ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে এনজিওর ঋণ খেলাপির মামলায় শিশুসহ মা কারাগারে

প্রকাশিত: ১৫:১১, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

রাজশাহীতে এনজিওর ঋণ খেলাপির মামলায় শিশুসহ মা কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার মাড়িয়া গ্রামের আব্দুস সালাম ও তার স্ত্রী নিলুফা খাতুন ‘বীজ’ নামের বেসরকারি একটি ঋণদান সংস্থা (এনজিও) থেকে গতবছর এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। বৈশ্বিক মহামারী করোনাকালীন কাজ না পায়ে আব্দুস সালামের সংসারে অভাব অনটন দেখা দেয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়ে এ ঋণ নিয়েছিলেন তারা। তবে করোনার কারণে কাজ করতে না পেরে কিস্তির টাকা বকেয়া পড়ে যায়। সরকারের তরফ থেকে করোনাকালীন কিস্তির টাকা আদায়ে বিরত থাকার জন্য এনজিও গুলোকে নির্দেশ দিলেও সরকারের সেই নির্দেশনা মোটেও আমলে নেননি বেসরকারী সংস্থা বীজ। এদিকে ঋণ খেলাপি দেখিয়ে আব্দুস সালামের স্ত্রীর নামে মামলা দায়ের করে এনজিও বীজ। ওই মামলায় আদালত আব্দুস সালামের স্ত্রীর নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গত রবিবার রাতে দুর্গাপুর থানার পুলিশ আব্দুস সালামের স্ত্রীকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। সঙ্গে এক বছর বয়সী শিশু কন্যাও বাদ যাননি। পুলিশ শিশু কন্যাকে সঙ্গে নিয়েই থানায় নেই। মাত্র এক বছর বয়সে শিশুকে কারাগারে যেতে হবে তা কখনোই ভাবেননি শিশুটির মা-বাবা। এ নিয়ে সোমবার দিনভর দুর্গাপুর সদরে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা। এনজিওর মানবিকতা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝেও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিলুফা বেগমের স্বামী আব্দুস সালাম জানান, সাংসারিক নানা দায়-দেনার কারণে দুর্গাপুর উপজেলা থেকে পরিচালিত ‘বীজ’ নামের এনজিও থেকে নিজ স্ত্রী নিলুফা বেগমের নামে জনতা ব্যাংক দুর্গাপুর শাখার অনুকুলে চেক জমা জমা দিয়ে মাসিক কিস্তিতে একলাখ টাকা ঋণ নেন। ঋণ নেওয়ার পর থেকে নিয়মিত ভাবে এনজিওর মাষ্টারের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা মাসিক কিস্তি পরিশোধ করতে থাকেন। সহায় সম্বলহীন হত দরিদ্র আব্দুস সালাম দিনমজুরি করে একদিকে পরিবার পরিজনদের দিনে দু’মুঠো ডাল ভাত, পরিধেয় বস্ত্র এবং চিকিৎসার খরচ অন্যদিকে এনজিওর কিস্তির টাকার জোগাড় করতে অতিরিক্ত পরিশ্রম ও মানসিক টেনশনে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে প্রায় দেড়মাস চিকিৎসাধীন থাকেন আব্দুস সালাম। জমানো কিছু টাকা সেইসঙ্গে ধার-কর্য ও এলাকার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগীতা করে চিকিৎসার খরচ ব্যবস্থা করে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরেন। বাড়ীতে ফেরা মাত্রই এনজিওর কর্মী ও ম্যানেজার মহিরুল ইসলাম এসে কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ শুরু করেন।দ্রুত টাকা পরিশোধ না করলে মামলা করে জেলের ভাত খাওয়াবে বলেও হুমকি দেন। আব্দুস সালাম বলেন, এনজিওর চাপের মুখে ও মামলার ভয়ে এলাকার সুদখোর মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে এনজিওর ম্যানেজারকে আরেকটি কিস্তি দেন। পরের মাসে সুদখোর মহাজনের চাপে সুদের টাকা দেওয়ায় এনজিওর কিস্তি দিতে অপারগতা প্রকাশ করে আব্দুস সালাম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ‘বীজ’ এনজিওর দুর্গাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মহিরুল ইসলাম আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফার বেগমের জমা রাখা জনতা ব্যাংকের চেক ডিজনার করে নিলুফা বেগমকে আসামী করে রাজশাহী চিফ জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করেন। এরপর করোনাভাইরাসের প্রভাব আসলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি আব্দুস সালাম দিশেহারা হয়ে পড়েন। টাকার অভাবে শহরে গিয়ে আদালতে হাজিরা দিতে না পারায় বিজ্ঞ আদালত হত দরিদ্র দিনমজুর আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফা বেগমের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। এতে গত ২৪ জানুয়ারি রাত ১২ টার দিকে দুর্গাপুর থানা পুলিশ মাড়িয়া গ্রামের নিজবাড়ি থেকে আব্দুস সালামের স্ত্রী নিলুফাকে গ্রেফতার করে। এক বছরের শিশু সানিয়াকে নিয়ে অসহায় মা নিলুফা বেগম থানায় রাতভর আটক থাকার পর সোমবার সকালে সানিয়াসহ মা নিলুফা বেগমকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করে দুর্গাপুর থানা পুলিশ। এনজিওর ঋণের কিস্তির টাকা দিতে না পারায় এক বছরের দুধের বাচ্চাসহ মাকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানোর বিষয়টি এলাকাবাসী মেনে নিতে পারেন নি। এলাকাবাসীর মাঝে এ নিয়ে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। এনজিওর কর্মী ও শাখা ব্যবস্থাপকেএ প্রতি এলাকাবাসী এখন ক্ষিপ্ত। দুর্গাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাশমত আলী বলেন, আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা থানায় আসায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। তবে আসামীর একবছরের দুধের শিশু থাকায় পুলিশ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে গ্রেফতারের পর শিশুকন্যাসহ আসামী নিলুফা বেগমকে থানা হাজতে না রেখে অফিসারদের ডিউটির কক্ষে যত্নসহকারে রাতটুকু রেখে সকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরন করা হয়েছে। ‘বীজ’ এনজিওর দুর্গাপুর শাখার ব্যবস্থাপক মহিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হন নি।
×