ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ও পলাশ কেন এ মন মোর রাঙালে...

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

ও পলাশ কেন এ মন মোর রাঙালে...

মোরসালিন মিজান ॥ ও পলাশ.../কেন এ মন মোর রাঙালে/জানি না, জানি না/আমার এ ঘুম কেন ভাঙালে...। হ্যাঁ, একটু আগেভাগেই ঘুম ভাঙালো পলাশ। সদ্য ফোটা ফুলের গাঢ় মিষ্টি রঙে, অপরূপ সৌন্দর্যে চোখ যেন আটকে যাচ্ছে। চঞ্চলমতি শিশুর মতো নেচে উঠছে মন। রঙিন একটা অনুভূতি হচ্ছে ভেতরে। কিন্তু সময় কি হয়েছে? ফাল্গুনের এখনও তো ঢের বাকি। এরই মাঝে পলাশ? অনেকেই হয়তো দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যাবেন। না, মাথা চুলকানোর প্রয়োজন নেই। বরং চলার পথে আশপাশের গাছগাছালির দিকে সচেতন দৃষ্টি দিন। একটু তাকান। ঠিক দেখতে পাবেন ‘পলাশ ফুটেছে।’ শীতের রুক্ষ শুষ্ক প্রকৃতি। তদুপরি কোভিডের কাল। এমন দুর্দিনে পড়ে অনেক আগেই ছন্দ হারিয়েছে জীবন। সব কিছু এলোমেলো বিবর্ণ যখন, প্রিয় ফুল নিজের মতোই সবাইকে রাঙিয়ে নিতে বলছে। কারণ ঋতুরাজ বসন্ত আসছে! আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। মাঘ শেষ হতেই ফাল্গুন এসে কড়া নাড়বে দ্বারে। পলাশ, হ্যাঁ, ফাল্গুনের ফুল। বসন্তের রং পরিপূর্ণভাবে ধারণ করে এটি। ঋতুরাজ আসছে, আগেভাগে জানান দেয়। একই কাজ এখন করছে সে। বসন্তকে বরণ করে নিতে হবে। যে সে ঋতু নয়। বসন্ত। প্রকৃতিরও আছে কিছু প্রস্তুতি। প্রাক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই রং ছড়াচ্ছে পলাশ। উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মার বর্ণনা মতে, এ রংটি গাঢ় কমলা, লালের কাছাকাছি। ফুল কাঁকড়ার পাঞ্জার মতো দ্বিধাবিভক্ত। গাছ শিমগোত্রীয়, তাই পাপড়ি বিন্যাসও তদ্রƒপ। পাঁচটি মুক্ত পাপড়ির একটি সবচেয়ে বড়, সামনে প্রসারিত। অন্য চারটি পরস্পরের সঙ্গে জড়ানো এবং বাঁকা। ফুলটির মূল বৈশিষ্ট্য এর উজ্জ্বল রং। অনেক দূর থেকে এই রং চোখে পড়ে। পড়বেই। আর পলাশের বন যদি হয়, মানে, এক সঙ্গে অনেক গাছ, তাহলে রঙের মেলা শুরু হয়ে যায়। একই কারণে ফুলটিকে বলা হয় ‘ফ্লেইম অব দ্য ফরেস্ট’, দ্বিজেন শর্মা যার বাংলা অনুবাদ করেছেন ‘অরণ্যের অগ্নিশিখা।’ পলাশ গাছ সারাদেশেই কম বেশি আছে। সৌন্দর্য বর্ধনের চিন্তা থেকে বিভিন্ন সময় ঢাকায়ও লাগানো হয়েছিল। বর্তমানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদির ঠিক উপরে ফুটে আছে পলাশ। যেন বায়ান্নর ভাষা শহীদদের চরণের কাছে এসে মাথা নুইয়ে দিয়েছে তারা। হাতিরঝিলেও অপরূপ পলাশের ফুল ফুটে আছে। এরই মাঝে ফুলের আকর্ষণে ছুটে আসতে শুরু করেছে পাখিরা। মৌমাছিরা ভিড় করছে। ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটার সময় এমন দৃশ্য দেখতে কী যে ভাল লাগে! অনেকে থমকে দাঁড়ান। প্রকৃতিপ্রেমীরা ফুলপ্রেমীরা পলাশের সৌন্দর্য নতুন করে উপভোগের চেষ্টা করেন। আর মোবাইলে ফোনে ছবি তোলা, সেই ছবির ক্যাপশনে কবিতার পঙ্ক্তি লিখে ফেসবুকে পোস্ট, সে তো হচ্ছেই। এভাবে পলাশ শুধু নয়, ফাগুনের বার্তা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। পাচ্ছেন কি সেই বারতা?
×