সার্বিয়ার প্রথম পুরুষ খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। সেই যে শুরু তার পরের গল্পটা শুধুই এগিয়ে চলার। ৩৩ বছর বয়স জোকোভিচের। তার খেলা দেখে বুঝাই যাচ্ছে যে, কেন তাকে ওপেন যুগে মেলবোর্ন পার্কের রাজা বলা হয়। মেদভেদেভের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে ফাইনালে তার না হারার রেকর্ড অক্ষুণ্ন্ন রাখতে সমর্থ হলেন সার্বিয়ান তারকা। সেইসঙ্গে টেনিসের সর্বোচ্চ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের সংখ্যাটাকে নিয়ে গেলেন ১৮তে। এর ফলে রজার ফেদেরার এবং রাফায়েল নাদালের চেয়ে দুটি গ্র্যান্ডস্লাম পিছিয়ে আছেন জোকোভিচ। পুরুষ এককে গত দেড় দশক ধরেই রাজত্ব করছেন টেনিসের ত্রিমূর্তি হিসেবে বিবেচিত রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জোকোভিচ। প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে সবার আগে ২০ গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের অনন্য নজির গড়েন রজার ফেদেরার। পরবর্তীতে সুইজারল্যান্ডের জীবন্ত এই কিংবদন্তির রেকর্ডে ভাগ বসান রাফায়েল নাদাল। তাদের স্পর্শ করতে জোকোভিচের প্রয়োজন মাত্র দুটি গ্র্যান্ডস্লাম। পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা আর ফিটনেস দেখে মনে হয় সার্বিয়ান তারকার জন্য তা কেবল সময়েরই ব্যাপার।
×