ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘জাতির পিতার জন্মদিন আজ’

প্রকাশিত: ০০:৩২, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১

‘জাতির পিতার জন্মদিন আজ’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যতো প্রবন্ধ, ছড়া, কবিতা, নাটক রচিত হয়েছে বোধ করি বিশ্বের আর কোন রাজনৈতিক নেতার নামে এতো গ্রন্থ মুদ্রিত হয়নি। রাজনীতি, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য যে শাখায় কথা বলি না কেনো, তাঁর নামটি সবার কাছে সবার আগে, সবার মণিকোঠায় ঠিকই থাকবে এবং বাঙালীর প্রাণেও তিনি থাকবেন চির জাগরুক হয়ে। গ্রাফোসম্যান পাবলিকেশন্স থেকে ২০২০ সালে একুশে বইমেলায় সোহেল আমিন বাবু রচিত ‘জাতির পিতার জন্মদিন আজ’ ছড়াগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। ক্রাউন সাইজের এই গ্রন্থে বারোটি ছড়ায় বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর সহ তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃৃতিক জীবনের পুষ্পিত সময় ফুটে উঠেছে- “বলছে মুজিব বাংলাদেশকে/ভালোবেসে দেখো লাল-সবুজের পতাকাটা/বুকের মাঝে রেখো’’-/ -জাতির পিতার জন্মদিন আজ উদ্ধৃত পঙ্তিতে বাঙালীর জীবন ও রাজনীতি, আদর্শ এবং দেশপ্রেম সব মননে গাঁথা থাকলে জাতীয় জীবনে মুক্তি নিশ্চয় আসে- বঙ্গবন্ধু যে সার্বজনীন এবং তিনি আজীবন বাংলার মানুষ ও দেশকে নিয়েই ভেবেছেন। বাংলার মানুষ তিনবেলা পেট পুরে ভাত খাবে, হাসবে, খেলবে, মুক্ত হাওয়ায় বসবাস করবে এই ছিলো তাঁর জীবনের ব্রত- এই হলো বঙ্গবন্ধুর দর্শন। সকল মানুষ, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে মৃত্যু অবদি শুধু সেই কথায় ভেবেছেন- সেই চিন্তায় মগ্ন ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর এই উদাত্ত আহ্বান ছড়াকার মধ্যমালয়ে ছন্দের অন্ত্যমিলে সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন- ছড়াটির বিষয়বস্তু শিশুতোষ মনে উন্মোচন করে মুজিবাদর্শ। মুজিব মানুষের মনে এখনো ময়ূখ হয়ে জাগ্রত রয়েছেন। ‘‘পুকুুর ধারে বাড়ির পাশে শাল পিয়ালের দোল টুঙ্গিপাড়া যেতে আমার মন তোলে হিল্লোল হিজল-তমাল ঝোপের পাতায় রৌদ্র ছায়ার খেলা ঐ খানেতে কিশোর মুজিব কাটাতো তার বেলা। ... ... ... ঝিরি ঝিরি পুবাল বাতাস গাছ হেলিয়ে আসে ওরাও বুঝি টুঙ্গিপাড়া গভীর ভালোবাসে সব বাঙালির তীর্থভূমি টুঙ্গিপাড়া হায় বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতা সেখানে ঘুমায়। ... ... ... যাচ্ছি মাগো টুঙ্গিপাড়া শাল পিয়ালের ছায় সেখানটাতে বঙ্গবন্ধু শান্তিতে ঘুমায়। -/তীর্থভূমি টুঙ্গিপাড়া এই ছড়াটি সার্বজনীন-একই সাথে শিশু-কিশোরদের আবার বড়দেরও পাঠযোগ্য। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায় ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এবং এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে সব বাঙালির মননকে জাগিয়ে রেখেছেন। জায়গাটি এখন সত্যি সত্যি সব বাঙালির তীর্থভূমি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের স্মারকচিহ্নও এইখানে এখন। অক্ষরবৃত্তের এই ছড়াটি বাঙালির মনের অক্ষর হয়ে মুখে-মনে ফেরে সেই কথায় ছড়াকার গভীরভাবে ইতিহাসের এই মহানায়ককে সহজ-সুরেলা শব্দের গ্রন্থনে সাযুজ্য সংকেতেই প্রোথিত করেছেন। ছড়াটি পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মতই যোগ্যতার দাবি রাখে। ‘‘ কার বাড়িতে চাল-ডাল নেই/যান ছুটে তার বাড়ি ধলপ্রহরে, ভর দুপুরে/টুঙ্গিপাড়া ছাড়ি। ... ... ... শীতের দিনে গরম কাপড়/দিয়ে করেন আদর কখনো বা তুলে দিতেন/নিজের গায়ের চাদর। ... ... ... দেশ মাটি মাকে নিয়েই/খোকার জীবন চলে খোকার হাত পরে যেথায়/সেথায় সোনা ফলে।’’ -খোকার হাত শিশু-কিশোর মুজিবের সচিত্র ইতিহাস ও মধ্যস্থিত ধ্বনি শিশুদের মনে পরোপকারের প্রতি প্রযত্নবান হওয়ার এই যে আহবান ছড়ার মধ্যে সেই সুরের বিশিষ্টতা রয়েছে। দারুণ আশ্চর্য কুশলতায় ছড়াকার তার বিভিন্ন ছড়ায় দেখিয়ে দিয়েছেন-‘এই রাজপথে মিছিলে মিছিলে জয় বাংলার ধ্বনি-সবখানে রয় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গ নয়ন মণি, বঙ্গবন্ধু তোমার ডাকে বাঙালিরা ছুটে আসে, বীর বাঙালি তোমার মতই সংগ্রাম ভালবাসে- বঙ্গবন্ধু তোমার ডাকে যুদ্ধ শেষে জয়; এই স্বাধীনতা এই যে বিজয় বঙ্গবন্ধুর দান, সবখানে রয় বঙ্গবন্ধু মানুষেরে ভালবেসে, বঙ্গবন্ধু তুমি বাংলার বাংলা মুজিবময়, সব বাঙালির তীর্থভূমি টুঙ্গিপাড়া হায়, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা সেখানে ঘুমায়; তাঁর জন্যে আমরা পেলাম সোনার বাংলাদেশ, শেখ মুজিবুর সবার কাছে নামটি অনিশেষ’-এই যে তাঁর কুশলতা, এই যে তার আশ্চর্যময়তা এখানে সোহেল আমিন বাবুকে অনন্যতা দিয়েছে এবং তাঁর ছড়াগ্রন্থ ‘জাতির পিতার জন্মদিন আজ’ সার্থক হয়েছে বলে মনে করা অমূলক নয়। বারোটি ছড়ায় বঙ্গবন্ধুর বহুমাত্রিকতা প্রকাশ পেয়েছে এবং ছড়াগুলো মুগ্ধতায় অন্বয় হয়ে আছে। বারোটি ছড়ায় অক্ষরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তে আবার কোনো ছড়ায় একই সাথে মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তের মিশেলে মিশ্রছন্দে রচিত-কোথাও মুক্তক ছন্দের ব্যবহার ছন্দমাত্রা সচেতনভাবে জেনেই ভেঙেছেন, সেক্ষেত্রে অন্ত্যমিলের কারণে কোথাও শব্দের ব্যবহারে লয়ে ধীরগতি লক্ষ্য করা গেলেও এইসব কিছু উপেক্ষা করে ছড়াগ্রন্থটি পাঠমধুর ও পাঠযোগ্য বলেই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
×