ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে নেই কোন কোলাহল

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ক্যাম্পাসে নেই কোন কোলাহল

ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ভিকারুননেছা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ বেইলি রোডের মেইন ক্যাম্পাসে কোভিডকালীন শিক্ষার হালচাল জানার জন্য ১৯ জানুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টায় প্রবেশ করি। ১নং গেট থেকে প্রবেশ করতেই ক্যাম্পাসের নিস্তব্ধতা মনে করিয়ে দিল কোভিড-১৯ এর ভয়াল থাবায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বাসার চৌহদ্দীর মধ্যে ভার্চুয়াল ক্লাসের মাঝেই তারা সীমাবদ্ধ। ভার্চুয়াল ক্লাসে শিক্ষকদের টিচিং পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীদের গ্রহণ করার ক্ষমতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় ভিএনএসসির অনলাইন ক্লাস মডারেটর এবং ইংরেজী বিভাগের প্রধান সহকারী শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের সঙ্গে। যার কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো- বর্তমান মহামারীতে আপনাদের পাঠদান ও অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাই। জান্নাতুল ফেরদৌস যা বললেন, আমারা অনলাইন ক্লাসে ভালো রেসপন্স পাচ্ছি। প্রতিটি ছাত্রী খুবই মনোযোগী। এইচএসসি প্রথমবর্ষের ১৪৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৪৭টি এ্যাসাইনমেন্ট জমা পড়েছে। তাই আমরা ধরে নিচ্ছি আমাদের লেকচার সবাই পেয়েছে। এ ছাড়া স্কুল লেভেলের শিক্ষার্থীদের জন্য তিনটি মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস হচ্ছে জুম, ইউটিউব ও ফেসবুক লাইফ। আমাদের নিজেদের ইউটিউব চ্যানেলে কিছু টিচাররা কঠিন টপিকসগুলো প্রচার করে যেন শিক্ষার্থীরা বুঝতে পারে। তবে আমাদের সফল ক্লাস হচ্ছে জুম ক্লাস। কলেজ পর্যায়ে জুম ক্লাস নেয়া সম্ভব হয়নি কারণ সেখানে একশ’র ওপরে শিক্ষার্থী। তিনি আরও বললেন, স্বাভাবিক সময়ের থেকে অনলাইন ক্লাসে উপস্থিতি অনেক বেশি প্রায় ৯৫ শতাংশ কখনও সম্পূর্ণ উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায়। আমরা যথেষ্ট পরিমাণ অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে রিচ করছি এখন তারা কতটুকু শিখতে পারছে সেটা আমরা এ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে যাচাই করছি। সাপ্তাহিক পরীক্ষা কিভাবে নিচ্ছেন জানতে চাইলে বললেন, ‘সিটি পরীক্ষা আমরা এখানে বসিয়ে সুন্দরভাবে নিয়েছি। তবে এটা তো এখন সম্ভব নয়। এখন আমরা এ্যাসাইনমেন্টের সঙ্গে পরীক্ষা নিচ্ছি এবং মার্কিং করছি। এটা কলেজের ক্ষেত্রে এবং স্কুলে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী গুড, ভেরিগুড এবং সেটিসফ্যাক্টরি দেয়া ও এর কারণ লেখা হয়েছে।’ শিশু শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ডায়েরি লেখা ও অন্যান্য বিষয়গুলো কিভাবে মেইনটেইন করছেন? এ বিষয়ে বললেন, ‘স্টুডেন্টরা যে একদম পারফেক্টলি ক্লাসরুমের মতো শিক্ষা পেয়েছে সেটা আমরা কখনই বলব না। কিছুটা তো বাধাগ্রস্ত হয়েছেই। টেকনোলজিতে অনেক সমস্যাই হয়ে থাকে। ক্লাস করছে এমন সময় কোন বাচ্চার বাসায় বিদ্যুত চলে গেল। তখন ক্লাসটা অফ হয়ে গেল। আবার আমার ফোন আসল তখন আবার ক্লাস রিজিউম করতে হয়। ক্লাসরুমে এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না। তাই আমার মতে ক্লাসরুমে শেখানোর ক্ষেত্রে ১০০ ভাগই দেয়া যায় যেটা অনলাইনে সর্বোচ্চ ৬০ ভাগ সম্ভব। আমাদের মেয়েদের কাছে স্মার্টফোন আছে। ওয়াইফাই সুবিধা আছে। আমাদের বাচ্চাদের পরিবার যে সাপোর্ট দিচ্ছে। সেটা তো সবার পক্ষে সম্ভব নয়। এ ছাড়া গ্রামের রিমোট এলাকার শিক্ষার্থীরা অনেক পিছিয়ে আছে। তাই এভাবে বেশিদিন চলুক এটা আমাদের কাছে অনাকাক্সিক্ষত। ভিকারুননেছা স্কুলের ওপেন অনলাইন শিক্ষা পেজ আছে নূন বাতায়ন। সেখানে এ স্কুলের বাইরেও অনেক ফলোয়ার্স আছে। এক মেয়ে রাজশাহী থেকে লিখে পাঠিয়েছে তার খুব শখ ছিল এ স্কুলে পড়ার। কিন্তু তার বাবা ডাক্তার বিভিন্ন জায়গায় বদলি হয়ে যায়। তাই সে পারেনি। তবে নূন বাতায়নে ক্লাস করে মনে হচ্ছে এ স্কুলেই পড়ছে। তার ইচ্ছাটা নূন বাতায়নের মাধ্যমে পূরণ হয়েছে। সারাদেশ থেকে আমরা এমন বার্তা পাই । এগুলো আমাদের ভীষণ উৎসাহ দেয়।’ প্রথম শ্রেণীতে লটারি হলেও অন্যান্য ক্লাসের ভর্তির ব্যাপারে কোন সার্কুলার নেই কেন? এ প্রসঙ্গে জীববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান শিক্ষক মাজেদা বেগম বললেন, ‘এ বছর অটোপাসের জন্য দ্রুত বলা যাচ্ছে না কোন ক্লাসে আসন সংখ্যা খালি থাকবে কিনা। প্রতিবছর ফেল করলে আমরা আগেই চিহ্নিত করতে পারি। এবার সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সিট খালি হলে সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী লটারির মাধ্যমেই ভর্তি নেয়া হবে।’ বৈশ্বিক মহামারী করোনার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সম্প্রসারণের ফলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো পাচ্ছে নিজ আলয়ে। একইসঙ্গে এর অনেক খারাপ প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিশুদের ওপর। সুবিধাবঞ্চিত ও রিমোট এলাকার শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির বাইরে অবস্থান করে। তাই এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে কোমলমতি শিশুদের মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, কম্পিউটার এবং অনলাইনের যথাযথ ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। অনলাইন ক্লাসে ভিএনএসসি স্কুল ৯৯ ভাগ সফলতা অর্জন করেছে । একইভাবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজেকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে যেন তৈরি করতে পারে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
×