ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাফফার মাহমুদ

স্বপ্রণোদিত শিল্পের উৎকর্ষই ‘বুনন’

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

স্বপ্রণোদিত শিল্পের উৎকর্ষই ‘বুনন’

সাহিত্য চিন্তক বুদ্ধদেব বসু ও অজিত দত্ত আধুনিক, বাস্তববাদী চিন্তাধারা’ প্রগতি’ সাহিত্যপত্র (১৯২৭-১৯৩০) প্রকাশে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। সমকালীন শিল্প-সাহিত্য উৎকর্ষে অগ্রণী ভূমিকা রেখে চলছেন, কবি-প্রাবন্ধিক খালেদ উদ-দীন ‘বুনন’ সাহিত্যের ছোটকাগজ প্রকাশনার মধ্য দিয়ে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে চলছে গ্রহণের কাল। কর্কটক্রান্তিকাল। দুঃসহ সময় অতিক্রম করছে মহাবিশ্ব! আমাদের অনুভূত চিন্তাকর্ষে ভাগ বসিয়েছে মহাকাল অমানিশা। তবুও দিশা হারায়নি কেউ কেউ। শিল্পচিন্তায় নিমগ্ন থেকে কেউ কেউ অগ্রসর হয়ে যাচ্ছেন কালান্তর চিত্রণে। এ এক ধ্যানমগ্ন চৈতন্য দেব। চিকিৎসাবিজ্ঞান হোঁচট খাওয়ার উপক্রম। তবুও এ ক্রান্তিকালে সমহিমায় উঠে দাঁড়াচ্ছেন শিরদাঁড়া সোজা করে। যেন বা এক শিল্পোৎকর্ষের হারকিউলিকস, সু-সম্পাদক। অর্থোকষ্টের ভেতরেও জীবন ঘনিষ্ঠ চিন্তায় নিবিষ্ট হন সাহিত্যপত্র সম্পাদন। শুধুই কী সম্পাদন! সম্পাদক খালেদ উদ-দীন নিরলসভাবে সম্পাদনা করেন ঢাউস সাইজের সাহিত্যের ছোটকাগজ ‘বুনন’। সম্প্রতি ‘বুনন’ প্রবন্ধ সংখ্যা। অষ্টম সংখ্যা। জানুয়ারি ২০২১ হাতে এলো। পাঠকদের কথা চিন্তায় রেখেই পৃষ্ঠা সজ্জাও সাজিয়েছেন সুনিপুণভাবে। সূচীক্রমে আছে প্লটনির্ভর সাজ। যেমনÑ এই সময়; আত্মকথন; সমাজ, সাহিত্য ও দর্শন; ইতিহাস; কবি ও কবিতা; কবিতাভাবনা; শিল্প ও সাহিত্য; পাঠ-মূল্যায়ন; ঐতিহ্য; অনুবাদ; পাঠ ও পঠন; গল্পকথ; চলচ্চিত্র ও গান; বিবিধ এবং এই সময়ের কবিতা। সংখ্যাটি যেহেতু প্রবন্ধ উপজীব্য তো, কিছু উল্লেখ্য জরুরী। কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী ‘তিন ভুবনের চাঁদ’; মলয় রায় চৌধুরী ‘আমার প্রথম কবিতার বই’; রায়হান রাইন ‘শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্করের দর্শন’; আজিজ কাজল ‘বাঙালীর মুক্তি-সন্ধান ও সচেতনতার দায় ; সৌম্য সালেক ‘বিংশ একবিংশ’ মাহফুজ পারভেজ ‘দেশভাগের পরেও দেশান্তরের স্রোত’; সন্তোষ ঢালী ‘বিনয় মজুমদার ‘আশাহত এক পারিজাতের কথা’; মামুন মুস্তাফা’ সৈয়দ হায়দার, প্রিয় মানুষের সান্নিধ্যে’; মাহফুজ আল-হোসেন ‘বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কবিতা: ‘বহুবাচনিকতা ও শিল্পের নন্দন’; আনোয়ার কামাল ‘শহীদ কাদরীর কবিতার প্রেম ও দেশপ্রেম’; উদয় শংকর দুর্জয় ‘অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত: অধিবিদ্যার কবি’; জাকারিয়া প্রীণন ‘আল মাহমুদ: স্বতন্ত্রধারার কবি’; ফরিদ আহমদ দুলাল ‘কবিতার সৌন্দর্য নিয়ে’; এমএইচ মোবারক ‘বাংলা কবিতায় চিত্র-গল্প ও সময়ের বিবর্তন’; হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ‘কবির হৃদয় আস্ত একটা পুথিবী’; মাসুদ মোস্তাফিজ’ বুনন : ‘আগুনতারল্যে দ্রোহ-চিন্তাপ্রতিচিন্তার এক আত্মচৈতনিক প্রতিশিল্প’; শহীদ ইকবাল ‘আবুল মনসুর আহমদের সৃজন-কাঠামো’; পিয়াস মজিদ ‘একটি ভাষণ ও একটি কবিতা : বাংলা-বোধের তুঙ্গতম প্রকাশ’; এ কে শেরাম ‘মণিপুরী ভাষা ও সাহিত্য : পরিপেক্ষিত বাংলাদেশ’; ফজল হাসান ‘মুরাকামি আবিষ্কার (মূল : ডেভিড