ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সেবার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় নিয়োজিত অধ্যাপক ডাঃ স্বপ্নীল

সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধাদের কথা

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

সম্মুখসারির করোনা যোদ্ধাদের কথা

ওয়াজেদ হীরা ॥ করোনার সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াইয়ের পর সুস্থ হয়েছেন নিকুঞ্জের বাসিন্দা আয়শা আক্তার (৬১)। করোনা থেকে সুস্থ হলেও শরীরে আগে থেকেই বাসাবাঁধা ছিল বিভিন্ন অসুখের। যার কারণে সুস্থ হওয়ার প্রায় ২২ দিন পর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারাই যান তিনি। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তিনি কিডনি ও লিভার সমস্যায় ভুগছিলেন। কোভিড নেগেটিভ আসার পর চিকিৎসাও চলছিল, তবে আর সুস্থ হননি। একমাত্র ছেলে হাসিনুল ইবরা এখন মায়ের মৃত্যুশোকে কাতর। রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে নিয়মিত লিভার চেকআপ করিয়ে ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন আহমদ আলী (৬৬)। লিভার সিরোসিস থাকায় এখন আরও বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে তাকে জানিয়েছেন ডাক্তাররা। তিনিও তিন মাস আগে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন। তবে আক্রান্ত রোগীদের বেশি ক্ষতি হয়। ডাক্তারদের মতে করোনা পরবর্তীতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীদের বেশি ক্ষতি হয়। লিভার, কিডনি, ফুসফুস কিংবা ডায়াবেটিসের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা করোনা পরবর্তীতে আরও বেশি সমস্যায় পড়েন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। জটিল রোগে ভোগা রোগীদের ক্ষেত্রে চিকিৎসাও করতে হচ্ছে যত্নের সঙ্গে। বিশেষ করে লিভারের সমস্যায় থাকা রোগীদের করোনা হলে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকছে। একই সঙ্গে করোনার চিকিৎসা চলাকালে ওষুধগুলো যত্নসহকারে লিভারের ফাংশন দেখে বুঝে শুনে খেতে হচ্ছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ এ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (নিপসম) ‘বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্তদের ঝুঁকিগুলোর কারণ নির্ধারণ’ বিষয়ে গবেষণা করেছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকের ব্যবহার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, দীর্ঘমেয়াদী কিডনি, লিভার ও ক্যান্সারের কথা উঠে আসে গবেষণায়। করোনায় সপরিবারে আক্রান্ত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। করোনা যোদ্ধা এই ডাক্তার একদিকে যেমন সেবা দিচ্ছেন তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নিয়ে তা প্রকাশ করে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ¦ল করছেন। করোনা প্রতিরোধে ‘ন্যাসভ্যাক’ নামের একটি ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেখাচ্ছেন আশার আলো। করোনার শুরু থেকেই মানুষের পাশে থাকা লিভার বিশেষজ্ঞ সুস্থ হওয়ার পর আবারও রোগী দেখা শুরু করেছেন। করোনাকালে নানাবিধ অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাকালে রোগীদের চিকিৎসা করতে যেয়ে আমি এবং আমার মতো অন্যান্য লিভার বিশেষজ্ঞ প্রথম থেকেই যে ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ছিলাম তা হলো লিভারে কোভিড সমস্যা করে কিনা। এরই প্রেক্ষাপটে এশীয় প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের লিভার বিশেষজ্ঞদের সংগঠন ‘এশিয়ান প্যাসিফিক এ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার’ থেকে গঠন করা হয় একটি টাস্ক ফোর্স যার সদস্যও ছিলাম আমি। এতে এশীয় প্রশান্ত-মহাসাগরীয় অঞ্চলের তেরোটি দেশের লিভার বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন এবং প্রায় চারশ’ রোগীর ওপর পরিচালিত যে গবেষণা, তাতে আমরা দেখতে পাই যাদের লিভারে তেমন বড় কোন সমস্যা নেই। তাদের লিভারে কোভিডে চারশ’ রোগীর ওপর পরিচালিত একটু-আধটু সমস্যা হতে পারে, লিভারের ফাংশনগুলো একটু সমস্যা হতে পারে। যা কোন রকম বড় দুর্ঘটনা ছাড়াই সেরে উঠেন। তবে যাদের লিভারে বড় কোন রোগ, বিশেষ করে সিরোসিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম। যেসব লিভার সিরোসিসের রোগীরা মেদবহুল বা যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের ক্ষেত্রে কোভিড হলে মৃত্যুর আশঙ্কা চল্লিশ শতাংশের ওপর বলেন তিনি। ডাঃ স্বপ্নীল বলেন, বাংলাদেশে এখন কোভিডে মৃত্যুর হার এক দশমিক তিন থেকে এক দশমিক চার শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করছে, সেখানে এটি চল্লিশ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে যদি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর কোভিড হয় এবং বিশেষ করে তাদের ডায়াবেটিস বা মেদবহুল শরীর থাকে। আমাদের এই গবেষণা নিবন্ধটি সম্প্রতি ‘হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল’ নামে পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষ লিভার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সেজন্য বেশি সতর্কতা দিচ্ছি যাদের লিভার সিরোসিস আছে তাদের অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি হওয়া উচিত এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতামত মানা উচিত। কোন কোন লিভার সিরোসিসের রোগী আছেন যারা হয়তো কোভিড হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন এ ধরনের রোগীদের করোনা পরবর্তীতে দেখছি তাদের লিভারটা অনেক খারাপ হচ্ছে, আগে ভাল থাকলেও লিভারটা আগের মতো ফিরে যাচ্ছে না সময় নিচ্ছে। জীবনযাত্রার মান খারাপ হচ্ছে, স্বাস্থ্য খারাপ হচ্ছে। লিভার সিরোসিস যদি হয় তাহলে কোভিডে মৃত্যুঝুঁকি বেশি থাকছে কিংবা লিভারটা বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছে। করোনায় ব্যবহৃত ওষুধ নিয়ে ডাঃ স্বপ্নীল বলেন, কোভিড রোগের চিকিৎসায় যে এন্টি-ভাইরাল ওষুধগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে ফেভিপিরাভির এবং রেমডেসেভির, এই ওষুধগুলো লিভারে কখনও-কখনও সমস্যা তৈরি করতে পারে। আমাদের দেশেও আমাদের একই ধরনের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। তার মানে এই না যে কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের এ ধরনের এন্টিভাইরাল দিয়ে চিকিৎসা করা যাবে না। চিকিৎসা করা যেতেই পারে, তবে রোগীর যদি বিশেষ করে লিভার রোগ থাকে, তবে সেসব রোগীর ক্ষেত্রে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহারের সময় যত্নশীল একটু সতর্ক থাকতে হবে। কোভিড সুস্থ রোগীদের নিয়ে জানান, অন্যদের মতো আমরাও এখন লিবারের রোগীদের মধ্যে পোস্ট-কোভিড সিম্পটমগুলো নিয়েও ভালই ঝামেলায় আছি। লিভার সিরোসিসের যেসব রোগী কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে উঠছেন, তাদের লিভার ফেইলিউরজনিত সমস্যাগুলো নতুন করে দেখা দিতে কিংবা আগের চেয়ে বেড়ে যেতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে এ মুহূর্তে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একটি বড় গবেষণা চলছে। এই গবেষণায় আমিও অংশ নিচ্ছি। এদিকে জানা গেছে, কোভিড প্রতিরোধে কার্যকর দেশী বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত ওষুধ ‘ন্যাসভ্যাক’। ওষুধটি