ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির বিচার

প্রকাশিত: ২১:০২, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১

চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির বিচার

পুরান ঢাকার আবাসিক ভবনগুলোর অনেক স্থানে বিস্ফোরক রাসায়নিক গুদামের অবস্থান। এগুলো অপসারণের জন্য সরকারী নির্দেশনামা জারি করা হলেও তা মানার লক্ষণ আজ অবধি অনুপস্থিত। ফলে আবাসিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও সম্পদ জিম্মি হয়ে আছে এসব ভয়ঙ্কর গুদামের উপস্থিতির কারণে। পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ দিবসের প্রথম প্রহরে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের বীভৎসতা সবাইকে হতভম্ব করে দেয়। প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় ৭০ জন আদম সন্তানের। পরিবেশবাদীদের পক্ষ থেকে ২১ ও ২২ ফেব্রুয়ারি এক প্রতিনিধিদল সরেজমিনে চুড়িহাট্টার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ২৪ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনে তাদের গুরুত্বপূর্ণ অভিমত প্রকাশ করেন। মর্মস্পর্শী এমন অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হতে থাকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। অবস্থার গুরুত্ব বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরান ঢাকা থেকে এসব বিস্ফোরক গুদাম ও কারখানা সরানোর জন্য তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের স্বজনরা আজও সেই অসহনীয় দৃশ্যের স্মৃতি বহন করে চলেছেন। কিন্তু প্রতিকারের সামান্য আলামতও দৃর্শমান না হওয়ায় সংশ্লিষ্টরা হতাশ এবং বীতশ্রদ্ধ। আগের মতোই প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বিস্ফোরকের দ্রব্য ব্যবসা এবং কারখানা দৃষ্টিকটুভাবে চলমান। সরিয়ে ফেলার নাম-গন্ধও নেই। ভুক্তভোগীরা মনে করছেন বাড়িওয়ালাসহ কারখানার মালিকরা যৌথভাবে এই অগ্নিদানবগুলো লালন-পালন করছেন তাদের ব্যবসার স্বার্থে। অবৈধ কারখানাগুলো বহালতবিয়তে হরেকরকম দুর্যোগ মাথায় নিয়ে তাদের অনৈতিক ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এমন অবৈধ বিস্ফোরক গুদামের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। ছোট-বড় সব মিলিয়ে রাসায়নিক কারখানার সংখ্যা ২৫ হাজার। ইতোপূর্বে ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানি ঘটে ১২৪ জনের। তখনও আবাসিক এলাকা থেকে গুদামঘর সরিয়ে ফেলার নির্দেশ এলেও তা করা হয়নি। এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন, প্রতিবাদ করা ছাড়াও আলাপ-আলোচনাও নিয়মিত চলে। কিন্তু ফলশ্রুতিতে কোন আশার আলো দেখা যায় না। আন্দোলনরত পরিবেশবাদীরা ক্রমাগত অভিযোগ করে চলেছেন অগ্নিদুর্বিপাকের জন্য দায়ী সংশ্লিষ্ট ভবন এবং কারখানার মালিকদের এখনও কোন আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি বলে। ফলে কেমিক্যাল গোডাউন ও প্লাস্টিক কারখানাগুলো তাদের ভয়ঙ্কর বিস্ফোরক উপাদান নিয়ে ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ক্ষতিপূরণ দেয়ার অঙ্গীকার করলেও তা বাস্তবায়নের মুখ দেখেনি। অন্যদিকে ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ বনানীর ২৩ তলা এফআর টাওয়ারে আগুন লাগে। এতে ২৬ জন মারা যান এবং আহত হন ৭৬ জন। তদন্তে উঠে আসে টাওয়ারে কর্তৃপক্ষ ১৮ তলার ভবন অনুমোদন পেলেও বাকি ৫ তলা নিজেদের দায়বদ্ধতায় নির্মাণ করে। এমন জালিয়তি ধরা পড়লেও শেষমেষ দুদকের তদন্তে কোন অভিযোগ সেভাবে প্রমাণ করা যায়নি। সঙ্গত কারণে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের অব্যাহতি পেতেও সময় লাগেনি। মারাত্মক এমন সব দুর্ঘটনার মূল উৎসকে জিইয়ে রেখেই রাজধানীতে বিপদমুক্ত থাকা সত্যিই অসম্ভব।
×