ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আশাজাগানিয়া ভাষা এ্যাপস

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আশাজাগানিয়া ভাষা এ্যাপস

দেশের বিচারিক আদালতের (নিম্ন আদালত) বিচার কাজে বাংলার ব্যবহার বাড়লেও উচ্চ আদালতে উপেক্ষিত। উচ্চ আদালতে বেশিরভাগ রায় বা আদেশ এখনও ইংরেজীতে দেয়া হয়। উচ্চ আদালতে একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটেছে বিচারপতি শেখ মোঃ জাকির হোসেনের বেলায়। তিনি গত ১০ বছরে প্রায় ১৫ হাজার রায় ও আদেশ দিয়েছেন বাংলায়। অন্যদিকে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় প্রায় ৪০ হাজার রায়, আদেশ ও অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ বাংলায় দিয়েছেন। জামিনের আদেশগুলোও নিয়মিতভাবে দেয়া হচ্ছে বাংলায়। সুপ্রীমকোর্টের ৯৯ বিচারপতির মধ্যে হাতেগোনা কয়েকজন বিচারপতিই দিয়ে থাকেন বাংলায় রায়। শুধু কি উচ্চ আদালতেই বাংলা ভাষার প্রতি উপেক্ষা পরিলক্ষিত হয়? এটা পরিলক্ষিত হয় সমাজের প্রতিটি স্তরেই। বাংলা ভাষা প্রচলন আইন না মানলে অসদাচরণের অভিযোগে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা। কিন্তু এত বছরে কারও বিরুদ্ধে এমন কোন ব্যবস্থা নেয়ার নজির নেই। এই আইন ছাড়াও বিভিন্ন কালপর্যায়ে সরকারের আদেশ-নির্দেশের মাধ্যমে সর্বস্তরে বাংলা ব্যবহারের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি। ভাষাসৈনিকেরাই বলছেন, বাংলার ব্যবহার দিন দিন কমছে। আর বাড়ছে ভুল বাংলার প্রয়োগ। বিভিন্ন সরকারের এক ডজনেরও বেশি আদেশ, পরিপত্র বা বিধি থাকলেও সব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়নি। বিভিন্ন নামফলক, উচ্চ আদালতের রায়, উচ্চশিক্ষাসহ সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনও হচ্ছে ইংরেজীতে। বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের উদাসীনতা বাড়ছে। এর মূল কারণ সদিচ্ছার অভাব। এ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন উচ্চ আদালতে বাংলার প্রচলনের সমস্যা চিহ্নিত করতে গিয়ে গণমাধ্যমকে বলেন- ‘বাংলায় রায় বা আদেশ দেয়ার ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত কিছু প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে। অনেক আইন রয়েছে ইংরেজীতে। উচ্চ আদালতে রায় বা আদেশে যেসব রেফারেন্স ব্যবহার করা হয় তার সবই ইংরেজী ভাষায়। দীর্ঘদিন ইংরেজীর চর্চার কারণে আইনজীবী বা বিচারপতিরা সহজেই ওইসব রেফারেন্সের মর্মার্থ বুঝতে পারেন। ওইসব রেফারেন্স বাংলায় অনুবাদ করা হলে তার যথাযথ মর্মার্থ নাও হতে পারে। ফলে এই অসুবিধাটা তো রয়ে গেছে। আর দীর্ঘদিনের চর্চার কারণে আদালতের বেঞ্চ অফিসারসহ সংশ্লিষ্টরা দ্রুত ইংরেজীতে টাইপ করতে পারছেন। বাংলায় অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে তাদের জন্য বাংলায় আদেশ বা রায় লেখা কিছুটা কঠিন।’ তার বক্তব্যে সত্যতা রয়েছে, এটি মানতেই হবে। আশাজাগানিয়া খবর হলো, উচ্চ আদালতের ইংরেজীতে লেখা রায় বা আদেশ বাংলায় অনুবাদের জন্য এবারের একুশের আগেই ‘আমার ভাষা’ নামে একটি এ্যাপস যাত্রা শুরু করেছে। উচ্চ আদালতসহ সব পর্যায়ে মাতৃভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে বাঙালী জাতি নিজস্ব স্বকীয়তা প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হবে, মুজিববর্ষে এটাই আমাদের সংকল্প হওয়া সমীচীন।
×