ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে চাদাঁবাজির অভিযোগে এক কিশোর গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২০:২৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

ভারতীয় শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে চাদাঁবাজির অভিযোগে এক কিশোর গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে কাপড়ের দোকানে চাকরি নেয় এক কিশোর। কিন্তু সেখানে তার মন টেকেনি। অল্প সময়ে ধনী হওয়ার আশায় চাকরি ছেড়ে পালিয়ে যায়। ভারতীয় টিভি সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে অন্ধকার পথে পা বাড়ায়। হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করে। এমনকি বোমা বানানোর তৈরীর কাজও শেখে। এরপরই রাজধানীর গুলশানে এক ব্যবসায়ীকে ফোন করে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে তার গাড়িতে আটকে দেয়া হয় নকল বোমা। এ সময় উপমহাদেশের কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছোটা শাকিলের পরিচয় দেয় সে। ওই ব্যবসায়ীকে ভয় দেখাতে তার গাড়িতে আটকে দেয়া হয় নকল বোমা। এর সূত্র ধরে ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় ওই তরুণের নাম ও ছবি প্রকাশ করেনি ডিবি পুলিশ। বৃহস্পতিবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার। পরে জানা যায় চাঁদা দাবি করা ওই কিশোর ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। তবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার জানান, বুধবার রাতে গুলশান ডিবি পুলিশের একটি টিম মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই কিশোরকে গ্রেফতার করে। এ সময় তার কাছ থেকে চাঁদা দাবির ঘটনায় ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। হাফিজ আক্তার বলেন, গত ১১ জানুয়ারি রাত ৪টায় ভারতীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসীর পরিচয়ে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে রাজধানীর গুলশান ঢালী সুপার স্টোরের মালিক ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের কাছে পরিবারের সবাইকে হত্যার হুমকি দিয়ে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলে বোমা মেরে তার পরিবারের সদস্যদের উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। পরদিন ১২ জানুয়ারি বিকেলে ওই ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর প্রাইভেটকারটি পার্কিং করা অবস্থায় ড্রাইভার গাড়ির নিচে বোমাসদৃশ বস্তুত উপস্থিতি টের পায়। পরে তিনি বিষয়টি বাড্ডা থানা পুলিশকে জানান। পরে থানা পুলিশ সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল টিমকে খবর দেন। পরে সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে বোমাসদৃশ বন্তুটি অপসারণ করলে ধ্বংস করে। পরে ডিসেপোজাল ইউনিট বোমাসদৃশ বস্তুটি অকার্যকর ছিল। পরে ব্যবসায়ীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বাড্ডা থানায় একটি মামলা হয়। এরপর ডিবি পুলিশ ঘটনার রহস্য উৎঘাটনের জন্য মাঠে নামে। পরে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ শেষে গুলশান গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম বিশেষ অভিযান চালিয়ে ঘটনার মূলহোতাকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়। অতিরিক্ত কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান,বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত কিশোর জানায়, সে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর গ্রামের বাড়ির কেয়ারটেকারের ছেলে। সে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর একটি কাপড়ের দোকানে চার হাজার টাকা বেতনে সেলসম্যানের কাজ নেয়। কিন্তু বেতন অল্প এবং দ্রুত ধনী হওয়ার আশায় সেখান থেকে পালিয়ে আসে। ধনী হওয়ার লোভে পূর্বপরিচিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের পরিকল্পনা করে দুই মাস আগ থেকে। এজন্য সে হিন্দি সিনেমা, সিরিয়াল, ইউটিউব দেখে নকল বোমা বানানো এবং সন্ত্রাসী পরিচয়ে হুমকি-ধামকি দেয়ার কৌশল শেখে। হিন্দি সিনেমা দেখার কারণে সে হিন্দি ভাষায় কথা বলার দক্ষতাও অর্জন করে। পরে লাল টেপ, পাইপ, ইলেকট্রিক তার, পেন্সিল ব্যাটারি ও আনুষঙ্গিক উপকরণ দিয়ে বোমাসদৃশ বস্তুটি বানিয়ে রাখে। ব্যবসায়ী তার প্রাইভেটকার নিয়ে ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে তার এক আত্মীয়ের জানাজায় যোগ দিতে যান। সেই সুযোগে গ্রেফতারকৃত ওই কিশোর প্রাইভেটকারের নিচে বোমাসদৃশ বস্তুটি টেপ মেরে আটকে দেয়। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি’র এক কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিককালে রাজধানীতে বিভিন্ন শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে চাঁদা দাবি করার মতো ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে শীর্ষ সন্ত্রাসী বলতে কিছু নেই। শীর্ষ সন্ত্রাসীর পরিচয়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করার পর যদি চাঁদাবাজরা ১০ হাজার টাকাও পায় তাও ওদের লাভ। তাই আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি, শীর্ষ সন্ত্রাসী পরিচয়ে বা কোনো চাঁদাবাজ যদি ফোন করে হুমকি দেয়, চাঁদা দাবি করে তাহলে নিকটস্থ থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশকে জানান। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেবো।
×