ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি আগামী মাসে ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি আগামী মাসে ॥ অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী মাসেই এলডিসি থেকে বেরিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, যে তিন ক্রাইটেরিয়ায় জাতিসংঘ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা দেয় তার সব পূরণ করা হয়েছে। করোনায় সামষ্টিক অর্থনীতিতে সাময়িক অসুবিধা তৈরি করলেও সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে এখন আবার সবাই যে যার কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। এ অবস্থায় দারিদ্র্য বাড়ার কোন কারণ নেই। যেসব সংগঠন বলছে করোনায় দারিদ্র্য বেড়েছে তা সঠিক নয়, অযৌক্তিক। সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালা অনুমোদনসহ সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বুধবার বিকেলে অর্থনৈতিক ও সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের সিডিপির ত্রিবার্ষিক সভায় বাংলাদেশকে চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদার সুপারিশ করা হবে। স্বল্পোন্নত বা এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী পরিকল্পনায় দ্রুত দারিদ্র্যের হার কমেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে মানুষের। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিশ্বের প্রথম কয়েকটি দেশের মধ্যে এখন বাংলাদেশের নাম। অর্থমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে অর্থনীতিতে কিছুটা চাপ তৈরি হলেও একটি মানুষও কিন্তু না খেয়ে থাকছে না। বিনামূল্যে খাদ্য ও নগদ সহায়তা দেয়ায় দারিদ্র্য বাড়েনি। বরং প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের ফলে উৎপাদনমুখী শিল্প খাতে আবার চাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। এছাড়া প্যাকেজের আওতায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সম্পৃক্ত করায় সবাই আবার সুবিধা মতো কাজে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এ অবস্থায় দারিদ্র্য বাড়তে পারে না। দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণা করা একটি বেসরকারী সংস্থার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের বিশ্লেষণ সঠিক নয়, মনগড়া। দেশের কেউ এখন আর খারাপ অবস্থায় নেই। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দারিদ্র্যরা সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রয়েছেন। গৃহহীনদের ঘর উপহার দেয়া হচ্ছে। খাদ্য, চিকিৎসা সহায়তা, বিধবাভাতা, বয়স্কভাতাসহ নানা রকম কর্মসূচী চালু রয়েছে। এ কারণে দারিদ্র্যের হার কমছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশে দ্রুত দারিদ্র্যের হার কমায় বিভিন্ন সময় প্রশংসা করেছে। আর এ কারণে আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সেটা তাদের সার্টিফিকেট, তাদেরই তথ্য। স্বর্ণ নীতিমালা বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা এটা পাস করেছি। সংশোধনীতে তারা বলেছে যে, পরিশোধিত না এনে অনেক দেশেই অপরিশোধিত স্বর্ণ এনে পরিশোধিত করে। পরিশোধনের জন্য তারা আমাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছে, এগুলো পরিশোধন করার জন্য যে প্রয়োজনীয় ইক্যুইপমেন্ট লাগবে সেগুলো বসানোর জন্য অনুমোদন নিয়েছে। এগুলো খারাপ কিছু না, ভালই। করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, নির্ধারিত সময় এলেই ভ্যাকসিন নিবেন তিনি। আমি একা নিলেই তো হবে না। আমি এখনও সবার আগে টিকা নিতে চাই। যেদিন নেব সেদিন আমি সবার আগে থাকব এটা আশ্বস্ত করতে পারি। এখন ডেটসহ (তারিখ) অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। সমাজের বিভিন্ন এলাকা ধরে আমরা এগুলো (টিকা) বিতরণ করব, সেভাবেই এগোচ্ছে। সেজন্য বিভিন্ন ক্রাইটেরিয়া এবং বিভিন্ন বয়স বিবেচনায় নিয়ে এগুলো করা হবে। আমার জন্য নির্ধারিত সময় কখন আসবে আমি এখনও জানি না, যেদিন আসবে আমি নিশ্চয়ই সেদিন ভ্যাকসিন নেব। ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন ॥ সংশোধিত স্বর্ণ নীতিমালার অনুমোদনসহ ১ হাজার ১৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে সাত ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। অর্থমন্ত্রী জানান, প্রথমে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে দুটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে আমরা একটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছি একটি প্রস্তাব ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে ৮ প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে ৭ প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে খরচ হবে ১১৪২ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ টাকা। মোট অর্থায়নের মধ্যে জিওবি খাত থেকে পাওয়া যাবে ১১১০ কোটি ৭৭ লাখ ৩৬ হাজার ৪০১ টাকা এবং বিশ্বব্যাংক ও জাইকা থেকে ঋণ হিসেবে পাওয়া যাবে ৩১ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৭ টাকা। প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের ৫টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দুটি এবং বিদ্যুত বিভাগের ১টি প্রস্তাবনা ছিল। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আওতায় হাতিরঝিল-রামপুরা সেতু-বনশ্রী-শেখেরজায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা মহাসড়ক (চিটাগাং রোড মোড় এবং তারাবো লিঙ্ক মহাসড়কসহ) পিপিপি ভিত্তিতে ৪-লেনে উন্নীতকরণ কনসোর্টিয়াম চায়না রোড এ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশনের সঙ্গে পিপিপি চুক্তি বাস্তবায়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বর্ণ নীতিমালা (২০১৮ সংশোধন করে প্রস্তাবিত ‘স্বর্ণ নীতিমালা (সংশোধিত)’ নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ২৩ হাজার ৬৫০টি এসপিসি পোল বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড নিকট থেকে ৩২ কোটি ৩৭ লাখ ৮৬ হাজার ৯০০ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায় গণপূর্ত অধিদফতর কর্তৃক ‘ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশ সদস্যদের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ’ প্রকল্পের আওতায় ডেমরা পুলিশ লাইন্স এলাকায় ২০তলা আবাসিক ভবন নির্মাণের পূর্ত কাজ ৮০ কোটি ৩৫ লাখ ৩২ হাজার ২৯৭ টাকায় ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক শহর এলাকায় স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উন্নত জীবন ব্যবস্থা (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের পরামর্শক সেবা নিকট থেকে ক্রয়ের ভেরিয়েশন বাবদ অতিরিক্ত ১৩ কোটি ৪ লাখ ৩ হাজার ৭২৯ টাকার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অধীনে কয়েকটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
×