ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

জয়ের পথে নৌকা

প্রকাশিত: ২২:৪৯, ২৮ জানুয়ারি ২০২১

জয়ের পথে নৌকা

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের রেজাউল করিম চৌধুরী বেসরকারীভাবে চট্টগ্রামের নতুন মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচন শেষে রাত ১টা নাগাদ ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে ৬২২টির ফল পাওয়া যায়। এর মধ্যে রেজাউল পেয়েছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৫১২ ভোট । তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকের ডাঃ শাহাদাত হোসেন পেয়েছেন ৪২ হাজার ৫৯৪ ভোট। দলীয় প্রতীক নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে প্রার্থীদের এটাই প্রথম নির্বাচন। নৌকা ও ধানের শীষের প্রতীকের মর্যাদার এ লড়াইয়ে আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী এ কর্পোরেশনের ষষ্ঠ মেয়র হলেন। এদিকে, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট চলাকালে সাতটি কেন্দ্রে সহিংসতা, বিচ্ছিন্ন হামলা, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঘটনাস্থলেই একজন প্রাণ হারান। পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের হিসেবে অপর ঘটনায় ভাইয়ের হাতে ভাইসহ দুজন প্রাণ হারিয়েছে। এ দুজনের মধ্যে একজনের বিষয়টি নিশ্চিত। আরেকজনের বিষয়টি চমেক সূত্রে পাওয়া। তবে অন্য কোন সূত্রে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একটি ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত একজন কাউন্সিলর প্রার্থী সহিংসতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। এ নির্বাচনে মোট ৭৩৫ কেন্দ্রের মধ্যে একটি ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এদিকে, মেয়র পদে অপর ৬ প্রার্থীর মধ্যে একজন ভোট বর্জন করেছেন। নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের ডাঃ শাহাদাত হোসেন। তিনি ভোট বর্জন করেননি, ভোট শেষে নির্বাচন প্রত্যাখ্যানও করেননি। তবে ভোটে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন। এক কথায় বলেছেন, প্রহসনের ভোট হয়েছে। উল্লেখ্য, চসিকের মেয়র পদে এটাই ছিল দলীয় প্রতীকে প্রথম ভোট। সকাল থেকে ভোট চলাকালে দুপুরের আগ পর্যন্ত কয়েকটি ওয়ার্ডের ৭ কেন্দ্রে বিক্ষিপ্ত নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় একজনের প্রাণহানি ও কমপক্ষে ৩০ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে একটি কেন্দ্রের বাইরে সহিংস ঘটনায় একজন ঘটনাস্থলে ও একজন আহতাবস্থায় চমেক হাসপাতালে মারা গেছে। সেটা কোন সূত্রমতে, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের। অন্য সূত্র বলেছে, দুই ভাই প্রতিদ্বন্দ্বী দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক ছিল বিধায় এ ঘটনা। এটি ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আধঘণ্টা আগের। এটি নির্বাচনী সহিংসতা না পারিবারিক ঘটনার জের তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, এ নির্বাচন ছাড়া চসিকের ইতিপূর্বেকার নির্বাচনের দিন কোন প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এসব ঘটনা বাদে বহুল প্রতীক্ষার এ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। মূলত বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে সহিংসতাসহ গ-গোলের ঘটনা হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীদের কারণে ৪১ ওয়ার্ডের বিভিন্ন কেন্দ্রে ছিল উত্তাপ। ভোটাধিকার প্রয়োগের হার অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের সঙ্গে জড়িত বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে মতব্যক্ত করা হয়েছে। বুধবারের এ নির্বাচনে ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে দুটিতে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচন হয়নি। একটিতে একজন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যটিতে নির্বাচনের আগেই এক প্রার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে, সহিংসতার ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। মূলত সহিংসতার এসব ঘটনা ঘটেছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকের মধ্যে। সকাল ৮টা থেকে প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। পথিমধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইভিএম ভাংচুরের ঘটনায় দুটি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়। পাথরঘাটা