ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ আসাদ উল্লাহ তুষার

ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপির অপপ্রচার

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৭ জানুয়ারি ২০২১

ভ্যাকসিন নিয়ে বিএনপির অপপ্রচার

অবৈধ সামরিক শাসকের গর্ভে জন্ম নেয়া বিএনপি তার চিরাচরিত অপপ্রচারের অংশ হিসেবে এবার করোনার ভ্যাকসিন নিয়েও অপপ্রচার শুরু করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যখন করোনা প্রতিরোধে সফলভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে এবং বাংলাদেশেও যখন ভ্যাকসিন প্রয়োগের একদম চূড়ান্ত পর্যায়ে, তখন সেই পুরনো খেলায় মেতে উঠেছে সরকারী ও বিরোধী দল হিসেবে চূড়ান্ত ব্যর্থ বিএনপি। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ২০ লাখ কোভিড ভ্যাকসিন ভারত সরকারের উপহার হিসেবে এসেছে। এগুলো যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনিকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’, যা বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনিকার সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রস্তুত করছে। নিজেদের অর্থে কেনা তিন কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালান ৫০ লাখ ডোজ পৌঁছেছে দেশে। আসলে সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ ও যে কোন প্রকারে ক্ষমতায় যেতে মরিয়া বেসামাল বিএনপি নেতারা কোভিড প্রতিরোধে দেশে ভ্যাকসিন আসায় হতাশ হয়ে পড়েছে। যে কারণে কোভিড প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আসাকে এবং এর সুষ্ঠু প্রয়োগে সাধুবাদ না জানিয়ে নির্লজ্জ অপপ্রচার ও মিথ্যাচার লিপ্ত হয়েছে। অহেতুক সাধারণ মানুষের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগে অবিশ্বাস, সন্দেহ তৈরি করছে। তা না হলে ভ্যাকসিন আসার প্রাক্কালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, দেশের সাধারণ মানুষ করোনা ভাইরাসের টিকা কতটা কিভাবে পাবে, সে বিষয়ে তার সংশয় আছে; কেননা টিকা আগে ‘ধনীদের দেওয়া হবে’ বলে তারা খবর পেয়েছেন! ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই বক্তব্যের পরের দিনই অন্য এক অনুষ্ঠানে বুঝে না বুঝে সব বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পারদর্শী বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বললেন, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, যে ভ্যাকসিন আসছে, এটা ভিআইপিরা আগে পাবে না। ভিআইপিরা আগে দেখবেন- গরিব মানুষের ওপর প্রয়োগ করে! গরিব মানুষ গিনিপিগ নাকি? আগে ভ্যাকসিন দিয়ে দেখবেন ওরা মরে না বাঁচে।’ এছাড়াও বিএনপিপন্থী অনেক বুদ্ধিজীবী ভ্যাকসিন প্রয়োগ নিয়ে কল্পনাপ্রসূত, মনগড়া অচিকিৎসসুলভ বক্তব্য দিয়ে জনমনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, যা খুবই দুঃখজনক। কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসের কারণে সারা পৃথিবী যখন বিপর্যস্ত, অর্থনীতির চাকা যখন মন্থর, দেশে দেশে যখন লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে তখন বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এই মহামারী দৃঢ়তার সঙ্গে সামাল দিচ্ছে। সরকারের নানাবিধ প্রচেষ্টায় দেশে এখন অনেকটা সহনীয় পর্যায়ে এই ভাইরাসের প্রকোপ বিদ্যমান। দেশের মানুষকে এই মহামারী থেকে রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ও তাঁর সরকার দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, অর্থনীতি সচল রাখতে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছেন এবং দেশের সার্বিক অবস্থা যখন বেশ স্বাভাবিক, তখনই মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে বিএনপি নামক এই