ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বুড়ো জিমির অনন্য কীর্তি

প্রকাশিত: ০০:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

বুড়ো জিমির অনন্য কীর্তি

বয়স হলে দলে টিকে থাকার জন্য পারফর্ম করতে হবে, ক্রিকেটের বাইরে দ্বিতীয় কোন সূত্র নেই। সে আপনি যত বড় গ্রেটই হন না কেন। শেষ বেলায় শচীন টেন্ডুলকরের মতো ব্যাটিং-ঈশ্বরকে নিয়েও কথা উঠেছে, কথা উঠেছে মাইকেল ক্লার্ক, ইউনুস খান, জহির খান, বীরেন্দর শেবাগদের নিয়ে। স্পিনার কিংবা ব্যাটসম্যানরা তবু মেধা আর অভিজ্ঞতা দিয়ে তাল মেলানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পেসারদের বেলায় কাজটা কেবল কঠিনই নয়, ভীষণ কঠিন। কারণ ফিট না থাকলে কেবল অভিজ্ঞতা দিয়ে একজন বর্ষীয়ান ফাস্ট বোলারের পক্ষে তুমুল প্রতিদ্বন্দিতার এই যুগে টিকে থাকা অসম্ভব। সেই অসম্ভব কাজটাকে অনায়াসে সম্ভব করে যাচ্ছেন জেমস এ্যান্ডারসন। গলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে তার বোলিং বিশ্লেষণ- ২৯-১৩-৪০-৬। সর্বোপরি বিশ্ব ক্রিকেটে ৩৮ বা তার বেশি বয়সী পেসার হিসেবে গত ৭০ বছরে সেরা বোলিংয়ের অনন্য নজির এটি। আজ বুধবার জিমির বয়স হচ্ছে ৩৮ বছর ১৮১ দিন। এশিয়ার মাটিতে এ্যান্ডারসনের চেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেট পাননি আর কোন ফাস্ট বোলার। গলে পাঁচ শিকারের দিনে জিমির বয়স ছিল ৩৮ বছর ১৭৭ দিন। এর আগে ফাস্ট বোলারদের মধ্যে এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি বয়সে ৫ উইকেটের রেকর্ড ছিল নিউজিল্যান্ড কিংবদন্তি স্যার রিচার্ড হ্যাডলির; সেটি ৩৩ বছর আগে, ১৯৮৮–১৯৮৯ মৌসুমে মুম্বাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৩৭ বছর ১৪৫ দিন বয়সে। ৪০/৬-গলে কোন পেসারের সেরা বোলিং। আগের সেরা ছিল অস্ট্রেলিয়ার মিচেল স্টার্কের (৫০/৬)। ২২ মে ২০০৩, লর্ডসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে অভিষেকেই ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন এ্যান্ডারসন। গলে এই ৬ উইকেটের মাঝে কেটে গেছে ১৭ বছর ৭ মাস ৩০ দিন। টেস্ট ইতিহাসে এত সময়ের ব্যবধানে ৫ উইকেট নেই আর কারও। আগের রেকর্ডটা ছিল ফ্রাঙ্ক উলির (১৭ বছর ৫ মাস ১৩ দিন)। প্রথম কোন ইংলিশ বোলার হিসেবে প্রতিপক্ষের মাঠে ২০০ উইকেট পূর্ণ করেছেন এ্যান্ডারসন। আর টেস্ট ইতিহাসে প্রথম কোন বোলার হিসেবে টানা ১৫ বছর অন্তত একবার করে শিকার করেছেন ৫ উইকেট। সর্বশেষ পাঁচ বছরে এ্যান্ডারসনের বোলিং গড় ২০.১১- এ সময়ে অন্তত ৫০ উইকেট পেয়েছেন, তাদের মধ্যে এটিই সেরা। গত বছর টেস্ট ইতিহাসের প্রথম পেসার হিসেবে ৬০০ উইকেটের অনন্য নজির গড়া জিমির এটি ৩০তম বারেরমতো পাঁচ বা ততধিক উইকেট। পেছনে ফেলেছেন গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। পেসার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৩৬ বার পাঁচ উইকেট নিয়ে এখন এ্যান্ডারসনের ওপরে কেবল সাবেক নিউজিল্যান্ড গ্রেট রিচার্ড হ্যাডলি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ম্যাকগ্রার রেকর্ড ৫৬৩ উইকেট ছাড়িয়ে টেস্ট ইতিহাসের সফলতম পেসার বনে গিয়েছেন এ্যান্ডারসন। এরপর থেকে নিজের রেকর্ডের পাতা সমৃদ্ধ করছেন চলেছেন এই ইংলিশ পেসার। বয়সটা তাঁর কাছে যেন কেবলই সংখ্যা। এই বয়সে এসেও বোলিংয়ের ধার একটুও কমেনি। করোনাকালীন ক্রিকেট ফিরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাউদাম্পটন টেস্টে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাকগ্রাকে ছুঁয়েছিলেন এ্যান্ডারসন। ম্যাকগ্রাকে ছুঁয়ে ফেলার পর প্রথম পেসার হিসেবে ৬০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়েছিলেন তিনি। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট ৫ উইকেটে নিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন ম্যাকগ্রাকে। সবচেয়ে বেশি ৩৬ বার ৫ উইকেট নিয়ে এখন এ্যান্ডারসনের উপরে রয়েছেন কেবল হ্যাডলি। ২৭ বার ৫ উইকেট নিয়ে তালিকার তিনে রয়েছেন ইংল্যান্ডের সাবেক পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। চারে দক্ষিণ আফ্রিকার ডেল স্টেইন (২৬ বার) এবং পাঁচে রয়েছেন পাকিস্তানের সাবেক পেসার ওয়াসিম আকরাম (২৫ বার)। যদিও ৫ উইকেট নেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি স্পিনারদের দাপট। এই তালিকায় সেরা পাঁচের চারজনই স্পিনার। ৬৭ বার ৫ উইকেট নিয়ে সবার উপরে রয়েছেন শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তি স্পিনার মুত্তিয়ার মুরালিধরন। দুুইয়ে অস্ট্রেলিয়ার শেন ওয়ার্ন (৩৭), চারে ভারতের অনিল কুম্বলে (৩৫ বার) এবং পাঁচে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথ। ১৮৭৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো স্বীকৃত টেস্ট খেলতে নামে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ম্যাচেই তিনটি ৫ উইকেট দেখেছিল ক্রিকেট বিশ্ব। যার শুরুটা করেছিলেন বিলি মিডউইন্টার। ওই ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন এই অসি বোলার। সেই ম্যাচে আরও দুজন বোলার ৫ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছিলেন। তাঁদের একজন ইংল্যান্ডের আলফ্রেড শ এবং অন্যজন অস্ট্রেলিয়ার টম ক্যান্ডাল। মাত্র ১৬ বছর ৩০৩ দিনে সবচেয়ে তরুণ বোলার হিসেবে ৫ উইকেট শিকার করেছিলেন পাকিস্তানের সাবেক স্পিনার নাসিম উল গনি। সর্বোপরি টেস্টে শিকার সংখ্যায় মুরলি (৮০০), ওয়ার্ন (৭০৮) ও কুম্বলের (৬১৯) পর চতুর্থ স্থানে আছেন এ্যান্ডারসন (৬০৬)। গত বছর করোনার কারণে যখন খেলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তখনই জল্পনা শুরু হয়েছিল অবসর নিচ্ছেন এ্যান্ডারসন। গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের এই পেসার তখন বলেছিলেন, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এ্যাশেজ সিরিজে খেলতে চান তিনি। প্রিয় সতীর্থ স্ট্রয়ার্ট ব্রড, যিনি সম্প্রতি পাঁচ শ শিকারের মাইলফলকে পৌঁছান, তিনিও এ্যান্ডারসনে মুগ্ধ, ‘ইংল্যান্ডের প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য এর চেয়ে ভাল রোল মডেল আর হয় না,’ বলছেন ব্রড। যোগ করছেন, ‘আমি নিশ্চিত ৬০০ শিকার নিয়েও থামতে চাইবে না।’ ১৭ বছর আগে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় এ্যান্ডারসনের। আট জন বিভিন্ন অধিনায়কের অধীনে খেলেছেন এবং চার বার এ্যাশেজ জয়ী দলের সদস্য। ‘আমরা শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি চোখের সামনে,’ বলেছেন মাইকেন ভন। যিনি ২১টি টেস্টে এ্যান্ডারসনের অধিনায়ক ছিলেন। লঙ্কানদের ২-০’ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করার এই সিরিজে ব্যাট হাতে রেকর্ড গড়েছেন জিমির অধিনায়ক জো রুটও। প্রথম টেস্টে ২২৮ রানের পথে তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ও ইংলিশ ‘অধিনায়ক’ হিসেবে রেডর্ক দ্বিতীয় ডাবল সেঞ্চুরি। পাশাপাশি দেশের হয়ে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ৮ হাজারি রানের ক্লাবে।
×