উদ্ভাবন যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশী চিকিৎসাবিজ্ঞানী ড. শেখ মোঃ ফজলে আকবর এবং অধ্যাপক ডাঃ মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল। এই কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন কিউবান, জাপানি ও জার্মানের সহ-গবেষকরা। ন্যাসভ্যাক-কোভিড চিকিৎসায় নতুন আশা উল্লেখ করে লিভার বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক জানান, হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের চিকিৎসায় অত্যন্ত কার্যকর এই ওষুধটি উদ্ভাবনের জন্য ডাঃ আকবর এবং আমি কিউবার সর্বোচ্চ বৈজ্ঞানিক পুরস্কার কিউবার একাডেমি অব সাইন্সেস ‘প্রিমিও ন্যাশনাল’সহ একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মাননা লাভ করেছি। দেশেও ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়েছে ন্যাসভ্যাক। আমাদের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর দেশে ওষুধটি উৎপাদনের জন্য অনুমোদনও প্রদান করেছেন। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ন্যাসভ্যাক মানুষের ইনেট ইমউিনিটির ওপর কাজ করে কোভিড প্রতিরোধ এবং নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এরই মধ্যে ন্যাসভ্যাক দিয়ে কোভিড চিকিৎসার জন্য ডাঃ আকবর ও আমি একটি আন্তর্জাতিক পেটেন্ট আবেদন জমা দিয়েছি আমাদের কিউবান, জাপানী ও জার্মান সহ-গবেষকদের সঙ্গে। কোভিড চিকিৎসায় ন্যাসভ্যাকের একটি আন্তর্জাতিক, মাল্টিসেন্টার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এই মুহূর্তে পরিকল্পনাধীন আছে। আশা করা যায় নিকট ভবিষ্যতে কোভিড চিকিৎসায় ন্যাসভ্যাক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। লকডাউনের দিনগুলোতে সাধারণ চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়েছে সব স্থানেই। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা ও চিকিৎসা নিয়ে বলেন, অন্য রোগীদের মতো লিভারের রোগীরাও কোভিডের শুরুর দিকে, বিশেষ করে লক-ডাউনের সময়টাতে কিন্তু কম ভোগেননি। সেই সময়টাতে আমি আমার সংগঠন ‘ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশ’-এর সদস্য লিভার বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এদেশের লিভার রোগীদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। এই সংগঠনের উদ্যোগে ৫০ জনেরও বেশি লিভার বিশেষজ্ঞের তালিকা প্রকাশ করেছিলাম যারা টলিমেডিসিনের মাধ্যমে লিভার রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। ফলে উপকৃত হয়েছিলেন হাজারো লিভার রোগী। গণমাধ্যম সামাজিক মাধ্যমসহ আওয়ামী লীগের মতো দেশের প্রাচীনতম এবং বৃহত্তম রাজনৈতিক দলটিও তাদের ওয়েবসাইটে এই তালিকাটি প্রকাশ করেছিল। রোগীরা যেমন সেবা পেয়েছে তেমনি আমরা টেলিমেডিসিনের মাধ্যমে আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছি ‘ইউরোএশিয়ান জার্নাল অব হেপাটো-গাস্ট্রোএন্টারোলজি’ এবং ‘জার্নাল অব ফ্যামিলি মেডিসিন এ্যান্ড প্রাইমারি কেয়ার’ নামের দুটি পাবমেড ইনডেক্সড মেডিক্যাল জার্নালে, যা আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের সুনাম বৃদ্ধি করেছে। তিনি বলেন, কোভিড প্যান্ডেমিকের শুরুতেই রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পৃথিবীর অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এন্ডোস্কোপি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে আমার উদ্যোগে ’বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হেপাটোলজি এলুমনাই এ্যাসোসিয়েশন’ একটি এসওপি প্রণয়ন করে। এই এসওপি-টি অনুসরণ করে বিএসএমএমইউ-সহ দেশের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে লিভার বিশেষজ্ঞরা বর্তমানে ডায়াগনস্টিক ও থেরাপিউটিক এন্ডোস্কোপি ও ইআরসিপি সেবা প্রদান করছেন। এই এসওপিটির কার্যকারিতা খতিয়ে দেখার জন্য এই মুহূর্তে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা চলমান আছে। করোনা চিকিৎসায় বাংলাদেশের সাফল্য নিয়ে ডাক্তার স্বপ্নীল বলেন, কোভিড-১৯ প্যান্ডেমিক মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য আর ব্যর্থতা দুই-ই আছে। স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অন্যতম সাফল্য কোভিড-১৯ চিকিৎসায় মৃত্যুর হার সহনীয় পর্যায়ে ধরে রাখা। পাশাপাশি বাংলাদেশে কোভিড হাসপাতালে আইসিইউ বেডগুলো চলমান এই প্যান্ডেমিকে কখনই পুরোপুরি ভরা ছিল না। শুরুতে আশঙ্কা করা হয়েছিল ভেন্টিলেটারের অভাবে এদেশে করোনায় অসংখ্য মৃত্যু হবে, অথচ কার্যত তার ধারেকাছেও কিছু ঘটেনি। জাপান প্রবাসী বাংলাদেশী ইমিউনোলজি বিশেষজ্ঞ ডাঃ শেখ মোহাম্মদ ফজলে আকবর এবং আমি দেশের একাধিক কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে এই কোভিডকালে বাংলাদেশে কোভিড চিকিৎসার বিভিন্ন দিক সম্বন্ধে আন্তর্জাতিক বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোয় ১০টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছি। বাংলাদেশে কোভিড চিকিৎসায় অন্যতম অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল। এই হাসপাতালটির সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা এ পর্যন্ত দুটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেছি। হাসপাতালটির কর্মরত বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশ করেছি যথাক্রমে ‘ইউরোএশিয়ান জার্র্নাল অব হেপাটোগ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি’ এবং ‘এক্টা সাইন্টেফিক মেডিক্যাল সাইন্সেস’ নামক দুটি আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালে। তবে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের গর্ব করার জায়গাটি হচ্ছে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় ইমিউন-থেরাপির সফল প্রয়োগ। টসিলিজুমাভ এবং বেভাসিজুমাভ নামক দুটি ওষুধ ব্যবহার করে সিভিয়ার কোভিডে আক্রান্ত শতাধিক রোগীর জীবন বাঁচিয়েছেন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের বিশেষজ্ঞবৃন্দ। ঢাকার বাইরের একাধিক কোভিড হাসপাতালের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতা গড়ে তুলেছি। আমরা দেশের বাইরেও কোভিড গবেষণায় বৈজ্ঞানিক কোলাবোরেশন গড়ে তুলেছি। দীর্ঘমেয়াদে কোভিডের যে নানা সাইড এফেক্ট তা নিয়ে গবেষণা চলছে সারা পৃথিবীতেই। জাপানের শীর্ষ স্থানীয় এহিমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের সঙ্গে তা আমাদের যৌথ গবেষণায় উঠে এসেছে যে কোভিড হলে স্পাইনা বাইফিডা নামক মেরুদণ্ডের একটি জন্মগত রোগ দেখা দিতে পারে। আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে ‘জার্নাল অব গ্লোবাল হেলথ’-এ। কোভিড প্যান্ডেমিক মোকাবেলায় আমাদের যে সাফল্য তার অনেকটাই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবাদে। বিএসএমএমইউ লিভার বিভাগটি টেলিএডুকেশনের মাধ্যমে উচ্চ শিক্ষার ধারাবাহিকতা বজায় রাখায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। চিকিৎসক হিসেবে ব্যস্ততা থাকলেও আমি আমার সামাজিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে সচেতন থাকার চেষ্টা করেছি। ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। মাঠে থেকে চালিয়েছি ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ক্যাম্পেইন। মানুষকে সেবা দেয়াই আমাদের কাজ সেটি যেন অব্যাহত রাখতে পারি সে প্রত্যাশাও করেন।
×