ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বহুল আলোচিত পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

বহুল আলোচিত পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অবশেষে কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের এমপি পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে কুয়েতের আদালতের রায়ে তার এমপি পদ বাতিল হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সোমবার পাপুলের জাতীয় সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সাংবিধানিকভাবে পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সংবিধান ও কার্যপ্রণালি বিধি অনুযায়ীই পাপুলের এমপি পদ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পাপুলের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানবপাচার, ঘুষ দেয়া এবং অর্থপাচার। ঘুষ দেয়ার মামলার রায় হয়েছে এবং অন্য দুটি বাকি আছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন সংসদ সদস্যের বিদেশে আটক ও ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ার পর এমপি পদ হারানোর ঘটনা এটিই প্রথম। মানব ও অর্থ পাচারের দায়ে গত ৬ জুন কুয়েতে আটক হওয়ার পর দীর্ঘ ৯ মাস পর তার এমপি পদ বাতিলের মতো সাহসী পদক্ষেপ নেয়া হলো। গত ২৮ জানুয়ারি কুয়েতের আদালত তাকে শাস্তি দেয়ার পর ২৫ দিনের মাথায় তার সংসদ সদস্য পদ বাতিলের মতো সাহসী পদক্ষেপটি নিয়েছে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের এমপি পদ বাতিলের আগে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আলোচনা করেন সংসদ সচিবালয়ে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। কুয়েত থেকে পাঠানো দণ্ডিত পাপুলের মামলার রায়ের কপি পর্যালোচনা করা হয়। আরবী ও ইংরেজীতে লেখা ৬১ পৃষ্ঠার রায়ের কপি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের স্পীকারের দফতরে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সংবিধান, কার্যপ্রণালি বিধি ও আইন অনুযায়ী এখন তার আর সংসদ সদস্য পদ নেই। অর্থ ও মানব পাচারের মামলায় গত ২৮ জানুয়ারি পাপুলকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের আদালত। পাশাপাশি তাকে ১৯ লাখ কুয়েতি রিয়াল বা ৫৩ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়। গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের বাসা থেকে আটক করা হয় পাপুলকে। আটকের সাড়ে সাত মাস আর বিচার প্রক্রিয়া শুরুর সাড়ে তিন মাসের মাথায় দণ্ডিত হন পাপুল। সংসদ সচিব জাফর আহমেদ খান বলেছেন, রায় ঘোষণার দিন থেকে তার আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সোমবার গেজেট জারি করা হয়েছে। কুয়েতের আদালতে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুরের এমপি কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করেছে সংসদ সচিবালয়। গেজেটে বলা হয়, কুয়েতের ফৌজদারি আদালতে ঘোষিত রায়ে নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে চার বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম বাংলাদেশের সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য নন। অর্থ ও মানবপাচার এবং ঘুষ দেয়ার অভিযোগে গত বছর জুনে কুয়েতে গ্রেফতার হন পাপুল। ব্যবসার সূত্রে সেখানে তার বসবাসের অনুমতি ছিল। ওই মামলার বিচার শেষে গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। সেদিন থেকেই তার সাংসদ পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘কোন আইনপ্রণেতা নৈতিক স্খলনজনিত কোন ফৌজদারি অপরাধে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে সংসদ সদস্য থাকার যোগ্য হবেন না এবং মুক্তি পাওয়ার পর পাঁচ বছর পর্যন্ত তিনি আর সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন না। ওই অনুচ্ছেদেই বলা আছে, কোন বিদেশী রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা কোন বিদেশী রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলেও কেউ আর এমপি হিসেবে থাকতে পারবেন না। নির্বাচন কমিশন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার সোমবার বলেছেন, আসন শূন্য ঘোষণা সংক্রান্ত গেজেটর কপি আমরা হাতে পেয়েছি। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করা হবে। আর সাংবিধানিকভাবে পাপুলের আসন শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সেখানে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি। নির্বাচন কমিশনার মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেছেন, সংসদ সচিবালয়ের চিঠি কমিশন সভায় উপস্থাপনের পর সার্বিক বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। নির্বাচন করতে ৪০-৪৫ দিন সময় হাতে লাগবে আমাদের। ২ মার্চ হালনাগাদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। এরপরই তফসিল ঘোষণা করা হবে। কুয়েতে গ্রেফতার হওয়া লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলকে ঘুষ দেয়ার অভিযোগে চার বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ কুয়েতি দিনার (২৮ কোটি টাকা) জরিমানা করা হয়েছে। পাপুলের বিরুদ্ধে মোট তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মানবপাচার, ঘুষ দেয়া এবং অর্থপাচার। ঘুষ দেয়ার মামলার রায় হয়েছে এবং অন্য দুটি বাকি আছে। গত ৭ জুন মানবপাচার, ভিসা জালিয়াতি ও অর্থপাচারের অভিযোগে সংসদ সদস্য পাপুলকে গ্রেফতার করে কুয়েতের পুলিশ। দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর উঠে আসে কীভাবে বাংলাদেশের এই সংসদ সদস্য মানুষকে প্রতারিত করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং ঘুষ, উপহারের বিনিময়ে অন্যান্য সুযোগ পাওয়ার জন্য এই কাজে তাকে কুয়েতের প্রভাবশালী সরকারী কর্মকর্তারা সহায়তা করেছেন। পাপুলের কোম্পানিতে ২০ হাজার বাংলাদেশী কাজ করেন। তদন্তে বের হয়ে এসেছে, পাপুল প্রতি বছর বিভিন্ন ঘুষ, উপহার ও অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকা নেট লাভ করতেন। এছাড়া পাপুলের এবং তার কোম্পানির প্রায় ৫০ লাখ কুয়েতি দিনার (প্রায় ১৪০ কোটি টাকা) (ব্যাংকে জমাকৃত) ফ্রিজ করার জন্য ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করেছেন পাবলিক প্রসিকিউটর। সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, কুয়েতে এমপি পাপুলের বিরুদ্ধে মামলা ও তার গ্রেফতারের পর থেকেই সংসদ সচিবালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নজরে রেখেছে। যেহেতু কুয়েতের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক রয়েছে এবং সেখানে অনেক বেশি বাংলাদেশী প্রবাসী কাজ করছেন, তাই আগ বাড়িয়ে কোন কিছু করা থেকে বিরত থেকেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ অপেক্ষা করছিল কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার। গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রায়ের কপি সংসদ সচিবালয়ে এসে পৌঁছেছে। রায়ের কপি পৌঁছার পর দ্রুত সময়ের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। পাপুলের বিরুদ্ধে কুয়েতের আদালতে যে রায় হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোর তথ্যপ্রমাণও তারা (কুয়েত কোর্ট) পেয়েছে। সেই অনুযায়ী তার এমপি পদ থাকার কোন সুযোগ নেই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন গত শুক্রবার রাজধানীর পূর্বাচল ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রায়ের কপি পেয়ে ইতোমধ্যে সেটি জাতীয় সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, ৬১ পৃষ্ঠার রায়টি আরবী ও ইংরেজী ভাষায় লেখা। আইন অনুযায়ী, রায়ের কপি স্পীকার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠিয়েছি। বাকি এ্যাকশন (ব্যবস্থা) তারা নেবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মতো কুয়েতেও ভারডিক্ট (রায়) আসতে অনেক দেরি হয়, লিখতে অনেক সময় লাগে। আমরা এটা নিয়ে পেরেশানিতে ছিলাম। আপনাদের মিডিয়া প্রায়ই গিয়ে এটা নিয়ে জানতে চান, স্পীকারও প্রায়ই এটা নিয়ে ফোন করেন। রায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা যথাস্থানে পাঠিয়ে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, তিনি শুধু অপরাধই করেননি, একজন এমপি হিসেবে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন করেছেন। সংসদের কাছে রেকর্ড পৌঁছালে ৬৬ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এই এমপির আসন শূন্য ঘোষণা করা হয়। তিনি কোন আইনী সহায়তা চান নাই। ওখানে পাপুলর ব্যবসায়ী হিসেবে থাকেন এবং আমাদের কোন ডিপ্লোম্যাটিক পাসপোর্ট নিয়ে সেখানে তিনি যাননি। তিনি আমাদের মিশনের কোন সাহায্য চাননি। কারণ সেখানে ওনার নিজেরই ভাল অবস্থান রয়েছে। ওনার ভিআইপি পাসপোর্ট আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি পাপুলকে গত বছরের ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার মালিকানাধীন মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানি পরিচ্ছন্নতাকর্মী নেয়ার কাজ করলেও এ কাজে সীমাবদ্ধ থাকেনি প্রতিষ্ঠানটি। পাপুল কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই মানব পাচার শুরু করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি দেশটিতে বসবাসের অনুমতিও নিয়ে নেন বলে জানা গেছে। গত ২৮ জানুয়ারি এমপি পাপুলকে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় কুয়েতের একটি আদালত। কুয়েতের ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এ রায় ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে তাকে ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। দেশটির সংবাদমাধ্যম আল-কাবাস ও আল-রাইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাপুলের কাজে সহযোগিতা করায় কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাজেন আল জাররাহসহ দেশটির দুই কর্মকর্তাকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রসঙ্গত : ২০১৮ সালে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে এমপি