ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বৃদ্ধাশ্রমে গান গেয়ে জন্মদিন পালন করলেন ফকির আলমগীর

প্রকাশিত: ০০:১৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বৃদ্ধাশ্রমে গান গেয়ে জন্মদিন পালন করলেন ফকির আলমগীর

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসঙ্গীত শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীরের ৭১তম জন্মবার্ষিকী সোমবার ‘আনন্দ আয়োজনের’ মধ্য দিয়ে গাজীপুরের মনিপুর বিশিয়া কুড়িবাড়ি এলাকার বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্র (বৃদ্ধাশ্রম) চত্বরে পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে বৃদ্ধাশ্রম নিবাসীদের অংশ গ্রহণে কেক কেটে ও গান গেয়ে আনন্দ উল্লাস করা হয়। গুণী শিল্পীদের কাছে পেয়ে কেন্দ্রের বাসিন্দারা আনন্দে মেতে ওঠেন। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমানসহ দেশের বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী, অভিনেত্রী ও বৃদ্ধাশ্রমের নিবাসীরা অংশ নেন। সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গণসঙ্গীত শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীরের ৭১তম জন্ম দিনের কেক কাটা হয়। এ সময় ফুল দিয়ে আগতরা ফকির আলমগীরকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। বয়স্ক পুনর্বাসন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এবং গিভেন্সী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি লেখক ও গবেষক গোলাম কুদ্দুছ, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেত্রী সালমা বেগম সুজাতা (সুজাতা আজিম), একুশে পদকপ্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী মোঃ খুরশিদ আলম, পল্লীমা সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লা আল জাকী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ, খতিব আব্দুল জাহিদ মুকুলের স্ত্রী মাসুমা খাতুন নিপা প্রমুখ। অনুষ্ঠানে ফকির আলমগীরের স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর ও নাতি ফকির ফারদিন আলমগীরসহ ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। গণসঙ্গীত শিল্পী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আলমগীর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যাদের জীবন অবহেলিত, বিপন্ন। অবশ্য তাবৎ দুনিয়াই আজ কোভিড-১৯ এ বিপন্ন, বিষণœ। যারা একাকিত্ব বোধ করেন, নিরানন্দ বোধ করেন। আমি গতবারই জাতীয় জাদুঘরে যখন ৭০ তম জন্মদিনে করেছিলাম, তখন বলেছিলাম- আধুনিক, চাকচিক্য আলোকউজ্জল পরিবেশে আর আমার জন্মদিন পালন করব না। যত দিন বেঁচে থাকব কখনও বৃদ্ধাশ্রম, কখনও পথশিশু, কুলি, মজুর তাদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে প্রতিবছর জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করে পালন করব। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমাদের মতো শিল্পীদের জন্ম হতো না। বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ পেতাম না। তার জন্মশতবার্ষিকী চলছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার জন্ম দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম।’ এ সময় তিনি বাঁশের বাঁশি বাজিয়ে, কেক কেটে এবং বয়স্ক পুনর্বাসনের নিবাসীদের মাঝে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে তাদের দেশপ্রেম সমুন্নত রাখতে উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান এমপি বলেন, ফকির আলমগীর দেশকে ভালবেসে গান গেয়েছেন, এখনও গাইছেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার গাওয়া গান স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচার হতো। তার গাওয়া গণসঙ্গীত, রণসঙ্গীত দেশের মানুষকে, মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্বেলিত করত, সাহস ও শক্তি জোগাত। আমি তার শতায়ু কামনা করি। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে কণ্ঠ শিল্পী ফকির আলমগীর, খুরশীদ আলমসহ ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী ও বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের সদস্যরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন এবং কেন্দ্রের বাসিন্দাদের আনন্দ দেন। এর আগে ফকির আলমগীরসহ অতিথিরা বৃদ্ধাশ্রম ক্যাম্পাসে উচ্চ ফলনশীল আম গাছের চারা রোপণ করেন। এসময় বৃদ্ধাশ্রমের নিবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের খোঁজখবর নেন ফকির আলমগীর। শিল্পী ফকির আলমগীর পেশায় বিসিআইসি’র জনসংযোগ বিভাগের সাবেক মহাব্যবস্থাপক ছিলেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। স্ত্রী সুরাইয়া আলমগীর, তিন পুত্র সন্তান রানা, রাজীব ও রাহুল। ২০১৯ সালে তিনি পবিত্র হজব্রত পালন করেন।
×