ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মঙ্গলে অভিযাত্রা

প্রকাশিত: ২০:৫৫, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মঙ্গলে অভিযাত্রা

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার মহাকাশযান পারজিভারেন্স বা অধ্যবসায় পৃথিবী থেকে রওনা দেয়ার সাত মাস পর গত বৃহস্পতিবার গ্রিনিচ মান সময় রাত ৮টা ৫৫ মিনিট (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টা ৫৫ মিনিট) সফলভাবে অবতরণ করে রক্তিম গ্রহ মঙ্গলের বুকে। এটি নিয়ে নাসার ৫টি রোভারযান অবতরণ করল মঙ্গলের বুকে। সেখানে নাসা প্রথম রোভার পাঠায় ১৯৯৭ সালে। পারজিভারেন্স রোভারটির ওজন এক টন। এতে সাত ফুট লম্বা রোবটিক হাত, ১৯টি ক্যামেরা, দুটি মাইক্রোফোন, একটি কাটার যন্ত্র সর্বোপরি একটি ড্রোন হেলিকপ্টার রয়েছে, যেটি ডানা মেলবে মঙ্গলের আকাশে প্রথমবারের মতো। নাসার এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য মঙ্গলপৃষ্ঠের মাটি ও শিলার নমুনা সংগ্রহ, অণুজীবের অস্তিত্ব নির্ণয়, প্রাণের অনুসন্ধান এবং সেখানে থাকা কার্বন ডাই অক্সাইডকে অক্সিজেনে পরিণত করা যায় কিনা- সেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তথ্য-উপাত্ত ও ছবি পৃথিবীতে প্রেরণ করা। পারজিভারেন্স মঙ্গলের বিষুবরেখার কাছে বিশাল একটি গহ্বরে নেমেছে, যার নাম দেয়া হয়েছে জেজেরো ক্রেটার। রোভারটি ইতোমধ্যে পৃথিবীতে প্রথমে সাদাকালো এবং পরে রঙিন ছবি পাঠাতে শুরু করেছে। অবশেষে মানুষের স্বপ্ন বুঝি পূরণ হতে চলেছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হাহাকার করে লিখেছিলেন, ‘হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনখানে? ...’ সেই আপ্তবাক্য যে এমন আমোঘ ও ফলদায়ী হয়ে উঠবে অচিরেই, তা বোধকরি কবিও কল্পনা করতে পারেননি। পৃথিবী যে ক্রমশ উত্তপ্ত ও বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে উঠবে, তা সুস্থ মন ও মস্তিষ্কে কে ভাবতে চায়? তবে বাস্তবে সেটাই ঘটতে চলেছে যেন। উত্তর মেরু, দক্ষিণ মেরুতে ওজোন স্তরের ক্রমাগত ক্ষয়ের কারণে ভূমণ্ডল ইতোমধ্যেই উত্তপ্ত ও মরুভূমি সদৃশ হয়ে উঠেছে। যার অনিবার্য পরিণতি আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা ও মরুপ্রবণতা, তীব্র তুষারপাত, ঝড়-ঝঞ্ঝা-শিলাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, বন্যা সর্বোপরি হিমবাহের গলন। এর পাশাপাশি প্রায় নিয়মিত যুদ্ধবিগ্রহ, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য, অশান্তি-বিরোধ, হানাহানি ইত্যাদি তো আছেই। তদুপরি তীব্র সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ। যে কারণে বিজ্ঞানীদের ভাবনা, অদূর ভবিষ্যতে মানুষকে মানবসভ্যতা ও কৃষ্টিকে নিরাপদ এবং বসবাসের উপযোগী রাখার জন্য ভিন্ন কোন গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করতে হবে। আর বর্তমান পৃথিবীর উপযোগী আবহাওয়া ও ভূ-আনুকূল্য বিবেচনায় সৌরজগতের সবচেয়ে কাক্সিক্ষত গ্রহটি হলো লাল রং সদৃশ গ্রহ মঙ্গল। আর সে কারণেই বহু বাছবিচার, বহু গবেষণা ও অনুসন্ধিৎসা শেষে মানুষের মঙ্গল অভিযান। অবশ্য কাজটি মোটেও সুগম ও সহজসাধ্য ছিল না। প্রথমত মঙ্গলের দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৪৮ দশমিক ৬ কোটি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে মঙ্গলের বুকে পা রাখা মোটেও চাট্টিখানি কথা নয়। সেই প্রেক্ষাপটে মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে একটি মাইলফলকও বটে। চাঁদের বুকে প্রথম পা রেখে নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং বলেছিলেন, মানবসভ্যতা ও বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে এটি একটি মাইলফলক নিঃসন্দেহে। সেক্ষেত্রে মঙ্গলের মাটিতে পা রাখাকে কি অভিধায় অভিহিত করা সমীচীন হবে? মনে হয়, কোন অভিধাই এর জন্য যথেষ্ট ও উপযুক্ত নয়। কেননা, বিজ্ঞান ও মানুষের সম্ভাবনা অসীম ও অন্তহীন। তাকে কোন পরিসীমায় বেঁধে ফেলা যায় না। পৃথিবী লয়প্রাপ্ত হলে মানুষ সভ্যতা স্থানান্তরে উদগ্রীব হবে, সেটাই স্বাভাবিক ও সঙ্গত। সে ক্ষেত্রে মঙ্গল হতে পারে মানুষের প্রথম পছন্দের স্থান।
×