ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাত মাসে ৫৮৮ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একই সময়ে এক ডলারও বিক্রি করেনি

ডলারের বিপরীতে বেড়েছে টাকার মান ॥ রফতানিকারকরা সুফল পেলেন

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ডলারের বিপরীতে বেড়েছে টাকার মান ॥ রফতানিকারকরা সুফল পেলেন

রহিম শেখ ॥ গত বছরজুড়ে টাকার মান ধরে রাখতে বাজার থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাতে ডলারের বিপরীতে স্বাভাবিক অবস্থানে থাকে টাকার মান। টাকার এই অবস্থান অক্ষুণ্ন রাখতে চলতি অর্থবছরের সাত মাসে ৫৮৮ কোটি ডলার (৫.৮৮ বিলিয়ন) কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর বিপরীতে এক ডলারও বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। রফতানিকারক ও রেমিটারদের বিষয় বিবেচনা করে বাজার থেকে ডলার কেনার কথা বলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এদিকে ডলার কিনে নেয়ার কারণে টাকার মূল্য স্বাভাবিক থাকলেও একই সময়ে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মুদ্রার মান বেড়ে গেছে বহুগুণে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিসংখ্যান বলছে, মহামারীর সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে দশমিক ১২ শতাংশ, সেসময় চীনা ইউয়ানের মূল্য বেড়েছে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। এর ফলে করোনা মহামারীর সময়ে রফতানিকারকরা পণ্যের ক্রয়াদেশের অভাবে পড়লে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে উচ্চহারে বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এর সুফল পেয়েছে বাংলাদেশের রফতানিকারকরা। জানা যায়, ২০১৯ সালের আগে তিন বছর বাজারে চাহিদার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করেছে নিয়মিত। ওই সময়ে সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রি করছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তখন প্রায় সব ব্যাংকই ডলার কিনতে ধরনা দিচ্ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। তবে চলতি বছরের শুরু থেকে পরিস্থিতি উল্টো হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি অর্থাৎ প্রথম সাত মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার পরিমাণ দাঁড়াল ৫৮৮ কোটি ডলার, টাকার হিসাবে যা ৪৬ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। এ পরিমাণ ২০১৯-২০ অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাতগুণ বেশি। গত বছরের জুনে ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। তবে এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে ডলারের দর ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। আর চলতি ফেব্রুয়ারিতে ডলারের দর কিছুটা বেড়ে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সায় দাঁড়ায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে ৫৮৮ কোটি ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে এর বিপরীতে এক ডলারও বিক্রি করেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে কেনা হয় মাত্র ২৬ কোটি ২০ লাখ ডলার। বাকি ৫৬১ কোটি ৬০ ডলার কেনা হয়েছে অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে সাড়ে ৮৩ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে ৮৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার কিনেছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করলেও এক ডলারও কেনার প্রয়োজন পড়েনি। এর আগের অর্থবছর বিক্রি করেছিল ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার। তবে এর আগের কয়েক বছর পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজারে মাত্র ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিনেছিল ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর বাজার থেকে ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনলেও এক ডলারও বিক্রির প্রয়োজন পড়েনি। তার আগের অর্থবছর ৩৭৫ কোটি ৮০ লাখ এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছর ৫১৫ কোটি ডলার কিনতে হয়েছিল। সম্প্রতি ব্যাংকারদের এক বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, মহামারীর সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্র দশমিক ১২ শতাংশ, সেসময় চীনা ইউয়ানের মূল্য বেড়েছে সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপীর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের মুদ্রার মান কমে যাওয়ায় দেশটি দ্রুতগতিতে রফতানির বাজার দখল করে নিচ্ছিল, মহামারীর সময় জুন থেকে ডলারের বিপরীতে ভিয়েতনামিজ ডং-এর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৩৮ শতাংশ। একই সময়ে ডলারের বিপরীতে কম্বোডিয়ান রিয়েলের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৭৬ শতাংশ ও ইন্দোনেশিয়ান রুপীয়াহর মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে দশমিক ৮৫ শতাংশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, মহামারীর সময়ে রফতানিকারকরা অর্ডারের অভাবে পড়লে, প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে উচ্চহারে বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে এর সুফল পেয়েছে বাংলাদেশের স্থানীয় রফতানিকারকরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (গবেষণা) ড. মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, ডলারের বিপরীতে দেশীয় মুদ্রার মান বেড়ে গেলে রফতানির বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যায়, অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে মুদ্রার অবচয় (মান কমে গেলে) হলে, রফতানির বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বেড়ে যায়। তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ডলারের বিপরীতে টাকার মান খুব বেশি বৃদ্ধি পায়নি। ফলস্বরূপ, রফতানির বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বেড়েছে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাহ বেশি থাকলে, দেশীয় মুদ্রার মান কমে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেশি থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কিনে নেয়ার কারণে টাকার মূল্য কিছুটা বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, মুদ্রার অবচয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে থাকায় ডলারের বিপরীতে কম হারে টাকার মূল্যবৃদ্ধি রফতানিকারকদের জন্য সহায়ক হবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হারে মুদ্রার মূল্যবৃদ্ধির কী সুবিধা পাওয়া যাবে তা মুদ্রাস্ফীতির ওপরও নির্ভরশীল। অন্যান্য দেশের তুলনায় মুদ্রাস্ফীতি বেশি হলে বিনিময় মূল্যে প্রাপ্ত সুবিধাও কমে যায়। রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের আরইইআর কম আছে, অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে দেশে মুদ্রাস্ফীতির হার কম। গত বছরের অক্টোবরে রিয়েল ইফেক্টিভ এক্সচেঞ্জ রেট ১১৪’র বেশি ছিল, যা গত ডিসেম্বরে ১১০ এ নেমে এসেছে। আরইইআর বৃদ্ধি হলে রফতানির বাজার সংকুচিত আর আমদানি উৎসাহিত হয়। ফলে রফতানির প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমে যায়। ড. জাহিদ হোসেন জানান, বিশ্বব্যাপী ডলারের মান কমে গেলে দেশীয় বাজারেও তাই হবে। মহামারীর সময় আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মান কমে গিয়েছিল বলে জানান তিনি। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের কারণে ডলারের মান খুব একটা কমেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার না কিনলে ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যও আরও বেড়ে যেতো। যদিও ভারতে আমদানি কমে গিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ায় ডলারের বিপরীতে রুপীর মূল্য উচ্চহারে বেড়ে যায়। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বৈদেশিক বিনিময় বাজারে হস্তক্ষেপ করেনি। ফলে বাংলাদেশে ডলারের মান প্রায় স্থিতিশীল হলেও ভারতে ডলারের মান অস্থিতিশীল ছিল বলে জানান ড. জাহিদ হোসেন। জানা যায়, ২০১৯ সালে ভারত ও চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোতে ডলারের বিপরীতে দেশগুলোর মুদ্রার মান কমে গেলেও, টাকার মান বেড়ে যায় ১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপীর মান কমেছিল ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, চীনের মুদ্রার মান কমেছিল ১ দশমিক ৬১ শতাংশ। ওই বছর বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভিয়েতনামের মুদ্রার মান বেড়েছিল দশমিক শূন্য এক শতাংশ। গত বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে, ফিচ সলিউশনের পূর্বাভাস ছিল, ২০২০ ও ২০২১ সালে টাকার মূল্য কমে যেতে পারে, যার সুফল ভোগ করবেন রফতানিকারক ও রেমিটারসরা। ফিচের পূর্বাভাস অনুযায়ী, এবছরের শেষে গিয়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান গড়ে কমে ৮৬ টাকায় দাঁড়াবে, পরের বছর যা হবে ৮৮ টাকা। ২০১৯ সালে ডলারপ্রতি টাকার গড় মান ছিল ৮৪.৯২ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) এক হাজার ১০৪ কোটি ১৯ লাখ (১১.০৪ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২১ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরের (জুলাই-জানুয়ারি) সাত মাস শেষে রফতানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ২৬৭ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ০৯ শতাংশ কম। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ কম। এদিকে অর্থবছরের ছয় মাসে অর্থ ছাড়ের এই পরিমাণ দেশের ইতিহাসে যে কোন সময়ের তুলনায় বেশি। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মোট ২৯৯ কোটি ২৮ লাখ ডলারের ঋণ ও অনুদান মিলে বৈদেশিক সহায়তা ছাড় করেছে। এই অঙ্ক গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ কোটি ৫২ লাখ ডলার বেশি। এ সময়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবিসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছ থেকে এই ঋণ সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আবার বেসরকারী খাতে নেয়া স্বল্পমেয়াদী বিদেশী ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানোর কারণে অনেকে এখন ঋণ পরিশোধ করছেন না। সবমিলিয়ে অধিকাংশ ব্যাংকের হাতে এখন ডলার উদ্বৃত্ত রয়েছে। ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার উদ্বৃত্ত থাকলে তা কিনে নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেননা প্রতিটি ব্যাংকের ডলার ধারণের একটি সীমা রয়েছে। কোন ব্যাংকের আমদানির দায় পরিশোধের তুলনায় রেমিটেন্স ও রফতানি আয় বেশি হলে ওই ব্যাংকে ডলার উদ্বৃত্ত হয়। এক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত থাকা ব্যাংক প্রথমে সঙ্কটে থাকা ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রির চেষ্টা করে। কোন ব্যাংকের আগ্রহ না থাকলে অর্থাৎ মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে না পারলে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক তা কিনে নেয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ে। ডলার বিক্রি করলে রিজার্ভ কমে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে রেমিটেন্স। এরসঙ্গে যোগ হয় ডলার কেনা। গত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বেশিরভাগ সময় রিজার্ভ ৩১ থেকে ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠানামা করছিল। মহামারীর প্রভাব শুরুর পর গত বছরের মার্চ শেষে রিজার্ভ ছিল ৩২ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার। এক বছরের ব্যবধানে রিজার্ভ বেড়েছে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। সোমবার দিনশেষে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪৩ বিলিয়ন ডলার।
×