ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

গড়ে উঠছে ভবন ॥ বিক্রি করা হচ্ছে কোয়ার্টার

রেলের জমিতে দখল বাণিজ্য

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

রেলের জমিতে দখল বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ রেলের জমিতে রেলের কোয়ার্টার। নিয়মানুযায়ী থাকবেই। কিন্তু এটি অবৈধ দখলে রেখে একের পর পর সৈয়দপুরে রেলের কোয়ার্টারগুলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। বিক্রির মাধ্যমে এতে অবৈধ দখলদার পরিবর্তন ঘটছে। যাকে এলাকাবাসী নাম দিয়েছে ‘অবৈধ দখলদারদের হাত বদল’। সোমবার এক অভিযোগে জানা যায়, রেলের শহর সৈয়দপুর শহরের মহিলা কলেজ সংলগ্ন মুন্সিপাড়া মহল্লায় ৩৯০ নম্বর রেলওয়ের সরকারী কোয়ার্টারটি ৭ লাখ টাকায় ক্রয় করেছেন এমদাদুল নামে এক ব্যবসায়ী। এটি বিক্রি করেন রাশেদ নামের এক অবৈধ দখলদার। অপরদিকে আতিয়ার কলোনি এলাকায় রেলওয়ের ২২৩ নম্বর কোয়ার্টারটিও বিক্রি হয়। সম্প্রতি রায়হান নামের এক অবৈধ দখলদার ৩ লাখ টাকায় এটি বিক্রি করেন। এটি ক্রয় করেন মানিক নামের এক ব্যক্তি। এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানায়, সৈয়দপুর রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়ের দুলাল নামের এক কর্মচারীর মাধ্যমে সৈয়দপুর শহরের রেলের জমি দখল করে বহুতল ভবন নির্মাণ ও রেলে কোয়ার্টার বিক্রি হয়ে থাকে। যার টাকার ভাগ অনেকেই পেয়ে থাকেন। ফলে কোন রেল কর্মকর্তারা এদিকে ফিরেও তাকান না। এদিকে ৩৯০ নম্বর রেলওয়ের সরকারী কোয়ার্টারটি বিক্রিকারী রাশেদকে খুঁজে পাওয়া না গেলেও ক্রেতা এমদাদুলকে সাংবাদিকরা খুঁজে পায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এমদাদুল জানান, আমার দোকানের মালামাল রাখার জায়গা ছিল না তাই এটি আমি গুদাম হিসাবে ব্যবহারের জন্য কিনেছি। তবে সরকারী রেলওয়ে কোয়ার্টার এভাবে নেয়া আমার অন্যায় হয়েছে এমন কথাও তিনি স্বীকার করেন। অপরদিকে আতিয়ার কলোনির ২২৩ নম্বর রেলের কোয়ার্টার বিক্রয়কারী ও ক্রেতাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সৈয়দপুরের সচেতন মহল বলছেন, সৈয়দপুর রেলওয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের যোগসূত্রে ঘুষ বাণিজ্যের কারণে রেলওয়ে জমি ও কোয়ার্টার অবৈধভাবে দখল ও কেনাবেচায় হাত বদল হচ্ছে। ফলে প্রায় প্রকাশ্যেই চলছে রেলের জমি ও কোয়ার্টার দখলসহ বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ। সৈয়দপুর শহরের হাওয়ালদারপাড়া চাল মার্কেট সংলগ্ন মুন্না নামের এক ব্যক্তি প্রকাশ্যেই দুই কোটি টাকা মূল্যের রেলের জমিতে অবৈধভাবে বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ অব্যাহত রেখেছেন। স্থানীয় এলাকাবাসী, এ ব্যাপারে উপসহকারী প্রকৌশলী কার্যালয়সহ সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ে এনিয়ে অভিযোগ দিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি। এছাড়া শহরের পাইলট বাংলা হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন, সাহেবপাড়া মিস্ত্রিপাড়াসহ অফিসার্স কলোনীর বিভিন্ন স্থানে ভবন নির্মাণ কাজ অব্যহত রয়েছে। রেলওয়ে কারখানার জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে কর্মরত দুজন কর্মচারীর মাধ্যমে কোটি টাকা মূল্যের জমির ওপর অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ কাজ করছেন আরও কয়েকজন। নাম প্রকাশ না করার সত্ত্বে অবৈধ দখলদাররা স্পস্টভাবে বলছেন ওনারা (রেলওয়ে কর্মকর্তা) সুযোগ দেন বলে আমরাও সুযোগ নিচ্ছি। অর্থাৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কর্মকর্তাদের হাত করেই সব কিছু করা হয়। তারা তাদের অংশের টাকা বুঝে নেন। জানা যায়, সৈয়দপুর শহরে রেলওয়ের মোট জমি ৮০০ একর। এর মধ্যে রেল ব্যবহার করছে ৩৭৩ একর। এর মধ্যে কৃষি জমি ও জলাশয় হিসাবে সৈয়দপুর পৌরসভার কাছে লিজ রয়েছে ২৫.৭৫ একর। বাকি জমির মধ্যে অনেকে লিজ শর্ত ভঙ্গ করে অবৈধভাবে দখলদার বনে গেছে। নিয়মানুযায়ী লিজগ্রহীতা একতলার বেশি পাকা ভবন নির্মাণ করতে পারবেন না। কিন্তু সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বহুতল ভবন। এ ব্যাপারে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নুরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন যারা রেলের জমি লিজ নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেছেন তাদের আমরা সংশোধনের সুযোগ দিব। নতুবা উচ্ছেদ করে দিব।
×