ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জিএসপি পুনর্বহাল চেয়ে আবেদন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী ওয়াশিংটন

বাণিজ্যে আশার আলো ॥ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার

প্রকাশিত: ২২:৫৭, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

বাণিজ্যে আশার আলো ॥ যুক্তরাষ্ট্রে নতুন সরকার

এম শাহজাহান ॥ যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার আসায় বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ। দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। রফতানিতে পোশাক খাতে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালে এর মধ্যেই ইউএসটিআরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্লাস্টিক এবং কৃষিজাত পণ্যের রফতানির বিষয়ে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ, আইটি পার্ক ও সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগের জন্য প্রস্তাব দেয়া হবে। অন্যদিকে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির আকার বাড়ায় যুক্তরাষ্ট্র মুক্তবাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) করতে আগ্রহী। চুক্তির সম্ভাব্যতা নিয়ে এর মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিএসপি পুনর্বহালে চেষ্টা করা হচ্ছে। শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বা জিএসপি পাওয়া গেলে শুধু পোশাক রফতানিতে আগামী দু’বছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে বাংলাদেশের। এছাড়া প্লাস্টিকসহ অন্য পণ্যের রফতানি বাড়বে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেল থেকে এ বিষয়ে নতুন সরকারকে জানানো হয়েছে। দু’দেশের দিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে আরও কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী টিকফা ফোরামের বৈঠকেও জিএসপি পুনর্বহালে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে সরকার। এছাড়া সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগ চাওয়া হবে। রিপাবলিকান ট্রাম্প সরকারের চেয়ে ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়বে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া, কয়েকটি মুসলিম দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়াসহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেয়ায় জো বাইডেনের প্রশংসায় এখন সারাবিশ্ব। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া জো বাইডেনের কাছে দ্রুত মিয়ানমারের বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা চাওয়া হবে। দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সেইভাবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে একটি কর্মকৌশল প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বাস্তবায়ন, জাতিসংঘ ঘোষিত এসডিজিতে সফলতা, রূপকল্প ২০২১-২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্নপূরণ, পানিসম্পদ ঘিরে ১০০ বছরের ব-দ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে পাশে চায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে যুক্তরাষ্ট্র এখনও পিছিয়ে আছে। যদিও একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পোশাক কিনে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ার সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের উত্তরণের প্রেক্ষাপটে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দ্বিপাক্ষিক মুক্তবাণিজ্য চুক্তি এফটিএ এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যচুক্তি পিটিএ চুক্তি সম্পাদনের নীতি গ্রহণ করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য সম্ভাবনাময় বিভিন্ন দেশে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, জাপান, ইউরেশিয়ান ইকোনমিক কমিশনের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা হয়েছে। এছাড়া শ্রীলঙ্কা, চীন, মিয়ানমার নাইজিরিয়া, মালি, মেসিডোনিয়া, মরিসাস, জর্ডান, যুক্তরাষ্ট্র, ইরাক, লেবানন সঙ্গে বাংলাদেশের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। ভারতের সঙ্গে বৃহৎ অংশীদারিত্ব চুক্তি সিপা করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মুক্তবাণিজ্য চুক্তিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র ॥ করোনাভাইরাস মহামারী পরবর্তী সময়ে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে মুক্তবাণিজ্য চুক্তির (এফটিএ) সম্ভাবনা নিয়ে ঢাকা-ওয়াশিংটন আলোচনা শুরু হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই শুরু করা হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেব উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিভেন বিগান তিনদিনের জন্য ঢাকা সফর আসেন। ওই সময় তিনি ঢাকার একটি হোটেলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় কোভিড পরবর্তী অর্থনীতি ুদ্ধারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হলে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও বড় আকারের আলোচনা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন বিগান। দুদেশের মধ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা, যেটাকে ফ্রি ট্রেড এ্যাগ্রিমেন্ট বলে, সে ধরনের একটি আলোচনার বিষয়ে বিগান উৎসাহিত করেন। মূলত এরপরই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এফটিএর বিষয়টি আলোচনায় আসে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, যুক্তরাষ্ট্র অনেক বড় দেশ। তাদের সঙ্গে টিফা চুক্তি আছে। এ মুহূর্তে আবার এফটিএ করা হবে কিনা সেটা গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়। অর্থনীতিতে সহায়তা জোরদারের পাশাপাশি বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় গ্যাস অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পৃক্ত হওয়ার বিষয়েও ওই সময় আলোচনা করা হয়। দীর্ঘদিনের সঙ্কট দূর হবে ॥ যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৬ সালে যখন দায়িত্ব নেন সেই সময় জিএসপি পাওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। ট্রাম্প প্রশাসন তাতে সাড়া না দিয়ে বরং কারখানায় নিরাপদ কর্মপরিবেশ তৈরি ও শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয়। এরপর আর জিএসপি ইস্যুতে কখনও আলোচনা হয়নি। এর আগে ২০১২ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সময় বাংলাদেশের সকল পণ্যের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। পোশাক খাত উন্নয়নে যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসটিআরের (ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টটেটিভ) এ্যাকশন প্ল্যান ১৭টি শর্ত আরোপ করে। যদিও পোশাক রফতানিতে ২০০৪ সাল থেকে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধার বাইরে রাখা হয়। