ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্বে মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে

প্রকাশিত: ২৩:১১, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর সাহসী নেতৃত্বে মানুষ আশাবাদী হয়ে উঠেছে

সংসদ রিপোর্টার ॥ সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর খুনী মোশতাক-জিয়া গংরা দেশকে এক শ’ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৎ, সাহসী, দূরদর্শী এবং এককেন্দ্রিকতার বিপরীতে বহুমাত্রিক নেতৃত্বগুণে দেশের ১৭ কোটি মানুষ সাহসী ও আশাবাদী হয়ে উঠেছে। শত প্রতিকূলতা ও মহামারী করোনা মোকাবেলা করে দেশকে উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে যাবে। জনবিচ্ছিন্ন বিএনপি আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে, করোনার দুঃসময়ে অসহায় মানুষের কাছে না গিয়ে ঘরে বসে মিডিয়ার মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। আলোচনাকালে বিরোধী দলের দু’জন সদস্য সরকারের উন্নয়নের প্রশংসা করলেও আর্থিক খাতে অর্থপাচার ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের নাম প্রকাশ করার দাবি জানান। তারা বলেন, দেশের যত উন্নয়ন হচ্ছে, দুর্নীতি-লুটপাটের সংখ্যাও তত বাড়ছে। এদের শক্তহাতে দমন করতে না পারলে অর্জিত সাফল্যেগুলো ম্লান হয়ে যাবে। সংসদে আলোচনায় অংশ নেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরহাদ হোসেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান, আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভূঁইয়া, ক্যাপ্টেন (অব) এ বি তাজুল ইসলাম, এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, দবিরুল ইসলাম, মঞ্জুর হোসেন, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, কাজী নাবিল আহমেদ, মাজহারুল হক প্রধান, আদিবা আনজুম মিতা, মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান, মমতা হেনা লাভলী এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মোঃ ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান ও অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান। আলোচনায় অংশ নিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরহাদ হোসেন বলেন, দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশ নির্ধারিত সময়ের আগেই উন্নত দেশে পৌঁছে যাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধানে জনবান্ধন জনপ্রশাসন গড়ে তোলা সম্ভব হয়েছে। প্রথমবারের মতো দীর্ঘ মেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। শতবর্ষী ব-দ্বীপ পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছে। এসব পরিকল্পনায় তৃণমূল জনগোষ্ঠীকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশ দ্রুতই উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সরকারের সমালোচনার জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মুরাদ হাসান বলেন, অনেকেই বলেছিলেন, সরকার ভ্যাকসিন আনতে পারবে না। অনেক উন্নত দেশও এখন ভ্যাকসিন আনতে পারেনি। শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশে এখন ভ্যাকসিন আসার পর তারা বলছেন, এগুলো কী ভাল? আসলে সরকারের কোন ভাল কাজই তাদের চোখে পড়ে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে গৃহহীনরা আশ্রয় খুঁজে পাচ্ছে। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে দেশ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে। এই কারণে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চক্রান্ত চলছে। এই ষড়যন্ত্র চক্রান্তের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার থাকার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কোন ষড়যন্ত্রই দেশের অগ্রযাত্রাকে থামাতে পারবে না। বিদেশে টাকা পাচার ও লুটপাটকারীদের পরিচয় জাতীয় সংসদে তুলে ধরার দাবি জানান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য মোঃ ফখরুল ইমাম। তিনি বলেন, লুটেরা কারা? এরা কী দলের? সরকারে না আশপাশে? এদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন জানতে চাই। তিনি বলেন, দেশে ধনীদের আয় যেভাবে বাড়ছে দরিদ্রদের আয় সেভাবে বাড়ছে না। ফলে আয় ব্যবধান তৈরি হচ্ছে। দেশে বর্তমানে ৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ দরিদ্র। প্রায় দুই কোটি অতিদরিদ্র রয়েছে। তিনি বলেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি আয়ের তথ্যে গরমিল রয়েছে। সরকারের পাঁচ বছরে রফতানি আয়ের বিষয়ে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে যে গরমিল ধরা পড়েছে তা দিয়ে ছয়টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতির বিরাট অভিযোগ উঠেছে উল্লেখ তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে ২৭টি সমঝোতা স্মারকে সাড়ে ৩৭ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা এসেছে। বাস্তবে এর সামান্য বাংলাদেশে এসেছে। কত এসেছে, তা জানতে চাই। তিনি আরও বলেন, এখন শোনা যাচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রে কয়লা ব্যবহার করা হবে না। তাহলে এতদিন আন্দোলন চলল কেন? এর অর্থদণ্ড কত? তবে আশা কথা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্লান্তিহীন ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে দেশের ১৭ কোটি মানুষও সাহসী ও আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। সাবেক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম বিএনপির রাজনীতির সমালোচনা করে বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খুনী মোশতাক-জিয়াদের আমরা গ্রেফতার করেছিলাম। জিয়াউর রহমান কত হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করেছে, আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর কত অফিসারকে কোর্ট মার্শাল দিয়ে হত্যা করেছে, অপারেশন ক্লিনহার্ট করে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া কত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা ও নির্বাচন ঠেকানোর নামে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে- জনগণ এসব কোনদিন ভুলবে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান, সারাদেশে সিরিজ বোমা হামলা, জঙ্গীবাদ সৃষ্টি, হাওয়া ভবন খুলে হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার, যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে তাদের বাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়ে যারা (বিএনপি) ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছে- তাদের মুখে বড় বড় কথা শোভা পায় না। দেশের অর্থনৈতিক খাতের ‘অব্যবস্থাপনার’ সমালোচনা করে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির আরেক সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক কাজ করছেন। দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। একদিনে ৭০ হাজার পরিবারকে জমিসহ বাড়ি দেয়ার ঘটনা বিশ্বে নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত। কিন্তু আমাদের দেশের অর্থনৈতিক খাত হচ্ছে পিতা-মাতার বখে যাওয়া সন্তানের মতো। অবাধ্য সন্তানের মতো। সরল পথে আনাই যাচ্ছে না। হাইকোর্টও বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ঠগবাজ, প্রতারকদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এক মামলার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ এসেছে। তিনি আরও বলেন, বিদেশে টাকা পাচার হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকারী কর্মকর্তারা বিদেশে টাকা পাচার করছেন। এটা দেখা দরকার। টিকা নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রথমে বলেছে ভ্যাকসিন আসবে না। এখন যখন আসল, বলছে তারা নেবেন না। আওয়ামী লীগকে নিতে হবে! সঙ্কটের সময় বিএনপি নেতারা সবসময় বলে ‘পেহেলে আপ’ (প্রথমে তুমি)। ১/১১ সময়ও করেছে, এখনও করছে। তবে টিকা নিয়ে রাজনীতির কোন সুযোগ নেই। ক্রান্তিকালে রাজনীতি হয় না। মানুষের জীবন নিয়ে রাজনীতি হয় না। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক এপিএস সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, বিএনপি-জামায়াতের ইতিহাসই মিথ্যায় ভরা। পৌর নির্বাচনসহ বিভিন্ন নির্বাচনে দেখছি, জনগণ তাদের ভোট দিতে চায় না। এ কারণে বিএনপি উন্মাদের মতো আচরণ করছে। তিনি আরও বলেন, টিকা কে আগে নেবেন সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করছে বিএনপি। বলা হচ্ছে, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ নাকি সবার আগে টিকা নিয়েছেন, এটি একটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। সংসদে ভুল তথ্য না জনগণকে বিভ্রান্ত না করার জন্য তিনি সবার প্রতি অনুরোধ জানান। জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান বলেন, পিকে হালদারের বান্ধবী না হতে পেরে এখন অনেকে আফসোস করছে। কারণ তার বান্ধবীরা এত টাকা পেয়েছে! তিনি বলেন, তাকে বিদেশ থেকে ধরে এনে কঠোর শাস্তি দেয়া হোক। না হলে ভবিষ্যতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। অনেকে টাকা পয়সা নিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাবে। এ ধরনের আরও কত পিকে হালদার আছে, দুদককে তা খুঁজে বের করতে হবে। সরকারী দলের সুবিদ আলী ভূঁইয়া বলেন, করোনায় বিশ্বের বড় বড় দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনও সমৃদ্ধ। দেশের যে কোন সঙ্কটে জনগণের একমাত্র আস্থার ঠিকানাই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তার বিকল্প কেউ নেই, ভবিষ্যতেও হবে না। পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের তথ্য তুলে ধরে সরকারী দলের আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পদ্মা সেতু চালু শেষ হলে দক্ষিণাঞ্চলের ২৯ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা আমুল বদলে যাবে। মংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। তাই এখন ভোলা থেকে খুলনায় গ্যাস সরবরাহের পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রকৌশলী মনোয়ার হোসেন চৌধুরী বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করে বলেন, সবকিছুতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি এখন টিকা নিয়ে খেলা শুরু করেছে। কে আগে বা পরে নেবে এই নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে। বিএনপি বলেছিল রোজার পর, ঈদের পর, এরপর শীতকালে আন্দোলন করবে। রাজপথে ব্যর্থ হয়ে এখন তারা ঘরে বসে আন্দোলনের নামে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। বাস্তবে এই দলটির নেতাদের দেশের এত উন্নয়ন-অগ্রগতি দেখে মতিভ্রম হয়েছে।
×