ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইসিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

ইসিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের সহিংসতা, কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতি ও ভোটারদের বাধা দেয়ার পরস্পর বিরোধী অভিযোগ ইসিতে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বুধবার নির্বাচন চলাকালে দুটি দলের প্রতিনিধিরা আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে এসব লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। ইসির কাছে দেয়া অভিযোগে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির বিরুদ্ধে ভোটে বিভিন্ন কেন্দ্রে প্যানিক সৃষ্টি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও কেন্দ্র দখল, ভোট ডাকাতি, এজেন্টদের বের করে দেয়া, নেতাকর্মীর ওপর হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো অভিযোগ করা হয়েছে। বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। এই নির্বাচনে সকাল থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে। প্রতিদ্বন্দ্বী সমর্থকদের মধ্যে সহিংস কর্মকাণ্ডে তিনজনের প্রাণহানিও হয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে কিছু কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত করে দেয় ইসি। এদিন সকাল থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি দলের পক্ষ থেকে প্রতিপক্ষ দলের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ করে আসছিল। এরই এক পর্যায়ে উভয়দলের পক্ষ থেকে ইসির কাছে লিখিত অভিযোগও দেয়া হয়। ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কাযনির্বাহী কমিটির সদস্য এবিএম রিয়াজুল কবীর কাউছারের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল এদিন বিকেলে ইসি সচিবের কাছে লিখিত এসব অভিযোগ জমা দেন। পরে সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রামের ভোটে সকাল থেকেই বিভিন্ন কেন্দ্রে প্যানিক সৃষ্টি করা হয়েছে, যাতে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে আসতে না পারে। বিএনপির সন্ত্রাসীরা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের ছেলেকে ছুরিকাঘাত করেছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ইভিএম ভেঙে ফেলেছে ও কেন্দ্র দখল করেছে। আমবাগান এলাকায় বিএনপি সন্ত্রাসীরা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে। পাঁচলাইশ এলাকায় র্র্নিবাচনী এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে বলে তিনি বলেন। এ সময় সাংবাদিকদের তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাস-সহিংসতা না থাকলে ভোটার উপস্থিতি আরও বাড়ত। পৌর নির্বাচনে ৬০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। করোনাকালেও আরও উপস্থিতি বাড়বে বলে আশা ছিল। আমরা তো অংশগ্রহণমূলক এ নির্বাচনের চেষ্টা করেছি। তারা চেষ্টা করেছে ভোটাররা যেন না আসে। প্রায় ৪০টি ওয়ার্ডে বিএনপি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। বিকেলে আওয়ামী লীগের নেতারা নির্বাচন কমিশন সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন। অপরদিকে বিএনপির প্রতিনিধি দল দুপুরে ইসিতে হাজির হয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন ভোট ডাকাতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নিজ দলের এজেন্টদের বের করে দেয়া ভোট প্রদানে বাধা দান কেন্দ্র দখল ও ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করা হয়েছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিবের কাছে ২০টি লিখিত অভিযোগ করেন ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। পরে সাংবাদিকদের বলেন, এ নির্বাচন চূড়ান্ত পর্যায়ের তামাশা, প্রহসনের নির্বাচন। এ সরকারের সময় সুষ্ঠু নির্বাচন অচেনা হয়ে যাবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্র হত্যাকারী ঘাতক’ বলেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। বিএনপির পক্ষ থেকে ইসিতে অভিযোগ দাখিলের পর বিএনপির এই নেতা সাংবাদিকদের কাছে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেন। বলেন, দিনের ভোট রাতে হয়। এ ভোটে এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। এটা সহিংসতার নির্বাচন। এদেশে তারা শান্তিপূর্ণ ভোটের কথা বলে, তার দৃষ্টান্ত দুই তিন ঘণ্টার মধ্যে ঘটেছে। সিটি নির্বাচন এলাকায় চরম সহিংস অবস্থা বিরাজ করছে। এই সময়ে ২ জন মারা গেছে। নির্বাচনে প্রতিপক্ষ দলের সহিংস কর্মকাণ্ডে বিএনপি অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। ভোটাররা যাতে কেন্দ্রে যেতে না পারেন সেজন্য বাধা দেয়া হচ্ছে। সিইসিকে উদ্দেশ করে বলেন, এদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে হত্যাকারী ঘাতক হচ্ছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। হুকুমের আসামি এই সিইসি গণতন্ত্রের হত্যাকারী। বর্তমান সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন সুষ্ঠু নির্বাচন অচেনা হয়ে থাকবে। তিনি আরও বলেন, ভোটের চূড়ান্ত তামাশা হয়েছে। ভোটাররা যেন কেন্দ্রে যেতে না পারে সেজন্য সব ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রশাসন ও দলীয় কর্মী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। ভোটের আগে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রফতার করা হয়েছে।
×