ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কমেনি ভোজ্যতেলের দাম

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

কমেনি ভোজ্যতেলের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে কমেনি ভোজ্যতেলের দাম। সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হওয়ায় অসুবিধায় পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। পাইকারি বাজার ও মিলগেটে দাম না কমায় রাজধানীর খুচরা বিক্রেতারাও রয়েছেন অস্বস্তিতে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে দ্রুত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত দাম কার্যকর করার কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান খুচরা বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পামওয়েল খোলা, পামওয়েল সুপার এবং ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের। রাজধানীর কাপ্তান বাজার, ফকিরাপুল বাজার, কাওরান বাজার, যাত্রাবাড়ী বাজার এবং খিলগাঁও সিটি কর্পোরেশন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভোজ্যতেলে সরকার নির্ধারিত দাম এখনো কার্যকর হয়নি। এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মিলমালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। ওই সময় তিনি বলেছিলেন, নির্ধারিত দাম কার্যকর না করলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাণিজ্যমন্ত্রীর ওই হুশিয়ারি থোরাইকেয়ার করে ব্যবসায়ীরা আগের মতো বেশি দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করছে। এতে করে বাজার স্থিতিশীল হতে পারছে না। বর্তমান রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১১৮-১২২, ব্র্যান্ডভেদে সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতল ৬২৫-৬৫০, সয়াবিন তেলের এক লিটারের বোতল ১৩৫-১৫৫ এবং পামওয়েল লুজ প্রতিলিটার ১০৫-১১০, পামওয়েল সুপার প্রতিলিটার ১০৮-১১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি সূত্রও ভোজ্যতেল বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ার খবর দিয়েছে। সংস্থাটির তথ্যমতে, প্রতিলিটার ১ লিটার বোতলজাত সয়াবিন ১৩০-১৫০, পাঁচলিটারের ক্যান ৫৮০-৬৩০, খোলা সয়াবিন ১১৫-১১৮ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া পামওয়েল লুজ ১০০-১০৫, পামওয়েল সুপার ১০৫-১০৭ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অর্থাৎ নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের ভোজ্যতেল। অন্যদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাজার স্থিতিশীল করতে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১১৫ এবং বোতলজাত প্রতিলিটার সয়াবিন ১৩৫ টাকায় বিক্রি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই সময় আরও জানানো হয়েছিল প্রতি লিটার সয়াবিন (খোলা) মিলগেটে ১০৭ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১১০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ১২৩ টাকা, পরিবেশক মূল্য ১২৭ টাকা এবং খুচরা মূল্য ১৩৫ টাকা। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন মিলগেট মূল্য ৫৮৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৬০০ টাকা এবং খুচরা মূল্য ৬২৫ টাকা। আমাদের দেশে যে তেল ব্যবহার করি তার ৭০ শতাংশ পাম সুপার, যার প্রতি লিটার মিলগেট মূল্য (খোলা) ৯৫ টাকা, পরিবেশক মূল্য ৯৮ এবং খুচরা বাজারে ১০৪ টাকা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভোজ্যতেলের পাইকারি বাজার হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের এক তেল ব্যবসায়ী জনকণ্ঠকে বলেন, মিলগেট থেকে এখনো বেশি দাম দিয়ে তেল আনতে হচ্ছে। এছাড়া অর্ডার মতো তেলের সরবরাহ করা হচ্ছে না। এরফলে পাইকারি বাজারেও তেলের দাম যে বেশি কমেছে সেটা বলা যায় না। আর এ কারণে ভোক্তা পর্যায়েও ভাল খবর নেই। খুচরা ক্রেতাদের বেশি দাম দিয়ে তেল কিনতে হচ্ছে। তিনি বলেন, মিলগেটে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসলে তেলের দাম বাড়ার কোন সুযোগ নেই। তবে আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে সয়াবিন পাঁচ লিটারের বোতলজাত ক্যানের দাম। জানা গেছে, আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে রোজা শুরু হচ্ছে। এর আগে মার্চের শেষদিকে পালিত হবে পবিত্র শবে-বরাত। সামনে বড় এই দুই ধর্মীয় অনুষ্ঠান সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীরা তেলে নিয়ে কারসাজি শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকদফায় তেলের আমদানি বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট পরিমাণ তেল আমদানি করলেও আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ইচ্ছেমতো তেলের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া বিদ্যমান সাপ্লাই চেইনে বড় সমস্যার কারণে ভোজ্যতেলের দামের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। মিলমালিকরা উৎপাদন ক্ষমতার অতিরিক্ত সরবরাহ আদেশ (সাপ্লাই অর্ডার-এসও) ইস্যু করে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়াচ্ছে। জানা গেছে, গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাড়তে শুরু করে ভোজ্যতেলের দাম। এখন দেশে সর্বোচ্চ দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্যমতে, একবছরে প্রতিলিটার ভোজ্যতেলে দাম বেড়েছে ২৫-৩৮ শতাংশ পর্যন্ত, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও আমদানিকারক ও মিলমালিকরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশে এর প্রভাব পড়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে এখন সবচেয়ে বেশি অস্বস্তি বিরাজ করছে ভোজ্যতেলের কেনাকাটায়।
×