কারাশিমা); মাইনুল ইসলাম মানিক ‘জর্জ স্যন্ডার্স ও লিংকন ইন দ্য বারদো’; নির্ঝর নৈঃশব্দ্য ‘বইয়ের সঙ্গে সেইসব দিনরাত্রি’; মহ্সীন চৌধুরী জয় গল্পভাবনা জুড়ে রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার; ধ্রুপদি সুরে আত্মার গান’; নূর কামরুন নাহার ‘আধুনিক বাংলাদেশের চিত্রকল্প’; আফরোজা অদিতি’ সৃজক-কথা’ (জীবনবোধ); মালেকা পারভীন ‘আত্মার অসুখ সারানোর দাওয়াই’ (বিদেশী সাহিত্য); রফিকুজ্জামান রণি ‘নারীর হাতে চাষা হয় পৃথিবীর প্রথম কবিতা’ (কিংবদন্তি); আফরোজা পারভীন ‘রবীন্দ্রনাথের পত্রসাহিত্য : সাহিত্যমূল্য অমূল্য ‘সমকালীন সাহিত্যচিন্তা, দর্শন, কবি ও কবিতা, পঠন-পাঠন, ঐতিহ্য-ইতিহাস নির্ভর রচনা সম্ভার। মানুষের ঘরগুলো কাছাকাছি ছিল এখন উন্নতির কাল, শুধু ঘরগুলো ছোট হয়ে গেছে। (পরিচয় : আকমল হোসেন নিপু) সমকালীন কবিতাকারুকারদের কবিতাচিত্রণে উঠে এসেছে পরম্পরা, দ্রোহ-বিদ্রোহ, নৈতিকতা, ঝরাপাতার ক্রন্দন রোল, সমস্বরে পতঙ্গ হনন বিউগল সুর। রয়েছে এই সময়ের বাংলা কবিতার অসীম দৃঢ়তার বাণীবদ্ধ ছন্দ, উপমা-উৎপেক্ষার বুনন শৈলী। এ দৃশ্য যে দেখছে বসে নৈঃসঙ্গে সে দেখছে নিজেরে নিবিড় ছায়া ফেলে। ( বিতর্ক : ফারুক আফিনদী ) এ যেন গোধূলি সন্ধির চিত্রকল্প। সন্ধ্যার দৃশ্যত রূপায়ন। মৌনব্রত স্বপ্নে আঁকেন কামনার অনুবীজ তোমার জন্য আমি তোমার আমার জন্য তুমি, তুমি আমি দুজন মিলে এসো হই স্বপ্নকামী। (স্বপ্নকামী : আয়েশা মুন্নি ) আমার অন্যমনস্ক আঙুলে পোড়া দাগ। জ্বলছে অদৃশ্য অনল। জ্বলছে সস্তা বিনোদন-অলৌকিক বনভূমি। জ্বলছে কুয়াশা-ঢাকা চাঁদ। আর প্রাগৈতিহাসিক এক নেশার ভেতর ধ্রুপদি ঘোরে বুঁদ হয়ে থাকা ইতিহাস। তার হাড় ও পাঁজর। (হাড় ও পাঁজর : তমিজ উদদীন লোদী) কবিতা সূচীভুক্ত হয়েছেন শিউল মনজুর, মুজিব ইরম, শিহাব শাহরিয়ার, জিললুর রহমান, ওয়াহিদ জালাল, সবুজ আহমেদ, ঝুমুর দাশ, সোমের কৌমুদী, ভাগ্যধন বড়ুয়া, একেএম আব্দুল্লাহ, গাফফার মাহমুদ, সাইয়্যিদ মঞ্জু, কেয়া ওয়াহিদ, টিপু সুলতান, মনদীপ ঘরাই, জোবায়ের মিলন, বীথি রহমান, আবু বকর সিদ্দিক, বদরুজ্জামান জামান, নিলয় রফিক প্রমুখ। বুনন সমহিমায় উদ্ভাসিত, কিছু কথা রোপণ করেন অনুবীজ শব্দমালায় দুঃসহ এক সময় অতিবাহিত করছি আমরা। কর্ম ও সৃজনে ভাগ বসিয়েছে আতঙ্ক। সাফল্য ও উৎকর্ষে চূড়ায় থাকার দাবি করা চিকিৎসাবিজ্ঞান যেখানে বারবার হোঁচট খাচ্ছে; সব যুক্তি ও জ্ঞান যেখানে কাজ করছে না, সেখানেও কেবল করুণ সুর নয়, হৃদনদে বয়ে যায় মায়াবী আবেশ। সুর ওঠে, দখিনা বাতাস বয়...। গেয়ে যায় চেনা অচেনা শৈশব ও গৌরব। এ মঞ্চে আমরা কেবল সংযোগে... ’ সগৌরবের দারুণ উচ্চারণ সম্পাদকীয় বলে দিচ্ছে ধরিত্রীর ক্রান্তিকালে এ সাহস কেবল ‘বুনন’ এরই আছে। ৮০ জন প্রাবন্ধিকের প্রবন্ধ, ৮৪ জন কবির কবিতা সমন্বয়ে ৬৪০ পৃষ্ঠার বৃহৎ কাজ সত্যিই প্রশংসনীয় উদাহরণ। নির্ঝর নৈঃশব্দ্য’র রেখাচিত্র প্রচ্ছদে বুনন দারুণ শিল্পীত-নন্দিত। বুনন। সম্পাদক : খালেদ উদ-দীন। সম্পাদকীয় যোগাযোগ : বৈশাখী-১১৭/২, খরাদিপাড়া, শিবগঞ্জ, সিলেট। মূল্য : ৫০০ টাকা। সংখ্যাটি পাওয়া যাবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহীসহ দেশের অভিজাত বই বিক্রয় কেন্দ্রে। বুনন বরাবরই লেখক বিবেচ্য নয়, ভাল লেখা যে কারোরই ছাপেন। সমহিমায়, সগৌরবে উদ্ভাসিত হোক বুনন পাঠক হিসেবে প্রত্যাশা খুব।
×