অভিশপ্ত দলের এবং তার শীর্ষ নেতাদের। এখন তারা তাদের পুরনো খেলা সেই অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন। উপর্যুপরি আন্দোলনে ব্যর্থ ও নির্বাচনে পরাজিত এবং শীর্ষ নেতৃত্ব যখন দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের দায়ে দণ্ডিত ও পলাতক তখন এদের এই অপপ্রচার দেশের মানুষ ঘৃণ্যভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় বৈশ্বিক এই মহামারী নিয়ে এবং এর টিকা নিয়ে বিএনপির নেতা-নেত্রীরা ও তাদের দোসররা যে ধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে তা একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের জন্য অত্যন্ত গর্হিত কাজ এবং অবশ্যই নিন্দনীয়। এখন আসা যাক বিএনপি বা তাদের মিত্ররা এই ভ্যাকসিন নিয়ে কি কি অপপ্রচার করছে। ‘ইতিমধ্যে বাংলাদেশে যে ভ্যাকসিন এসেছে ভারত থেকে, সেটি অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নয়। ভারতের তৈরি কোভ্যাক্সিন, যার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল এখনও সম্পন্ন হয়নি।’ অথচ সঠিক তথ্যটি হলো বাংলাদেশে ২০ জানুয়ারি ২০ লাখ কোভিড ভ্যাকসিন যেগুলো ভারত সরকারের উপহার হিসেবে দিয়েছে এগুলো যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনিকার তৈরি করোনা ভ্যাকসিন ‘কোভিশিল্ড’, যা বিশ্বের সর্ববৃহত ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনিকার সঙ্গে চুক্তির আওতায় প্রস্তুত করছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য। বাকি ৫০ লাখ ডোজও তাই। ভ্যাকসিন নিয়ে কুচক্রীরা অন্য আরও যে গুজব ছড়াচ্ছে তা হচ্ছে ‘বাংলাদেশে ভারত থেকে আসা করোনা ভ্যাকসিন-এর ট্রায়াল করা হবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর। স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর প্রয়োগ করে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে। ভিআইপিরা এই কারণেই আগে ভ্যাকসিন নিচ্ছেন না।’ অপপ্রচারে যে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তা আরেকবার প্রমাণ করল অপপ্রচারকারীরা। সঠিক তথ্য হলো, বাংলাদেশ কোন ট্রায়াল ভ্যাকসিন আনেনি। বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাজেনিকার ভ্যাকসিন দিয়েই সারা দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এটি সব ধরনের ট্রায়াল সম্পন্ন করে কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ও ধরন নিশ্চিত হয়ে একাধিক আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত ভ্যাকসিন। তাই বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর প্রয়োগ করে নতুনভাবে কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষা করা হবে না। ২০ জন স্বাস্থ্যকর্মী ও প্রায়োরিটি লিস্টের অন্যান্য পেশাজীবীদের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মুক্তিযোদ্ধা, পরিচ্ছনতাকর্মী ইত্যাদি) ওপর প্রয়োগ করা হবে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের মহড়া হিসেবে, যার একটি অংশ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও লিপিবদ্ধকরণ। সারা দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলাকালীন ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর কর্তৃক প্রস্তুতকৃত পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ছক অনুসারে পর্যবেক্ষণ করা হবে। এই ব্যাপারগুলোই মহড়ার মাধ্যমে যাচাই করে নেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে ২০ জনের ওপর প্রয়োগ করে এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে। সারা পৃথিবীতেই স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়োবৃদ্ধদের ভ্যাকসিন প্রায়োরিটি তালিকার সর্বাগ্রে রাখা হয়েছে এবং