ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুরে ভুয়া জন্মসনদ প্রতারণায় ১১ ছাত্রীর স্কুলে ভর্তি বাতিল

প্রকাশিত: ১৮:১৯, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

জামালপুরে ভুয়া জন্মসনদ প্রতারণায় ১১ ছাত্রীর স্কুলে ভর্তি বাতিল

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ জামালপুর জেলার বকশিগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে থাকা উদ্যোক্তা মনিকা পারভীনের বিরুদ্ধে ভূয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদানের কারনে বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি ইচ্ছুক ১১ ছাত্রীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে। বকশীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের জন্ম নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা উদ্যোক্তা মনিকা পারভীন প্রতারনামূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে ১১ জন শিক্ষার্থীকে ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করেন। ওই জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে বকশীগঞ্জের সনামধন্য উলফাতুন্নেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লটারিতে বিজয়ী হলেও ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদের কারণে ভর্তি হতে পারেনি ১১ জন প্রতারিত শিক্ষার্থী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তির কোঠায় ৬০ জন লটারিতে ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় ১১ জন ছাত্রীর জন্ম নিবন্ধন সনদে অনিয়ম ধরা পরে। শিক্ষার্থীদের নামে ওই সনদে ছয়জন ছাত্রীর জন্ম নিবন্ধনে ছেলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। নিবন্ধনে ইফখায়রুন্নাহারের স্থলে শারমিনা আক্তার সাথী, ইশফা খাতুনের স্থলে আতিকুল ইসলাম, ইসরাত জাহান রিপার স্থলে তনুরানী সরকার, ইভামনির স্থলে লুৎফর রহমান বাবর, সুচিত্রা সাহার স্থলে লামিয়া ইসলাম রোদ্র, সিথি রানী মোদকের স্থলে রায়হান মিয়া, লামিয়া খাতুন বুশরার স্থলে সোহাগ মিয়া, নূরজাহানের স্থলে আরিফা পারভীন বিথি, নুসরাত জাহান সিথিলার স্থলে রিপা আক্তার, অর্পিতা সাহার স্থলে জগন্নাথ চৌধুরী ও ফেরদৌসী জান্নাত স্মৃতি এর স্থলে জিতু নামে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়েছে। সকল শিক্ষার্থী অভিভাবকের অভিযোগ, জন্ম নিবন্ধনে জাল-জালিয়াতি করেছে বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা উদ্যোক্তা মনিকা পারভীন। মনিকা উদ্যোক্তার দায়িত্বে থেকে এসব অনিয়মের মাধ্যমে কোমলমতি ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ শিক্ষা জীবনে বাধা হয়েছে। অভিযোগে জানাগেছে, মনিকা পারভীন জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স বাড়ানো-কমানোর মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করছে। মনিকা পারভীনের দেওয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রসঙ্গে বকশীগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এলবার্ট মিয়ার নাম, স্বাক্ষর ও সিল মোহর যুক্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুজ্জামান মতিনের স্বাক্ষরও রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রী ও অভিভাবকেরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে প্রতিকার চেয়েছেন। অপরদিকে মনিকা পারভীন ছাত্রী অভিভাবকদের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও এখন তিনি অস্বীকার করছেন। এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এলবার্ট মিয়াকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমার তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মনিকা পারভীন নিয়ম অনুযায়ী আমার কাছ থেকে সব সময়ই জন্ম নিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর নেয়, এতে আমার দোষের কি? কিন্তু তথ্যসেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা মনিকা পারভীন আমার সরলতার সুযোগে এভাবে আমার সিল, স্বাক্ষরের অপব্যবহার করেছে তা সত্যি দু:খজনক। বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুন মুন জাহান লিজা জানিয়েছেন বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বকশীগঞ্জ উলফাতুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আতাউর রহমান বলেন, ভুলে ভরা জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যের জন্য আমার প্রতিষ্ঠানে লটারিতে বিজয়ী হয়েও ১১ জন ছাত্রী ভর্তি হতে পারেনি, বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। বিষয়টির দ্রুত সমাধানও হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
×