ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যবসায়ী হামিদুল হত্যায় জড়িত ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

প্রকাশিত: ২০:২৯, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

ব্যবসায়ী হামিদুল হত্যায় জড়িত ৫জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ওরা ৫জনই পেশাদার ছিনতাইকারী। ওদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে। কয়েকবার জেলও খেটেছে। জামিনে বের হয়ে পূনরায় একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। বয়সে তরুন হলে ছিনতাইয়ের কাজে এরা সিদ্ধহস্ত। অস্ত্র চালাতে এরা পারদর্শী। এদের মধ্যে একজনের ডান হাত কাটা। এরাই গত ২৩ জানুয়ারি রাতে রাজধানীর হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার সামনে ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলামকে হত্যা করে সর্বস্ব ছিনিয়ে পালিয়ে যায়। সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে, সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, হাত কাটা শাকিল ওরফে ডুম্বাস, জাহিদ হোসেন, শুক্কুর আলী ও সোহেল মিয়া। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো চাকু, নিহত হামিদুলের ব্যবহৃত স্যামসাং ২১ এস মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ। মঙ্গলবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার এসব তথ্য জানান। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, গত ২৩ জানুয়ারি রাতে সেগুনবাগিচা এলাকার ডিস ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম হাতকাটা শাকিলের রিক্সাতেই উঠেছিলেন। হাইকোর্ট মাজার থেকে সেগুনবাগিচায় যাওয়ার পথে জাতীয় ঈদগাহ মাঠের সামনের ফুটপাতে ওই রিক্সার গতিরোধ করে ছিনতাইকারী সোহেল ওরফে এরাবিয়ান সোহেল, জাহিদ হোসেন ও শুক্কুর আলী। এ সময় হামিদুলের কাছ থেকে একটি স্যামসাং ২১ এস মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। তখন হামিদুল চিৎকার করলে এরাবিয়ান সোহেল চাকু দিয়ে তার পায়ে আঘাত করে। এতে তার রগ কেটে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা হামিদুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এদের মধ্যে শাকিল ওরফে হাত কাটা শাকিল একজন রিক্সাচালক। এরাবিয়ান সোহেল হচ্ছে মূলহোতা। তার সাথে জাহিদ ও শুক্কুর আলী সহযোগী। আর সোহেল মিয়া ছিনতাইয়ের মালামাল ক্রয়কারী। হামিদুলের ছিনতাই হওয়া মোবাইলও সোহেল মিয়াই কিনেছিলেন। তারা রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর এলাকায় থাকে। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ জানান, ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালানো শাকিলের ছদ্মবেশ। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রিক্সা চালাত এবং টার্গেট ব্যক্তিকে নির্জন জায়গায় নিয়ে ছিনতাই করতো। প্রতিবন্ধী হওয়ায় মানুষের সহানুভূতিও কাজ করতো তার প্রতি। পুলিশও সহজে তাকে কিছু বলতো না। যার ফলে ব্যাটারিচালিত রিক্সা নিয়ে সব সড়কে চলাচল করতে পারতো। ডিবি এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারকৃত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ১০টি করে ছিনতাই মামলা রয়েছে। প্রত্যেক মামলাতেই তারা জামিনে রয়েছেন। এরাবিয়ান সোহেল গত সাত মাস আগে জেল থেকে বের হয়েছেন। আর এক বছর আগে হাতকাটা শাকিল জেল থেকে বেরিয়েছিলেন। বের হয়ে পুনরায় তারা ছিনতাইয়ে নামে। হামিদুল হত্যার সাথে এরা সবাই জড়িত। ঘটনায় ব্যবহৃত একটি চাকু ও ভ্যাটারিচালিত রিক্সা জব্দ করা হয়েছে। আর হামিদুলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হাফিজ জানান, বিভিন্ন কারণে ঢাকা শহরে ছিনতাই কিছুটা বেড়েছে। এর কারণে রাজধানীতে পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। ডিবি পুলিশের ৩৩টি টিম কাজ করছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে অনেকে পুলিশের কাছে আসতে চান না। তিনি ভুক্তভোগীদের অনুরোধ করেন যাতে থানায় গিয়ে মামলা করা হয়। কারণ ডিবি পুলিশ মামলা নিয়ে কাজ করে। গুরুত্ব দিয়ে প্রত্যেকটি মামলা ধরে ধরে কাজ করা হচ্ছে। ছিনতাই কিছুটা বাড়ার ফলে ডিবি পুলিশ গত ১৬ জানুয়ারি থেকে রাজধানীতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে বলেও জানান তিনি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে ডিবি এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, রাজধানীতে কতগুলো ছিনতাই স্পট আর কতগুলো ছিনতাইকারী গ্রুপ আছে তা বলা যাচ্ছে না। তবে ছোট ছোট কিছু গ্রুপ নতুন করে তৈরি হয়েছে। তা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। আবার রাস্তার ধারে যারা নেশা করত তারাও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত হচ্ছে। সেদিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। এদিকে হামিদুল হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের সনাক্তের বিষয়ে ডিবির (রমনা জোন) অতিরিক্ত উপ কমিশনার মিশু বিশ্বাস জানান, ঘটনার দিন একজন হিজরাসহ যে দুই জনকে আটক করা হয়েছিল। মূলত তাদের তথ্য থেকেই ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করা হয়। তারা বলেছিল একজন হাতকাটা রিক্সা চালক ডিশ ব্যবসায়ী হামিদুলকে রিক্সা তুলেছিলেন। পরে হিজরার দেয়া তথ্যমতে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এরপর রবিবার রাতে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয় এলাকা থেকে হাতকাটা শাকিলকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য মতে, সোমবার রাতভর বাকিদের কামরাঙ্গীর চর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, জাসদ নেতা হামিদুল ইসলাম গত ২৫ বছর ধরে সেগুনবাগিচা হাইকোর্ট এলাকায় ক্যাবল নেটওয়ার্কের ব্যবসা করতেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে তিনি সেগুনবাগিচা এলাকায় থাকতেন। ২৩ জানুয়ারি হামিদুল বাসা ভাড়ার টাকা নিয়ে সেগুনবাগিচার বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। ডিবি রমনা বিভাগ এই মামলার ছায়া তদন্তের পর ওই ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়।
×