ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হবে

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর নজরদারির পরামর্শ

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পর নজরদারির পরামর্শ

গাফফার খান চৌধুরী ॥ উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর সেখানকার শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি নজরদারি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে তাদের গতিবিধি ও কর্মকাণ্ড গভীরভাবে মনিটরিং করতে বলা হয়েছে। কারণ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সূত্র ধরে অনেকেই জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই ব্যস্ত ছিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এমন সুযোগটিকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছে জঙ্গী সংগঠনগুলো। ইতোমধ্যেই চলতি মাসের জানুয়ারিতেই একুশ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা করোনার মধ্যে অনেক শিক্ষার্থীকে জঙ্গীবাদে উদ্ধুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে। এমন তথ্যের সূত্রধরেই শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি করার কথা বলা হয়েছে। নজরদারির ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য দেয়া হবে প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত বা প্রযুক্তি বিষয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। জঙ্গীবাদ, সাইবার ক্রাইম ও জঙ্গী অর্থায়ন নিয়ে কাজ করা র‌্যাব, পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট এন্টি টেররিজম ইউনিট, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের পরিসংখ্যান মোতাবেক চলতি বছরের হালনাগাদ সারাদেশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযানে ২১ জঙ্গী গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে জঙ্গীবাদের নানা আলামত। সর্বশেষ গত ২২ জানুয়ারি র‌্যাব-৪ ঢাকার পল্লবীর একটি বাড়ি থেকে মোঃ হাসিবুর রহমান ওরফে সোহেল (২৭), মোঃ মোশারফ হোসেন ওরফে আতিক (১৯), রামিম হোসেন ওরফে পনির হোসেন ওরফে নাহিদুর রহমান (২২), মোঃ সজিব মিয়া ওরফে খিজির (২০) ও চঞ্চল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ (১৯) নামের পাঁচ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে। তারা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক মোঃ মোজাম্মেল হক জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃতরা পল্লবীর ওই বাড়িতে সংগঠনের নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য গোপন তৎপরতা চালাচ্ছিল। তারা সবাই উচ্চ শিক্ষিত। এদের মধ্যে একজন নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। বাকিদের মধ্যে দুইজন উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর দুইজন সচ্ছল পরিবারের সন্তান। তারা অনেক দিন ধরেই জঙ্গী তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। তারা মূলত অনলাইনে কর্মকাণ্ড চালাত। এই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে আরও জানান, করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগ নেয়ার চেষ্টা করছিল তারা। ইতোপূর্বে আরও দুইটি অভিযানে দশজন গ্রেফতার হয়েছে। তারাও একই ধরনের তথ্য দিয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে হাসিবুর রহমান ওরফে সোহেল বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, আনসার আল ইসলামের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করাই ছিল তার কাজ। শামীম হোসেন ওরফে পনির হোসেন ওরফে নাহিদ নিজেদের তৈরি ইলেক্ট্রনিক গ্রুপে বিভিন্ন বিষয়ে উগ্রবাদী কার্যক্রম আপলোড করত। আর সজিব মিয়া ওরফে খিজির ও মোশারফ হোসেন ওরফে আতিক সংগঠনের নতুন সদস্য সংগ্রহ করত। পাশাপাশি সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করত। এছাড়া চঞ্চল হোসেন ওরফে আব্দুল্লাহ সংগঠনে যুক্ত হতে অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কাজ করত। এসব বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মোঃ আশিক বিল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, র‌্যাব সব সময়ই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপর নজরদারি করে। ধারাবাহিকভাবে নজরদারি চললেও, করোনার কারণে সেই নজরদারির মাত্রা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় বাড়ানো হয়েছে। এর অন্যতম কারণ করোনা পরিস্থিতির কারণে অনেক মানুষ বিশেষ করে তরুণ সমাজের তেমন কোন কাজ কর্ম নেই। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষার্থীদের অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি ব্যবহার করছে। ফলে যে কোন বিষয়ে বিশেষ করে জঙ্গীবাদ বা নিষিদ্ধ নানা বিষয়ের প্রতি ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুল আহসান জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি বছর একাধিক অভিযান হয়েছে। কয়েকজন জঙ্গী গ্রেফতারও হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে জঙ্গীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি তৎপর। এজন্য মনিটরিং ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। জঙ্গী সংগঠনগুলোর টার্গেট উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বেশি ব্যবহার করে, তাদের বেছে বেছে টার্গেট করে। জঙ্গীবাদ, সাইবার ক্রাইমসহ নানা ধরনের প্রযুক্তিকেন্দ্রিক অপরাধ কমিয়ে আনতে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সাইবার মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি প্রধান পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান। এদিকে ডিএমপি কমিশনার মোহাঃ শফিকুল ইসলাম ঢাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পর পরই নজরদারি আরও বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন। জঙ্গীবাদ ও মাদকের ক্ষেত্রে অলআউট অপারেশন অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
×