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর আন্তর্জাতিক বাজারে চরম ভাবমূর্তির সঙ্কটে পড়ে বাংলাদেশ। গত বছরের শেষ নাগাদ ইউএসটিআরের এ্যাকশন প্ল্যানের ১৭ শর্ত পূরণ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। নিরাপদ কর্ম পরিবেশ ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এখন আর তেমন কোন অভিযোগ নেই। এলডিসি দেশ হিসেবে রফতানিতে জিএসপি সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের অধিকার। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বিধান অনুসরণ না করে বাংলাদেশকে এই সুবিধার বাইরে রাখা হয়েছে। শ্রম অধিকার ইস্যুতে ভিয়েতনামের অবস্থান বাংলাদেশের নিচে হলেও সেখানকার উদ্যোক্তারা পোশাক রফতানিতে জিএসপি সুবিধা পান। একইভাবে চীন, ভারত, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো জিএসপি সুবিধায় পণ্য রফতানি করছে। শুধু বাংলাদেশকে বড় অঙ্কের শুল্ক দিয়ে পোশাক রফতানি করতে হয়। আগামী ২০২৪ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনা সঙ্কট মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এ কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। অর্থনীতির কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে দ্রুত গতিশীল করতে বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করা। এ প্রসঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) সেলের মহাপরিচালক হাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের কাছে পোশাক রফতানিতে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য বা জিএসপি সুবিধা চাওয়া হয়েছে। করোনা সঙ্কট ও এলডিসি উত্তরণে এই সুবিধায় প্রবেশ করা জরুরী হয়ে পড়ছে। একক দেশ হিসেবে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানি করে বাংলাদেশ। অথচ শ্রম ইস্যুসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে জিএসপি সুবিধা দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, জিএসপি সুবিধা পাওয়া এবং এর পেছনে যেসব যুক্তি রয়েছে তা উল্লেখ করে তা ইউএসটিআরে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেয়া হবে। ইউএসটিআরের এ্যাকশন প্ল্যানের বেশির ভাগ শর্ত ভালভাবে পূরণ করেছে বাংলাদেশ। শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন সব আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো দেশের গার্মেন্টস খাত নিয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করতে শুরু করেছে। জানা গেছে, রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ার যৌক্তিক কারণগুলো বাইডেন প্রশাসনের কাছে উপস্থাপন করবে বাংলাদেশ। এতে করে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা অর্থনৈতিক সঙ্কটগুলো একে একে দূর হবে বলে আশা করা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখছেন উদ্যোক্তারা। পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। দেশটিতে রফতানির ৯৮ শতাংশ হচ্ছে পোশাক সামগ্রী। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ বছরে ৮ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয়ে ৫১ হাজার কোটি এবং বিপরীতে আমদানি হয় ১৭ হাজার কোটি টাকার পণ্য। শুধু পোশাক রফতানির বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্রকে বছরে শুল্ককর দিতে হচ্ছে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা। বড় অঙ্কের এই বাণিজ্য প্রতিবছর বাড়ছে। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। পোশাক রফতানির ক্ষেত্রে কোন শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা পাওয়া যায় না। যদিও পোশাকের বাইরে অপ্রচলিত ৯৭ ভাগ পণ্যের ক্ষেত্রে আবার শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে রাখা হয়েছে যা, রফতানির ক্ষেত্রে কোন কাজে আসছে না। এ নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সঙ্গে দর কষাকষি চলছে গত ১৬ বছর ধরে। সংস্থাটির দোহা রাউন্ডে বিষয়টি মীমাংসার কথা বলা হলেও তার কোন সুরাহা হয়নি। অন্যদিকে, পোশাক-রফতানির ক্ষেত্রে প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়াকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। ফলে বরাবরই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে বাংলাদেশ। সমস্যাটি সমাধানে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার নির্দেশনা থাকলেও তৎকালীন ওবামা প্রশাসন এ বিষয়ে এগিয়ে আসেনি। বিদায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনও সেই ধারা বজায় রাখে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ৪ হাজার ৮৮০টি পণ্যে ১২৯টি দেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়েছে। এ দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ ৫০ রফতানিকারক দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। এছাড়া রফতানিতে বাংলাদেশের ৯৭টি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশের প্রধান রফতানি পণ্য গার্মেন্টস, টেক্সটাইল এবং নিটওয়্যার পণ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দেয়া হয়নি। ফলে ৯৭টি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেয়া হলেও তার অধিকাংশ পণ্য বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় না। অথচ গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ও নিটওয়্যার এই তিনটি পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া গেলে দেশের রফতানি আয় আরও বাড়ানো যেত। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি দেশ হিসেবে রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার। বিষয়টি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় দর কষাকষির বাইরেও সরকার বিভিন্ন ফোরামে বলে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলার এখন সবচেয়ে শক্তিশালী ফোরাম হচ্ছে টিকফা। ইতোমধ্যে এ ফোরামের ৫টি বৈঠক করেছে উভয় দেশ। টিকফা ফোরামের সবগুলো বৈঠকেই শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার ওপর জোর দিয়েছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সদস্য রাষ্ট্র ও এলডিসি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সব ধরনের শুল্ক কর সুবিধা পাওয়ার কথা। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর রফতানিতে জিএসপি বা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধার ওপর স্থগিতাদেশ দেয় মার্কিন সরকার। এর আগে ২০০৫ সালে কোটামুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, আমেরিকার কাছ থেকে শুল্ক ও কোটা সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে দর কষাকষির দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। এটাতে এখনও দুর্বল অবস্থানে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, একতরফাভাবে বাংলাদেশকে কিছু দেবে না যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে দর কষাকষি করে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার দাবি আদায় করতে হবে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, জিএসপির আওতায় বাংলাদেশর মোট রফতানির মাত্র ৩ শতাংশ যায় আমেরিকায়। এ ছাড়া, বাংলাদেশের প্রধান রফতানিযোগ্য পণ্য পোশাক ও টেক্সটাইল জিএসপির তালিকায় নেই। ফলে নতুন সরকারের কাছে বাংলাদেশের দাবি পোশাক পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা আদায়।
×