ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সবার ওপরে সি আর সেভেন

প্রকাশিত: ০০:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

সবার ওপরে সি আর সেভেন

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও তেতে উঠছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সময়ের অন্যতম সেরা এই সুপারস্টার গড়ে চলেছেন একের পর এক গৌরবময় রেকর্ড। ঠিক এক সপ্তাহ আগে বর্ণময় ক্যারিয়ারেও আরও একটি গৌরবজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছেন পাঁচবারের ফিফা সেরা তারকা। পর্তুগাল অধিনায়ক এবার বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফুটবল ইতিহাসের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড গড়েছেন। ২০ জানুয়ারি ইতালিয়ান সুপার কাপের ফাইনালে নেপোলির বিরুদ্ধে এক গোল করে গৌরবময় রেকর্ডটি গড়েছেন রোনাল্ডো। রেকর্ড গড়ার ম্যাচে নেপোলিকে ২-০ গোলে হারিয়ে সুপার কাপের ট্রফি জিতেছে জুভেন্টাস। তুরিনের ওল্ডলেডিরে হয়ে অপর গোলটি করেন স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড আলভারো মোরাটা। পুরো ম্যাচে চোখ ধাঁধানো পারফর্মেন্স প্রদর্শন করে ম্যাচ সেরা হয়েছেন সি আর সেভেন। যে কারণে বিশ্বরেকর্ড গড়ার ম্যাচটি স্মরণীয় করতে পেরেছেন ৩৫ বছর বয়সী রোনাল্ডো। ইতালির রেগিও এমিলিয়ার মাপেই স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৬৪ মিনিটে রেকর্ড গড়া গোলটি করেন রোনাল্ডো। এ সময় কর্নার থেকে আসা বলে অনেকটা ফাঁকায় থেকে লক্ষ্যভেদ করেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। এটি মৌসুমে রোনাল্ডোর ২০ নম্বর গোল। গোলটি করে পেশাদার ক্যারিয়ারে ৭৬০ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন রোনাল্ডো। যা ফুটবল ইতিহাসে যে কোন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ গোল। এ তালিকায় তিনি পেছনে ফেলেছেন সাবেক অস্ট্রিয়ান ফুটবলার জোসেফ বিকানকে। বিশ^ ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা এ বিষয়ে অফিসিয়াল রেকর্ড না রাখলেও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতিতে জানা গেছে, অস্ট্রিয়া ও তৎকালীন চেকোসেøাভাকিয়ার হয়ে খেলা স্ট্রাইকার বিকানের থেকে রোনাল্ডো বেশি গোল করেছেন। বিকান, সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ব্রাজিলের পেলে ও রোমারিও ক্যারিয়ারে এক হাজারেরও বেশি গোল করলেও তাদের সব গোল পেশাদার ফুটবলে হয়নি। এর মধ্যে অনেক গোলই অনানুষ্ঠানিক ও প্রীতি ম্যাচে হয়েছে। যে কারণে পেশাদার ফুটবলে গোলের হিসেবে রোনাল্ডোকেই এগিয়ে রাখা হচ্ছে। রোনাল্ডো পেশাদার ক্যারিয়ারে পর্তুগাল জাতীয় দল ছাড়াও চারটি শীর্ষ লীগে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। এরমধ্যে তিনি পর্তুগালের হয়ে সর্বোচ্চ ১০২ গোল করেছেন। এছাড়া ক্লাব ফুটবলে পর্তুগালের স্পোর্টিং লিসবনের হয়ে ৫ গোল, ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে ১১৮ গোল, স্প্যানিশ পরাশক্তি রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৪৫০ গোল ও জুভেন্টাসের হয়ে এখন পর্যন্ত করেছেন ৮৫ গোল। তবে রোনাল্ডোর রেকর্ডটি আসলেই হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে মতভেদও আছে। স্পোর্টস সকার স্ট্যাটিকটিস ফাউন্ডেশন (আরএসএসএসএফ) নামের এক ফুটবলীয় পরিসংখ্যান বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুসারে (শীর্ষ পর্যায়ে না খেলা ফুটবলারদের বাদ দিয়ে) জোসেফ বিকান এখনও সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলের মালিক। ৫৩০ ম্যাচের ফুটবল ক্যারিয়ারে বিকানের গোলসংখ্যা ৮০৫টি। এরপর ব্রাজিলের সাবেক ফুটবলার রোমারিওর গোল ৭৭২টি ও তারই স্বদেশী কিংবদন্তি পেলের গোলসংখ্যা ৭৬৭টি। ২০০১ সালে মারা যাওয়া বিকান ১৯৩১ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যবর্তী সময়টা ক্লাব ক্যারিয়ারে র‌্যাপিড ভিয়েনা এবং সøাভিয়া প্রাগের হয়ে খেলেছেন। