গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত এবং আউং সান সুচিসহ রাজনীতিকদের আটকের প্রতিবাদে সোমবার সাধারণ ধর্মঘট এবং রাস্তায় রাস্তায় আরও বিক্ষোভ দেখানোর ডাক দিয়েছে মিয়ানমারের অভ্যুত্থানবিরোধীরা। মান্দালয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ২ জন নিহতের পর সংঘাত আরও প্রাণ কেড়ে নিতে পারে বলে কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভকারীদের হুঁশিয়ারও করেছে। এদিকে মিয়ানমারের সামরিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জোরালো ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রবিবার রাতে টুইটারে দেয়া এক পোস্টে নিজ দেশের এমন অঙ্গীকারের কথা জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিনকেন। অন্যদিকে সামরিক অভ্যুত্থানের নেতাদের অবশ্যই গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত নেত্রী আউং সান সুচিকে মুক্তি দিতে হবে। যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব জাতিসংঘে এ আহ্বান জানাবেন। একইসঙ্গে ওই বক্তব্যে তিনি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্ষমতা ছাড়ার কথাও বলবেন। সোমবার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়। জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য দেবেন ডমিনিক রাব। তখনই এ কথা বলবেন তিনি। এছাড়া অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে দেশটির খ্যাতিমান একজন অভিনেতাকে গ্রেফতার করেছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এএফপি, রয়টার্স ও ব্লুমবার্গ।
আরও সেনা মোতায়েন এবং নতুন নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও মিয়ানমারের জেনারেলরা দেশটিতে দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে ১ ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের বিরোধিতা এবং আউং সান সুচিসহ আটকদের মুক্তির দাবিতে চলা বিক্ষোভ ও আইন অমান্য কর্মসূচী বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে। অভ্যুত্থানবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ মং সৌংখা সোমবারের বিক্ষোভে যোগ দিতে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। ‘যাদের বাইরে আসার সাহস নেই, তারা ঘরে থাকুন। যেভাবেই হোক আমি বাইরে বের হব। আমি জেনারেশন জেডকে (চলতি শতকের দ্বিতীয় দশকে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে) প্রত্যাশা করছি। পার্টনাররা, চল একত্রিত হই,’ রবিবার রাতে ফেসবুক পোস্টে এমনটাই লিখেছেন এ তরুণ রাজনৈতিক কর্মী। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশের দূতাবাসের রাস্তা ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইয়াঙ্গুনের বাসিন্দারা। কূটনৈতিক এ মিশনগুলোও বিদেশী হস্তক্ষেপ চাওয়া বিক্ষোভকারীদের একত্রিত হওয়ার কেন্দ্র হয়ে উঠছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে তারিখের মধ্যে সংখ্যাগত মিলকে ‘শুভ’ বিবেচনা করা হয়; বিক্ষোভকারীরা এ কারণে সোমবারকে (২২/২/২০২১) বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন, তারা এদিনকে ১৯৮৮ সালের ৮ আগস্টের সঙ্গে তুলনা করছেন। সেদিনের বিক্ষোভকে সামরিক জান্তা কঠোর হস্তে দমন করেছিল, ঝরেছিল রক্ত। মিয়ানমার ২০১১ সালের আগেও প্রায় অর্ধশতক ধরে সেনা শাসনে ছিল। সে সময়ের তুলনায় এবার নিরাপত্তা বাহিনীকে তুলনামূলক নমনীয়ই মনে হচ্ছে। যদিও এর মধ্যে মান্দালয়ে তাদের গুলিতে ২ জন নিহত হয়েছেন। নেপিডোতে ৯ ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভে মাথায় গুলিবিদ্ধ এক তরুণী শুক্রবার মারা গেছেন। দেশটির সেনাবাহিনী বিক্ষোভে আহত পুলিশের এক সদস্যের মৃত্যুর কথাও জানিয়েছে। মান্দালয়ে শনিবারের বিক্ষোভে গুলি এবং ২ জন নিহতের ঘটনাও বিক্ষোভকারীদের আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি; পরদিন রবিবার একই শহরে লাখো মানুষ সমাবেশ করেছে, বড় বিক্ষোভ হয়েছে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় শহর ইয়াঙ্গুনেও। দেশটির রাষ্ট্র মালিকানাধীন গণমাধ্যম এমআরটিভি সোমবারের কর্মসূচী নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করেছে। ‘বিক্ষোভকারীরা এখন জনগণকে বিশেষ করে আবেগপ্রবণ কিশোর-যুবকদেরকে উস্কে দিয়ে সংঘাতের পথে নিয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রাণহানি হতে পারে,’ বলেছে তারা। টুইটে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে পুনর্বহালের দাবি করায় যারা মিয়ানমারের মানুষের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রাখবে।
আমরা মিয়ানমারের জনগণের পাশে আছি। মিয়ানমারের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির উর্ধতন সামরিক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ১০ দিনের মাথায় নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা জানালেন এ্যান্টনি ব্লিনকেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: