ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

হল খুলে দেয়ার দাবিতে ভার্সিটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

হল খুলে দেয়ার দাবিতে ভার্সিটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা বলেছেন, কর্তৃপক্ষ খুলে না দিলে তারা তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশ করবেন। ঢাবি শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্থীরা সোমবার জোর করে হলে প্রবেশ করেন। আধা ঘণ্টা অবস্থান করে তারা হল ত্যাগ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এদিকে হল খুলে না দিলে রাবি শিক্ষার্থীরা তালা ভাঙ্গার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবির পাশাপাশি এবার হল খুলে দেয়ার দাবি করেছেন। খবর ঢাবি, জাবি, রাবি সংবাদদাতা এবং স্টাফ রিপোর্টার বরিশাল থেকে পাঠানো- ঢাবি একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী সভা ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলে দিতে কর্তৃপক্ষকে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেও পরবর্র্র্তীতে সেটি স্থগিত করেছে শিক্ষার্র্থীরা। এদিকে ঢাবি কর্র্তৃপক্ষ ১৩ মার্র্চ হল খুলে দেয়ার ঘোষণা দিলেও শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এ সিদ্ধান্তকে বাতিল বলে ঘোষণা করেছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে আজ মঙ্গলবার আবারও জরুরী সভা ডেকেছে ঢাবি একাডেমিক কাউন্সিল। গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজু ভাস্কর্র্যের পাদদেশে হল খোলার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে শতাধিক শিক্ষার্র্র্থী। বিক্ষোভ শেষে উপাচার্র্র্যের কার্যালয়ে আন্দোলনকারীদের পাঁচ প্রতিনিধি স্মারকলিপি প্রদান করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপাচার্র্যের কার্র্র্যালয়ে স্মারকলিপি দেয়ার পর ফিরে এসে তারা আল্টিমেটাম স্থগিত করেন। জানা গেছে, আজ মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। শিক্ষার্র্র্র্থীদের পক্ষে আব্দুর রহমান বলেন, ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম প্রত্যাহার করছি। কর্তৃপক্ষ কবে হল খুলবে সেটি আগামীকালের একাডেমিক কাউন্সিলে জানা যাবে। তাই আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের সভার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব। এরপর আমাদের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। খুলে দেয়ার দাবিতে দুটি হলে প্রবেশ শিক্ষার্থীদের ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল ও অমর একুশে হলের শিক্ষার্র্থীরা জোরপূর্বক হলে প্রবেশ করে হল খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। আধাঘণ্টা অবস্থান করে হল ত্যাগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলছেন, হলে ঢুকে প্রশাসনকে একটা বার্তা দেয়া যে, আমরা হলে ওঠার জন্য প্রস্তুত। হলে ঢুকে তারা করিডোরে বিভিন্ন স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের দাবি সংবলিত একটা লিফলেট অমর একুশে হলের ফটকে ঝুলে দেয়া হয়। তবে এ ঘটনাকে গুজব বলে দাবি করেছেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, হলের শিক্ষার্থীরা জিনিসপত্র নিতে রবিবার ও সোমবার আসে। গত তিনদিন বন্ধ থাকায় আজকে বেশি শিক্ষার্থী এসেছে। এই বিষয়টিকে স্বার্থান্বেষী মহল অপপ্রচার করছে। হল ছাড়ছেন না জাবি শিক্ষার্থীরা ॥ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে হলেই অবস্থান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রবিবার রাতে বিশ^বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত এক জরুরী বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়, সকাল ১০ টার মধ্যে নিজ উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সকালে সব হলের প্রভোস্ট হলে হলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে তাদেরকে হল ত্যাগ করতে বললে তারা অস্বীকৃতি জানায়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘গেরুয়া গ্রামে এখনও শিক্ষার্থীরা ভালভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। নিরাপত্তার স্বার্থে হলে থাকা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।’ এদিকে, বন্ধ থাকা দেশের সব বিশ^বিদ্যালয়ের আবাসিক হল খুলবে ১৭ মে এবং ২৪ মে থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী । শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যকে সাধুবাদ জানালেও জাবি ক্যাম্পাসের বিশেষ পরিস্থিতির কারণে হল ছাড়বে না বলে জানিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শারমীন আক্তার সাথী বলেন, জাহাঙ্গীরনগরের পরিস্থিতি অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের মতো নয়। এখানকার অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে যা মোটেই শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ নয়। এই ভিন্ন পরিস্থিতির কারণে আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটল আছি। সোমবার দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের দিকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসে শিক্ষার্থীরা বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশ করে। বিকেলে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মুজিবুর রহমান হলের ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের হল ছাড়ার আহ্বান জানালে ছাত্রীদের প্রতিনিধি দল জানান তারা হলে থাকবে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছাত্রীরা হলে অবস্থান করছে। হল না খুললে তালা ভাঙ্গার হুঁশিয়ারি রাবি শিক্ষার্থীদের ॥ আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবাসিক হল খুলে দেয়া না হলে ১ মার্চ তালা ভেঙ্গে হলে ঢোকার হুঁশিয়ারি দিয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার সময় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনের চত্বরে সমবেত হয়ে শিক্ষার্থীরা এই হুঁশিয়ারি দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সঙ্গে ইউজিসির বৈঠক আছে। বৈঠকে যদি হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া না হয় তাহলে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। এরপরও যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল না খুলে দেয় তাহলে আগামী ১ মার্চে তালা ভেঙ্গে হলে প্রবেশ করা হবে। সমাবেশে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে উপাচার্যদের বৈঠক আছে। সেখানে জোরালোভাবে শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। এখন পর্যন্ত সরকারের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে সোমবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী হল ও ক্যাম্পাস খোলার তারিখ ঘোষণা করেন। এই অবস্থায় আন্দোলনের কী হবে তা জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা জানান, পরে এই বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ববি শিক্ষার্থীদের হল খুলে দেয়ার দাবি ॥ স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল থেকে জানান, গভীর রাতে হামলার সঠিক তথ্য তুলে ধরে মামলা এবং মামলায় নামধারীদের অন্তর্ভুক্ত ও তাদের গ্রেফতারের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের দাবির সঙ্গে এবার হল খুলে দেয়ার দাবি করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অন্যতম নেতা অমিত হাসান রক্তিম ও মাহমুদুল হাসান তমাল বলেন, অপরাধীরা এখনও গ্রেফতার হয়নি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এখন আমাদের ভার্সিটির সামনে ছাড়া অন্য কোথাও নিরাপত্তা নেই। বারবার অনুরোধ করার পরও প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে হল খুলে দিচ্ছে না। তাই আমরা গ্রাউন্ডফ্লোরে রবিবার রাত যাপন করেছি। অপরদিকে গভীর রাতে বরিশাল বিশ্বদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচারের দাবিতে নানা কর্মসূচী পালন করছেন শিক্ষার্থীরা। তবে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রবিবার এবং বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে সোমবার সড়ক অবরোধ কর্মসূচী স্থগিত রাখা হয়েছে। ববির আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের গ্রেফতারসহ তিন দফা দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন। ববির প্রধান গেট এলাকা থেকে মিছিল শুরু হয়ে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদিক্ষণ করে। এরপর একাডেমিক ভবনের সামনে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন। তাদের (শিক্ষার্থীদের) দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে যেকোন সময় থেকে ফের সড়ক অবরোধ কর্মসূচী পালন করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে। বাস ধর্মঘট স্থগিত ॥ চরমোনাই দরবার শরীফের ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে সোমবার থেকে আগামী তিনদিন বাস ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধের সকল কর্মসূচী স্থগিত করেছে বরিশালের রূপাতলী বাস মালিক ও শ্রমিকরা। বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওছার হোসেন শিপন জানান, চরমোনাইয়ের মাহফিলে অসংখ্য লোক দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসেন। তাদের সুবিধার্থে তিন দিনের জন্য বাস মালিক ও শ্রমিকরা সকল কর্মসূচী স্থগিত করেছেন। তিনদিন পরে পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজনে নতুন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। ঝাড়ু মিছিল ॥ রূপাতলী বাস-মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক আজিজুর রহমান শাহিনের বিরুদ্ধে সাধারণ বাস চালক ও শ্রমিকরা সোমবার বেলা ১১টার দিকে ঝাড়ু মিছিল করেছে।
×