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তিনি অস্ট্রিয়া ও চেকোসেøাভাকিয়ার জার্সিতে খেলেছেন। কিন্তু তার ৮০৫টি গোলের মধ্যে ২৭টি গোল ছিল র‌্যাপিড ভিয়েনার রিজার্ভ ও অ্যামেচার দলের হয়ে। কিছু ছিল আনঅফিশিয়াল আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ওই গোলগুলো বাদ দিলে বিকানের মোট গোলসংখ্যা দাঁড়ায় ৪৯৫ ম্যাচে ৭৫৯টিতে। এই হিসেবেই রোনাল্ডোকে এখন সর্বোচ্চ গোলদাতা বলা হচ্ছে। তবে পেশাদার ক্যারিয়ারের হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংবাদমাধ্যম বলছে, সর্বোচ্চ গোলের মালিক এখন রোনাল্ডো। সুদর্শন সুপারস্টার রেকর্ড গড়ায় জুভেন্টাসের শিরোপা জয় অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে! শুধু তাই নয়, বর্তমানে খেলে যাওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে প্রথম ও একমাত্র হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ‘১০০’ গোল করার অনন্য কীর্তি গড়েছেন রোনাল্ডো। এখন যারা খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রোনাল্ডোর পর তৃতীয় স্থানে আছেন ভারতীয় অধিনায়ক সুনিল ছেত্রী। জাতীয় দলের হয়ে তার গোলসংখ্যা ৭২টি। ১৪২ ম্যাচে ৭১ গোল করে এর পরের অবস্থানে আছেন রোনাল্ডোর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটা তাই হাতের মধ্যেই রোনাল্ডোর। বিষয়টি তিনিও বুঝতে পারছেন। তাইতো এ বিষয়ে জানতে চাইলে পর্তুগাল অধিনায়ক সোজাসাপ্টা বলেছেন, ‘সব রেকর্ডই এক সময় ভাঙবে। আর রেকর্ডগুলো আমিই ভাঙব।’ অর্থাৎ জাতীয় দলের হয়ে রোনাল্ডো নিজেকে এমন জায়গায় নিয়ে যাচ্ছেন যেখানে দু’চোখ মেলে তাকানোর দুঃসাহস আপাতত কারও নেই! বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো যেন আরও অপ্রতিরোধ্য, দুর্বার হয়ে উঠছেন। পর্তুগাল অধিনায়কের বর্তমান বয়স ৩৫ বছর। অথচ মাঠের লড়াইয়ে তাকে দেখে মনে হয় টগবগে যুবা। তারকা এই ফরোয়ার্ডের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, ৩০ বছরের পর থেকে তিনি আরও বেশি দুর্বার, অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাতে সুইডেনের সোলনার ফ্রেন্ডস এ্যারানায় তেমনই অবিস্মরণীয় বিশ্বরেকর্ড গড়েন। ইউরোপের প্রথম ও বিশ্বের মাত্র দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ১০০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সি আর সেভেন। উয়েফা নেশন্স কাপ ফুটবলে এ থ্রি গ্রুপের ম্যাচে স্বাগতিক সুইডেনের বিরুদ্ধে ৪৫ মিনিটে ফ্রিকিকে লক্ষ্যভেদ করে গৌরবময় মাইলফলক স্পর্শ করেন সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদ সুপারস্টার। ২০০৩ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয় রোনাল্ডোর। এরপর ২০০৪ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে গ্রীসের কাছে পর্তুগালের ২-১ গোলের হারের ম্যাচে ক্যারিয়ারের প্রথম গোল করেন। গোলের সেঞ্চুরি করার পথে রোনাল্ডো আন্তর্জাতিক প্রীত ম্যাচে ১৭, বিশ্বকাপে ৭, ইউরো চ্যাম্পিয়ণশিপে ৭, বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৩০, ইউরো বাছাইপর্বে ৩১, উয়েফা নেশন্স কাপে ৫ ও ফিফা কনফেডারেশন্স কাপে ২ গোল করেছেন। এই পথে পর্তুগাল অধিনায়ক লিথুনিয়া ও সুইডেনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ৭টি করে গোল করেছেন। এছাড়া এ্যানডোরা, আর্মেনিয়া ও লাটভিয়ার বিরুদ্ধে করেছেন ৫টি করে গোল। এস্তোনিয়া, ফারো আইল্যান্ড, হাঙ্গেরি, লুক্সেমবার্গ ও হল্যান্ডের বিরুদ্ধে করেছেন ৪টি করে গোল। ৩টি করে গোল করেছেন বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নর্দান আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া ও স্পেনের বিরুদ্ধে। আজারবাইজান, বসনিয়া এ্যান্ড হার্জেগোভিনা, ক্যামেরুন, সাইপ্রাস, চেক প্রজাতন্ত্র, মিশর, কাজাখাস্তান, সৌদি আরবের বিরুদ্ধে করেছেন ২টি করে গোল। আর আর্জেন্টিনা, ক্রোয়েশিয়া, ইকুয়েডর, ফিনল্যান্ড, ঘানা, গ্রিস, আইসল্যান্ড, ইরান, মরক্কো, নিউজিল্যান্ড, উত্তর কোরিয়া, পানামা, পোল্যান্ড, সার্বিয়া, সেøাভাকিয়া, ইউক্রেন ও ওয়েলসের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভেদ করেছেন ১টি করে গোল।
×