ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তদন্ত কমিটি সূত্রের খবর

সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ও কাইল্যা পলাশ বন্দী থেকেই বাবা হয়েছে

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ও কাইল্যা পলাশ বন্দী থেকেই বাবা হয়েছে

শংকর কুমার দে ॥ গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এ আছে শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস। সে প্রায় ১৬ বছর ধরে বন্দী। কারাবন্দী থাকা অবস্থায়ই প্রায় ৪ বছর আগে ছেলে সন্তানের বাবাও হয়েছে কিলার আব্বাস। আব্বাসের স্ত্রী হামিদা বেগমের দাবি, তার ছেলের বাবা কারাগারে থাকা আব্বাস। শুধু কিলার আব্বাসই নয়, কারাগারে থেকে বাবাও হয়েছে আরও এক বন্দী। কারাবন্দী থেকেও সন্তানের বাবা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসিন খান পলাশ ওরফে কাইল্যা পলাশ। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাবন্দী সে। প্রায় ৮ বছর আগে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়েছে। স্ত্রীর মাহমুদা খানমের দাবি, মেয়ে সন্তানটির বাবা কাইল্যা পলাশ। গাজীপুর কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ নারী সঙ্গ কাটিয়েছেন বন্দী হলমার্ক কেলেঙ্কারির জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ। এ ঘটনার পর কারাগারের বন্দী থেকেও সন্তানের বাবা হওয়ার ঘটনাটিও সামনে এসেছে। নারী সঙ্গের ঘটনার পর গঠিত তদন্ত কমিটি সূত্রে এ খবর জানা গেছে। কারাগার সূত্রে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম কিলার আব্বাস। প্রায় ১৬ বছর ধরে সে কারাবন্দী। প্রায় ৪ বছর আগে ছেলে সন্তানের বাবা হয়েছে সে। ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের সামনে এবং রাজধানীর কাফরুল থানাধীন কচুক্ষেত এলাকায় প্রকাশ্যে দুই ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয় তার বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতার হয় সে। সেই থেকে কারান্তরীণ। বর্তমানে সে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে-২ এ আছে। কিলার আব্বাসের স্ত্রী হামিদা বেগম। হামিদা বেগমের দাবি, তার ছেলের বাবা কারাগারে থাকা আব্বাস। পুলিশকে ম্যানেজ করে সে মিরপুরের বাসায় আসত। দীর্ঘ সময়ও কাটাত। ছেলের বয়স এখন প্রায় ৬ বছর। তার ক্যান্সার হয়েছে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের একাধিক হাসপাতালে তার ছেলের চিকিৎসা চলছে। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে আছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইয়াসীন খান পলাশ ওরফে কাইল্যা পলাশ। অথচ ৮ বছর আগে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়। পলাশের স্ত্রী মাহমুদা খানম। স্ত্রী মাহমুদা খানমের দাবি, ওই সন্তানের বাবা কারাগারে থাকা পলাশ। ঢাকার আদালতে যখন হাজিরা দিতে আসত তখন যেত রামপুরার বাসায়। কখনও দুই চার ঘণ্টা আবার কখনও পুরো দিন কাটাত। কাশিমপুর, রাজশাহী, দিনাজপুর ও মুন্সীগঞ্জ কারাগার ঘুরে এখন তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছে কাইল্যা পলাশ। ২০০২ সালের ২৯ মে রামপুরায় যুবদল নেতা মিজানকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা হয় কাইল্যা পলাশের বিরুদ্ধে। ২০০৩ সালে গ্রেফতারের পর থেকেই কারাগারে রয়েছে পলাশ। ওই ঘটনায় আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন। পরে উচ্চ আদালতে আপীল করা হলে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন হয় তার। ২০১২ সালে তার একটি মেয়ে সন্তান হয়। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ হলমার্কের জিএম তুষার আহমেদের সঙ্গে আসমা শেখ সুইটি নামের এক নারীর অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ঘটনায় গঠিত হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি। কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার রত্না রায়, জেলার, ডেপুটি জেলারসহ পাঁচ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে এই নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায়। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি অতীত ও বর্তমানের সব কিৎসা কাহিনীর নজির উদাহরণ খুড়ে বের করছে। কারাগারের বন্দীর নারী সঙ্গ কাটানোর ঘটনাটি কারাগারের অভ্যন্তরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির ভয়াবহতার কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। হলমার্কের শীর্ষ কর্মকর্তা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী তুষার আহমেদের সঙ্গে কারাভ্যন্তরে নারী সঙ্গর বিষয়টি গোচরীভূত হওয়ার পর তোলপাড় শুরু হয়েছে। নড়েচড়ে উঠেছেন কারাগার কর্তৃপক্ষ। সমালোচনায় মুখর হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা কারাগারে এই প্রথম নয়। আদালতে হাজিরা শেষে কয়েদিদের বাসায় যাওয়ার সুযোগও করে দিয়েছে কিছু অসাধু পুলিশ সদস্য। বাসার বাইরে চলেছে পুলিশ প্রহরা। যানজটের অজুহাতে আদালত থেকে কারাগারে পৌঁছাত না নির্দিষ্ট সময়ে। রাতের কোন এক সময়ে কারাগারে পৌঁছেছে আসামি-কয়েদিসহ প্রহরারত পুলিশ। আর তা না হলে আসামি-কয়েদিরা কারাবন্দী থেকে বাবা হয় কিভাবে? কারাগারের উর্ধতন এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কারাগারের ভেতরে-বাইরে অনিয়ম, দুর্নীতি, বিধি বিধান ভঙ্গ কারার জন্য অতীতেও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সবাইকে ম্যানেজ করেই প্রভাবশালী ও বিত্তশালী আসামিরা করেছে মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা। কোন কোন ঘটনা জানাজানি হলে গঠন করা হতো নামকাওয়াস্তে কমিটি। কিন্তু কারো দৃষ্টান্তমূলক কঠোর শাস্তির নজির নেই। তবে সিসি ক্যামেরা লাগানোর পর থেকেই বিষয়গুলো সামনে চলে আসে। তদন্ত কমিটির একজন কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুর কাশিমপুর কারাগারে হলমার্কের জিএম তুষার আহমেদের সঙ্গে এক নারীর অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর ঘটনায় কারাগারে থাকা কয়েদির বাবা হওয়ার ঘটনাটি সামনে এসেছে। আগে শোনা যেত, কারাগারের ভেতরের মাদকের রমরমা লেনদেন। এখন দেখি, কারগারের ভেতরে নারী সঙ্গও। শুধু কারাগারের ভেতরেই নয়, কারাকর্মকর্তা, কারারক্ষী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে জঘন্য সব অপরাধের ঘটনা ঘটছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কারাবন্দী অবস্থায় নারীসঙ্গের ঘটনা জঘন্যতম অপরাধ। কারাগারের ভেতরে এ ধরনের ঘটনাকে প্রশ্রয় দেয়া যায় না। বিধি অনুযায়ী শাস্তি পাবে অভিযুক্তরা। যে-ই এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকবে, বিধি অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারাগারের একজন কর্মকর্তা বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ও কাইল্যা পলাশ কারাবন্দী থাকা অবস্থায় ছেলেমেয়ের বাবা হওয়ার ঘটনাটি ভুলেই গিয়েছিলাম। কিন্তু হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তুষার আহমেদের কারাগারের ভেতরে নারী সঙ্গ লাভ করে যে নারী কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়েছে তাতে আবারও কারাগারে থেকে কারাবন্দীর বাবা হওয়ার ঘটনাটি সামনে চলে এসেছে।
×