নির্বাচিত হন পাপুল। তার স্ত্রী সেলিনা ইসলামও সংরক্ষিত আসনের এমপি। কুয়েতে গ্রেফতার হওয়ার পর দেশেও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের পৃথক দুই মামলায় সাংসদ শহিদসহ ৬ জনের ৬৭০টি ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার আদালত। মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে শহিদসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর মামলা করে সিআইডি। আসামিদের মধ্যে তাঁর মেয়ে, ভাই ও শ্যালিকাও রয়েছেন। এর আগে ১১ নবেম্বর মানব পাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে শহিদ ও তাঁর স্ত্রী সেলিনার বিরুদ্ধে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হাইকোর্টে রিট : মানবপাচারের দায়ে কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদীয় পদ বাতিলের বিষয়ে জারি করা রুলের শুনানির জন্য আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট। গত ৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ শুনানির জন্য এ দিন ধার্য করেন। আদালতে এদিন রিটটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করেন রিটকারী আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান। এর আগে গত বছরের ২০ আগস্ট লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি মোহাম্মদ শহিদ ইসলাম পাপুলকে সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করে তার সংসদীয় আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারি করেন। ওইদিন আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান ও মোঃ সালাহ উদ্দিন। পাপুলের সংসদ সদস্য পদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিটটি করেছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া। ওই রিটে জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক ও সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে বিবাদী করা হয়। আইনজীবী জানান, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নির্বাচনী হলফনামায় তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় ‘স্নাতকোত্তর’ উল্লেখ করে জমা দিয়েছেন স্নাতক সনদ। এ মিথ্যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২(সি) এর লঙ্ঘন। তাই আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া রিট করেছেন। আদালত শুনানি নিয়ে ১৮ আগস্ট রুল জারি করেছিলেন। চার সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন কমিশন, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক, শহিদ ইসলাম এমপিসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। রিট আবেদনে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পাপুল প্রতারণা, জালিয়াতি করে শুধু অবৈধ সম্পদই অর্জন করেননি। তিনি জালিয়াতি করে ভুয়া শিক্ষাগত সনদও জোগাড় করেছেন। তিনি সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন এ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্স বিষয়ে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৭। সওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, পাপুল যে বিষয়ের ওপর স্নাতক সনদ জোগাড় করেছেন কলেজটিতে ওই বিষয়ের ওপর কোন ডিপার্টমেন্ট নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাপুল ২০১৬ সালে কুয়েত থেকে নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুরে ফিরে ‘লক্ষ্মীপুর ২৪ ডটকম’ নামে একটি অনলাইন পোর্টালে সাক্ষাতকার দিয়েছেন। এটি প্রকাশ করা হয় একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। সেখানে পাপুল দাবি করেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ১৯৯২ সালে। সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজের নামে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও এর আগে ১৯৮৭ সালে স্নাতক পাসের তথ্যের এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসাব তাকে বিতর্কিত করেছে। নিউইয়র্ক সিটি কলেজে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন বলেও সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেন তিনি। গত বছরের ৬ জুন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেফতার করেন। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ এনেছে। অর্থপাচার ও মানবপাচারের মতো অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে গত ২৮ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি পাপুলকে চার বছরের কারাদণ্ড ও কারাদণ্ডের পাশাপাশি পাপুলকে ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার (প্রায় ৫৩ কোটি ২১ লাখ টাকা) জরিমানাও করেছে কুয়েতের আদালত। কুয়েতের আদালতে ফৌজদারি আদালতের বিচারক আবদুল্লাহ আল ওসমান এমপি পাপুলকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেয়ার পর সংবিধান, কার্যপ্রণালি বিধি ও আইন অনুযায়ী তার এমপি পদ বাতিল ও আসনটি শূন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
×