ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মননের ময়না পাখি

প্রকাশিত: ২০:০২, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১

মননের ময়না পাখি

মনন পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ও ভাল ছেলে। মেধাবী ছাত্র। সুন্দর ছবি আঁকে। সব কিছুইতে ভাল কিন্তু মনন কথা বলে কম। স্কুলে বন্ধুদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া তেমন কথা বলে না। আর এখন তো করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল বন্ধ। বাসায় বসে নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস করে। বাসায় সবার সঙ্গে সারা দিনে দশটা কথার বেশি বলে মনে হয় না। মননকে নিয়ে বাবা মা দুশ্চিন্তায় আছে। একদিন মা মননের মামাকে বিষয়টা খুলে বললেন। মননের মামা অবাক হলেন। তিনি বিষয়টা খুব গুরুত্বসহ বোঝার চেষ্টা করলেন। চিন্তা করলেন মনন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়লও ভাষার মাসে তাকে বাংলা ভাষা শুদ্ধ করে বলাতে হবে, লেখাতে হবে। কিন্তু মনন তো কথাই বলতে চায় না। কি করে কথা বলাবে। মামা মননকে বেশি কথা বলার জন্য কৌশল গ্রহণ করলেন। বেশ কিছুদিন পর মননের বাসায় গেলেন মামা। হাতে একটা খাঁচা। খাঁচার ভেতর একটা পাখি। পাখিটির নাম ময়না পাখি। মনন পড়ালেখা করছে। মামা পড়ার টেবিলে খাঁচাটা রাখলেন। খাঁচার রাখার সঙ্গে সঙ্গে ময়না পাখি বলল, ‘মেধাবী মনন কেমন আছ?’ ময়না পাখির মুখে মনন নিজের নাম শুনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াল। ময়না পাখির দিকে তাকিয়ে রইল। ময়না পাখি আবার বলল, ‘মনন ভয় পেয়েছ? ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার সয়েমড় কথা এসেছি। তুমি কেমন আছ?’ মনন মাকে ডাক দিল। মামা ভাগ্নে ময়না পাখি নিয়ে কি করছেন সে দৃশ্য মননের বাবা উত্তম দূর থেকে ভিডিও করছেন। মননের ডাকে মা জয়শ্রী কাছে এলেন। গিয়ে বললেন, ‘কি হয়েছে মনন?’ মনন এবার মাকে কাছে পেয়ে বলল, ‘মা, সুমন মামা ময়না পাখি নিয়ে এসেছেন। ময়না পাখি আমার নাম ধরে ডাকছে। তুমি যে চিড়িয়াখানায় নিয়ে ময়না পাখি দেখিয়েছিলে। তখন থেকে কি ময়না পাখি আমাকে চেনে?’ মা কিছু না ভেবে সঙ্গে সঙ্গে বললেন, ‘হ্যাঁ, তখন থেকে তোমাকে চেনে মনে হয়। তোমাকে পছন্দ করেছে ময়না পাখি। তুমি ময়না পাখির সঙ্গে কথা বলো। ময়না পাখি কি জিগ্যেস করছে উত্তর দাও।’ ময়না পাখি আবার বলল, ‘তুমি কেমন আছ?’ মাকে জড়িয়ে ধরে ধীরে ধীরে মনন বলল, ‘আমি ভাল আছি।’ ময়না পাখি বলল, ‘তুমি মনে হয় ভয় পাচ্ছ মনন। সেজন্য মায়ের শাড়ির আঁচল ধরে দাঁড়িয়ে আছ!’ মায়ের শাড়ির আঁচল ছেড়ে দিয়ে মনন বলল, ‘না না আমি ভয় পাইনি।’ ময়না পাখি খাঁচার ভেতর ঘুরতে ঘুরতে বলল, ‘তুমি যে ভয় পাওনি। কথাটা শুনে আমার খুব ভাল লাগল। আমি কাউকে ভয় দেখাই না, আনন্দ দেই। বন্দী খাঁচায় একা থাকব। কেউ কথা না বললে আমার অনেক খারাপ লাগবে। তুমি আমার সঙ্গে বেশি বেশি কথা বলে আমি খুশি হব।’ মনন এবার খুশি হয়ে বলল, ‘সত্যি তাই! তুমি তো মিথ্যা কথা বলবে না। মিথ্যা কথা বললে কিন্তু আমি তোমার সঙ্গে কথা বলব না।’ ময়না পাখি বলল, ‘না না আমি মিথ্যা কথা বলব না।’ মনন বলল, ‘যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভাললাগে না আমার।’ ময়না পাখি বলল, ‘আমি তোমার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব না। আমিও মিথ্যুকদের ভয় পাই। আমি সত্যি কথা বলি। আমি আর তুমি বেশি বেশি কথা বলব। সত্যি কথা বলব।’ মনন বলল, ‘তুমি কি সুন্দর করে কথা বল। তোমার কথা আমার ভাল লেগেছে। আমি বেশি বেশি কথা বলতে পারি। তবে একটা শর্ত আছে।’ ময়না পাখি বলল, ‘কথা বলতে আবার কিসের শর্ত?’ মনন বলল, ‘আমার পড়ালেখার সময় কিন্তু ডিস্টার্ব করা যাবে না।’ খুশিতে খাঁচার ভেতর ময়না পাখি আবার ঘুরতে ঘুরতে বলল, ‘না না পড়ালেখার সময় তোমার ডিস্টার্ব করার প্রশ্নই আসে না। চুপচাপ থাকব। তবুও যদি তুমি ডিস্টার্ব মনে কর তাহলে অন্য রুমে গিয়ে আমাকে রেখে আসবে। তখন আমি তোমার ছোট ভাই রণনের সঙ্গে গল্প করব।’ মামার দিকে তাকিয়ে মনন বলল, ‘ও আচ্ছা। তাই তো! তুমি তো অনেক বুদ্ধিমান। মামা আমার জন্য বুদ্ধিমান ময়না পাখিটা নিয়ে এসেছেন। আপনাকে ধন্যবাদ।’ মামা কিছু বলার আগেই ময়না পাখি বলল, ‘মনন, তুমিও তো অনেক মেধাবী। সেজন্য তোমাকে আমার ভাল লেগেছে। আর ভাল না লাগলে প্রথম দিনেই তোমার সঙ্গে এত কথা বলতাম না। আর তোমার মামা অনেক পরীক্ষা আর প্রশিক্ষণ দিয়ে আমাকে নিয়ে এসেছেন।’ মনন বলল, ‘তাই ! তোমাকে ভাল না লাগলে আমিও এত কথা বলতাম না। মাকে জিগ্যেস করে দেখ। আমি কত কম কথা বলি।’ ময়না পাখি মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘আমি জানি। তুমি আমাকে কতটা পছন্দ করেছ। তার প্রমাণ দেখাও।’ মনন অবাক হয়ে বলল, ‘এত অল্প সময়ে পরিচয়ে আমি কি প্রমাণ দেব?’ ‘প্রমাণ দেয়ার সে ক্ষমতা তোমার আছে?’ ‘কি ক্ষমতা?’ ‘তুমি না ভাল ছবি আঁকতে পার মনন। আমাকে দেখে দেখে আমার একটা ছবি আঁক। তাহলে বুঝব তুমি আমাকে পছন্দ করেছ।’ মনন সঙ্গে সঙ্গে কাগজ কলম আর পেন্সিল বের করে ময়না পাখির সুন্দর একটা ছবি আঁকল। ময়না পাখি নিজের ছবি দেখে অবাক। বাসার সবাই মহাখুশি। মামা খুশিতে বললেন, ‘তুমি যদি ময়নার সঙ্গে ভালভাবে কথা না বল তাহলে কিন্তু ময়না রাগ করবে। পরে আমি ময়নাকে নিয়ে যেতে বাধ্য হব।’ মনন বলল, ‘মামা ময়নাকে নিয়ে যেতে হবে না। আমি কথা বলব, বেশি বেশি কথা বলব।’ মামা বললেন, ‘আমি কিন্তু ভিডিও কলে দেখব। তুমি কথা বলছ কি বলছ না।’ ‘ঠিক আছে মামা। আমি কথা দিলাম। নিয়মিত ময়না পাখির সঙ্গে কথা বলব। তোমাকে ভিডিও করে দেখাব।’ ‘ধন্যবাদ মনন।’ কিছুদিন পর। মনন ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ালেখা করলেও এখন শুদ্ধ করে বাংলা বলতে পারে, লিখতে পারে। যে মনন আগে বাসায় এত কম কথা বলত এখন সে মনন বাসার ভেতর সবচেয়ে বেশি কথা বলে। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের সঙ্গে ভিডিও কল করে ময়না পাখি দেখায় আর গল্প করে। মননের বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা দূর হয়। অলঙ্করণ : নাসিফ আহমেদ
×