ওয়ার্ডের বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল হোসেন বালিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলে। ৪টার পর পরই শুরু হয় গণনা। এতে এ নির্বাচনের প্রধান আকর্ষণ দলীয় প্রতীকের মেয়র পদ। এ পদে ৭ প্রার্থী থাকলেও একজন বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন এবং পুনর্নির্বাচন দাবি করেন। তিনি ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের জান্নাতুল ইসলাম। মেয়র পদে প্রার্থী ছিলেন হাতপাখা প্রতীকে। বিকেল ৪টায় সবকটি ওয়ার্ডে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হওয়ার পর চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেসিয়ামে স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ফল আসতে থাকে। এ সময় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের সমর্থকের ভিড় জমতে থাকে। রাত যত বেড়ে যায় ভিড়ও তত বাড়তে থাকে। রিটার্নিং অফিসার কিছু সময় পর পর একেক কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করতে থাকেন। রাত ১টা পর্যন্ত প্রাপ্ত বেসরকারী ফলের প্রাথমিক চিত্রে দেখা যায়, মেয়র পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বড় ধরনের ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন। পূর্বের ঘোষণা অনুযায়ী তিনি পুরো সময় নির্বাচনী লড়াইয়ে ছিলেন। ভোটগ্রহণ শেষে ডাঃ শাহাদাত হোসেন দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করে বলেন, আগে ব্যালটে জালিয়াতি হতো। এখন ইভিএমে জালিয়াতি হয়েছে। এ সরকারের আমলে ভোটের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই। এর আগে নির্বাচন চলাকালে দুপুরের দিকে রিটার্নিং অফিসারের কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয় এবারের চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ট্রাডিশনাল জালিয়াতির ভোট চলছে। পক্ষান্তরে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ নির্বাচনে বিএনপি বিভিন্ন কেন্দ্রে প্যানিক সৃষ্টি করেছে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত প্রায় দিনব্যাপী ভোট চলাকালীন সময়ের চিত্রে দেখা যায়, কয়েকটি কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, হামলা, ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং একজন নিহত হওয়ার ঘটনা বাদ দিলে শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) নির্বাচন। মেয়র পদের ভোটে পরিবেশ মোটামুটি সুষ্ঠু থাকলেও উত্তাপ ছড়িয়েছে কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা। প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ৩০ জন। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই বড় ধরনের অপ্রীতিকর ছাড়াই ভোটগ্রহণ হলেও ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সব কেন্দ্র থেকেই ধানের শীষ প্রতীকের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেনের। অপরদিকে, আওয়ামী লীগ প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফল যা-ই হোক মেনে নেবেন। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভোট গণনা চলছিল। চসিক নির্বাচনে একযোগে ৭৩৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। শুরুতেই প্রতিটি কেন্দ্রে দেখা যায় দুই মেয়র প্রার্থী এবং কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের ভিড়। পরিবেশও শান্তিপূর্ণ ছিল। সকাল ৯টার পর থেকে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে থাকে। একইসঙ্গে আসতে থাকে কিছু কেন্দ্রে অপ্রীতিকর ঘটনার খবরও। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একটি কেন্দ্রে গোলাগুলি এবং ককটেল বিস্ফোরণও ঘটে। আরেকটি কেন্দ্রে ছুরিকাঘাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গোলাগুলিতে নিহত ১ ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমবাগান এলাকায় ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুল ভোট কেন্দ্রে ঘটে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুর রহমান অনুসারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ। এতে গুলিবিদ্ধ হন আলাউদ্দিন নামের একজন। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার বুড়িচং এলাকায়। গুলিবিদ্ধ আলাউদ্দিনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই কেন্দ্রে বেশ কিছুক্ষণ ধরে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইট পাটকেল ছোড়াছড়ি হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের প্রায় ৮ জন আহত হন। বিক্ষুব্ধরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে একটি মোটর বাইক জ¦ালিয়ে দেয়। এছাড়া লালখান বাজার চানমারি রোডের শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষ হয়। বেলা পৌনে ৯টার দিকে কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলালের সমর্থকদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের এ সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ হয়। তখন হকিস্টিক এবং লাঠিসোটার ব্যবহারও দেখা যায়। সংঘর্ষে কাউন্সিলর প্রার্থী বেলাল নিজেও আহত হন। বিজিবি ও পুলিশ দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভাইয়ের হাতে ভাইসহ খুন ২ ॥ মহানগরীর পাহাড়তলী বার কোয়ার্টার এলাকায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটে নৃশংস একটি হত্যার ঘটনা। সেখানে ভাইয়ের হাতে খুন হন আরেক ভাই। তবে ঘটনাটি নির্বাচনী সহিংসতা কিনা তা পরিষ্কার নয়। নিহত মোঃ নিজামউদ্দিন এবং তার ভাই কামরুল ইসলাম ছিলেন সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক। বড় ভাই কামরুল খুন করে ছোট ভাই নিজামকে। এ ঘটনায় আহত হয়ে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরেক জনের মৃত্যু হয়েছে রাতে। পুলিশ বলেছে, দুই ভাইয়ের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল, যার জের ধরে এসব হত্যাকা-। পরিবারের সদস্যরাও বলেছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যার ঘটনা। এ দুই ভাইয়ের মধ্যে নিজাম ছিলেন সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবের আহমেদের সমর্থক। আর কামরুল আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নুরুল আমিনের সমর্থক। নিহত নিজাম উদ্দিনের মা জিন্নাত আরা বেগমের বিলাপ করা কান্নায় ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। এই মা নিজেই বলেছেন, তার ছোট ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তার এ পুত্রের স্ত্রী বোবা। তাদের দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। এখন এই দুটি সন্তান নিয়ে বোবা মেয়েটি কোথায় যাবে। তিনি এই হত্যাকা-ের জন্য তার বড় ছেলের ফাঁসি দাবি করেন। উপ পুলিশ কমিশনার ফারুকুল ইসলাম সাংবাদিকদের খুনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, এটি নির্বাচনী সহিংতা নাকি দুই ভাইয়ের একান্ত পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইভিএম ভাংচুর, কাউন্সিলর প্রার্থী গ্রেফতার ॥ চসিক নির্বাচনে পাথরঘাটা ওয়ার্ডের একটি ভোট কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে ঘটে হামলার ঘটনা। পাথরঘাটা বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মোৎ ইসমাইল বালির কয়েক শ’ সমর্থক আচমকা হামলা চালিয়ে ভাংচুর শুরু করে। আক্রমণকারীরা ভোট কেন্দ্রের তিনটি ইভিএম ভেঙ্গে ফেলে। এছাড়া কেন্দ্রের বাইরে তিনটি বাসসহ কিছু গাড়িও ভাংচুর করা হয়। পুলিশ দ্রুত অকুস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। হামলার কারণে ওই কেন্দ্রে কিছুক্ষণের জন্য ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। চসিকের এ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনুপ খাস্তগীর এবং বিএনপি সমর্থিত মোঃ ইসমাইল বালি। ঘটনার পর পুলিশ ইসমাইল বালিকে গ্রেফতার করে। দুই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত ॥ হামলা এবং ইভিএম ভাংচুরের কারণে পাথরঘাটা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই কেন্দ্রে হামলাকারীরা চারটি ইভিএম মেশিনের মধ্যে তিনটিই ভেঙ্গে ফেলেছে। এ অবস্থায় ভোটগ্রহণ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এছাড়া চসিক নির্বাচনে যে সকল স্থানে গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো হচ্ছে সরাইপাড়া, আমবাগান, দক্ষিণ কাট্টলী, পাহাড়তলী, পাথরঘাটা ও আসাদগঞ্জ। ভোটার উপস্থিত কাক্সিক্ষত পর্যায়ের না হলেও বেশিরভাগ কেন্দ্রের পরিবেশ ছিল স্বাভাবিক। শান্তিপূর্ণ ভোট- বললেন রেজাউল ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী বুধবার সকাল পৌনে ৯টার দিকে বহদ্দারহাটের এখলাসুর রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার ভোট দেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমানসহ নেতারা। সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি বলেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ হচ্ছে। মানুষ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছে। আশা করি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেরই জয় হবে। তবে ফল যাই হোক না কেন মেনে নেব। বিভিন্ন স্থানে ভোট কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। অভিযোগ করা বিএনপির পুরনো অভ্যাস। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল মহানগরীর আন্দরকিল্লায় অবস্থিত এমইএস উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। এ সময় তিনি বলেন, ইভিএমে ভোট হচ্ছে, তাই ভোট ছিনিয়ে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সকাল ৮টার দিকে কদম মোবারক এমআই উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেন। আর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি সকাল ৯টায় তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন লালখান বাজার শহীদ নগর সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে। তারা সকলেই বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপির এজেন্ট বের করে দেয়া হয়েছে- বললেন শাহাদাত ॥ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন সকাল ১০টার দিকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন বাকলিয়ায় বি.এড কলেজ কেন্দ্রে। ভোট দেয়ার পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের পরিবেশ বলতে যা বোঝায় তা নষ্ট করেছে আওয়ামী লীগ। ভোট দিতে আসা নারীদের পর্যন্ত মারধর করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির যে ভোটাররা ভোট দিতে এসেছিল তাদের কেন্দ্রে ঢুকতে দেয়া হয়নি। নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত। এ অনিয়ম সারাবিশ^কে দেখিয়ে দেব। প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে বিএনপি- অভিযোগ আওয়ামী লীগের ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি নানাভাবে চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেছেন নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল। তিনি বলেন, সকাল থেকে অনেক কেন্দ্র ঘুরে দেখেছি। ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তাদের ভোট দিচ্ছেন। কিন্তু বিএনপির কর্মীরা কিছু কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য। মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর নির্বাচনী কার্যালয়ে দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বিএনপি প্রতিটি নির্বাচনেই এমন প্রোপাগান্ডা চালায়। কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ঘটলেও কোথাও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ বা অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, আমরা সব সময়ই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনে বিশ^াসী। কিন্তু বিএনপিই বরং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে থাকে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটার ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৯২ হাজার ৩৩ এবং নারী ভোটার ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬৭৩ জন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মেয়র পদে সাতজন, কাউন্সিলর পদে ১৭১ এবং নারী কাউন্সিলর পদে ৯৭ জন। বিদ্রোহী প্রার্থীদের যে ৮ জন বিজয়ী ॥ আওয়ামী লীগের সমর্থন বঞ্চিত হয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন ১২ জন। এদের মধ্যে গভীর রাত পর্যন্ত প্রাপ্ত স্থানীয় সূত্রে আটজন বিজয়ী হয়েছেন। এরা হলেন ১নং দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডে তৌফিক আহমেদ চৌধুরী, ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে শাহেদ ইকবাল বাবু, ৩নং পাঁচলাইশ ওয়ার্ডে সফিকুল ইসলাম, ৪নং চান্দগাঁও ওয়ার্ডে এসরারুল হক, ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জহুরুল আলম জসিম, ৩৩ ফিরিঙ্গীবাজার ওয়ার্ডে হাসান মুরাদ বিপ্লব, ৩৬নং গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে মোরশেদ আলী এবং ২৬নং উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে মোঃ ইলিয়াস। অপরদিকে, অবশিষ্ট ৩১ ওয়ার্ডেও গভীর রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সমর্থিত এবং মনোনয়ন বঞ্চিতদের বিজয়ের খবর আসছিল। একটি ওয়ার্ডে আগেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। একটি ওয়ার্ডে প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি আলকরণ ওয়ার্ডে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
×