সেভাবেই ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও সেটি ঘটছে। অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন খোদ যুক্তরাজ্যেই প্রথমে দেয়া হয়েছে একজন ৮২ বছর বয়সের বৃদ্ধকে, এরপর স্বাস্থ্যকর্মীরা নেয়া শুরু করেছেন এবং তারও কিছুদিন পরে যুক্তরাজ্যের রাণী এলিজাবেথ ও প্রিন্স ফিলিপ ভ্যাকসিন পেয়েছেন। সত্যি সত্যি ভ্যাকসিন দেশে চলে আসায় বিএনপি ও তার অন্যান্য অপপ্রচারকারী মিত্ররা বেসামাল হয়ে পড়েছে। সরকার বিনা পয়সায় যখন দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তখনই তারেক-ফখরুল-রিজভী-জাফরুল্লাহরা এই ভ্যাকসিন নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ ও অবিশ্বাস তৈরি করতে মরিয়া হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের নানামুখী কার্যক্রমের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কোভিড-১৯ এর প্রকোপ ও মৃত্যু হার তুলনামূলক অনেক কম। অর্থনৈতিক ভাবে স্থবির বিশ্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন বেশ সচল ও রিজার্ভ যখন ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তখন বিএনপি ও তাদের অপপ্রচারকারী মিত্রদের আর অপপ্রচার ও মিথ্যাচার ছাড়া কোন পথ থাকে না। কিন্তু দেশের মানুষকে নিয়ে এই সর্বনাশা অপপ্রচার বিএনপি কেন করছে? সোশ্যাল মিডিয়াসহ নানা মাধ্যমে তারা যে অপপ্রচার চালাচ্ছে তা কার বিরুদ্ধে? আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে তারা দেশের বিরোধিতা করছে। দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, যা খুবই দুঃখজনক ও লজ্জাকর। করোনার পুরো প্রায় একবছরে বিএনপি ও তার নেতাকর্মীরা কি মানুুষের পাশে দাঁড়িয়েছে? এর কোন আলামত বা প্রমাণ দেশের মানুষ দেখেনি। এই মহামারী থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট বিএনপি নেতারা এখন সমগ্র দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে ঘৃণ্য অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। যে কোন প্রকারে সরকারের পতন ও ক্ষমতায় গিয়ে খুনখারাবি ও লুটপাটে অভ্যস্ত বিএনপি কোভিডকালীন সময়ে মনে করেছিল, এই মহামারী হয়তো সরকার সামাল দিতে পারবে না। অর্থনৈতিক ভাবে দেশ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, বিনা চিকিৎসায় মানুষ মারা যাবে, সর্বোপরি সরকার অজনপ্রিয় হয়ে পড়বে। আর অমনি ক্ষমতার চেয়ারে গিয়ে বসবে সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক অবৈধ ক্ষমতা দখলদার হিসেবে পরিচিত জেনারেল জিয়ার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বিএনপি। কিন্তু তাদের সেই আশা দুরাশায় পরিণত করে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও সময়োপযোগী নেতৃত্বে ও সঠিক কর্মতৎপরতার মাধ্যমে সাহসের সঙ্গে এই বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলা করে দেশ এগিয়ে যাবে, তা ছিল অতীতে সরকার পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ বিএনপি ও তার নেতাদের কাছে অবিশ্বাস্য। আর এখানেই তাদের গা জালা, আর যার জন্য এসব অমানবিক অপপ্রচার ও মিথ্যাচার। তারা ভুলেই গেছে এ দেশটিও তাদের, তারা এদেশেরই সন্তান। এই করোনা ভ্যাকসিন সফলভাবে প্রয়োগ হলে এবং এর কার্যকারিতা সঠিক হলে এ থেকে তারাও উপকার পাবে। দেশের মানুষ উপকার পাবে। কিন্তু প্রতিহিংসাপরায়ণ ও প্রতিক্ষেত্রে ব্যর্থ বিএনপি বর্তমান সরকারের এসব সঠিক ও সময়োপযোগী পদক্ষেপকে সাধুবাদ না জানিয়ে নির্লজ্জ, রুচিহীন, বায়বীয় সব মিথ্যাচার ও অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে, যা দেশের মানুষের জন্য অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক। লেখক : কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
×