ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যানবেরায় বহুভাষা-ভাষীদের সম্মিলনে একুশ উদযাপন

প্রকাশিত: ১৭:৩৪, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ক্যানবেরায় বহুভাষা-ভাষীদের সম্মিলনে একুশ উদযাপন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বাংলাদেশ হাইকমিশন, ক্যানবেরার উদ্যোগে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ক্যানবেরাস্থ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রদূত-কূটনৈতিকসহ অষ্ট্রেলিয়া ও প্রবাসীবাংলাদেশিদের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণে রবিবার অষ্ট্রেলিয়ার রাজধানীতে যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশের মধ্য দিয়ে পালন করা হয়। গত দু’বছরের মত এবারও ক্যানবেরাস্থ তেলোপিয়া পার্কে মানুকা সার্কিট ও নিউসাউথ ওয়েলস স্ট্রীট এর ক্রস রোডে স্থাপিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। প্রত্যুষ ৬.২০ মিনিটে শুরু হয়ে মানুকা ওভাল ঘুরে প্রভাত ফেরী অস্থায়ীভাবে স্থাপিতশহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শেষ হয়। এতে অংশগ্রহণ করেন এসিটি গভর্ণমেন্টের পরিবেশ ও হেরিটেজ মিনিস্টার রেবেকা ভেসারটি, রাজনীতিবিদ মি. এলিষ্টার কো, ভারত ও রাশিয়াসহ দশ জন দূতাবাস প্রধান, অষ্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধি, সার্ক রাষ্ট্র সমূহের বিভিন্ন ভাষা-ভাষীদের প্রতিনিধি, অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত প্রবাসী ও অভিবাসীগণ এবং বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ। অংশগ্রহনকারীরা অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকলে ভাষা শহীদদের স্মরণে ০১ মিনিট দাড়িয়ে নীরবতা পালন করেন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের হাইকমিশনার, ভারতের হাইকমিশনার, এসিটি গভর্ণমেন্টের পরিবেশ ও হেরিটেজ মিনিস্টার এবং অন্যরা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য প্রদান করেন। হাইকমিশনার সুফিউর রহমান তাঁর বক্তব্যে সকল ভাষা শহীদ ও ভাষা সংগ্রামীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন। তিনি ঝুঁকির মুখে থাকা মাতৃভাষা সংরক্ষণে দেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের আন্দোলনের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। বহু সংস্কৃতির ধারক অষ্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ একযোগে কাজ করবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বক্তাগণ মহান শহীদ দিবস ও আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস এর তাৎপর্য্য তুলে ধরেন। ভারতের রাষ্ট্রদূতসহ বক্তরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জনে এবং ভাষার সম্মান রক্ষায় বাংলাদেশের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। তারা বর্তমান বিশ্বের অস্থিরতা মোকাবেলার জন্য বহু সংস্কৃতিবাদ ও ভাষার অন্তর্ভুক্তির উপর জোর দেন। ক্যানবেরাস্থ প্রসিদ্ধ তেলোপিয়া পার্ক স্কুলসহ অন্যান্য স্কুলের ছাত্র/ছাত্রীদের একুশের ব্যাপারে সম্যক অবহিত করা এবং নৃ-তাত্তিক ভাষাসহ সকল মাতৃভাষার সম্মান তাদের মানসে বিস্তারের লক্ষ্যে গত বছরের ন্যায় এবারও এই অস্থায়ী শহীদ মিনার চার দিনব্যাপী খোলা রাখা হয়েছে। ২১শে ফেব্রুয়ারির মত পরবর্তী তিন দিনেও তেলোপিয়া পার্ক স্কুলের শিক্ষার্থীসহ কয়েকশত ছাত্র/ছাত্রী ও সকল স্তরের মানুষ শহীদ মিনার পরিদর্শন করবেন এবং ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এরপর সকাল ৮.০০ টায় হাইকমিশন প্রাঙ্গণে হাইকমিশনার সুফিউর রহমান জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন এবং দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ করা হয়। নিজ নিজ ধর্ম মত ও প্রথা মোতাবেক ভাষাশ হীদদের উদ্দেশ্যে মৌন প্রার্থনা এবং তাঁদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসটির প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠান শেষ হয়। সন্ধ্যায় ক্যানবেরাস্থ সিআইসিতে‘মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’এরতাৎপর্য্য বিষয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যাতে হাইকমিশনারসহ অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা শেষে ভাষাশহীদদের স্মরণে ও বাংলাদেশকে উপজীব্য করে স্থানীয় বাংলাদেশি শিল্পীদের পরিবেশনায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আড়াই শতাধিক অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী ও অভিবাসী বাংলাদেশি উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। কোভিড বিধি নিষেধের মধ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলো অংশগ্রহণকারীদের প্রশংসা অর্জন করে।
×