ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাল চসিক নির্বাচন

প্রচারের শেষদিনে সেøাগানে মুখর অলিগলি

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

প্রচারের শেষদিনে সেøাগানে মুখর অলিগলি

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে সোমবার ছিল মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচারের শেষদিন। মধ্যরাতে শেষ হয়েছে নির্বাচনী প্রচার। ফলে স্লোগানে স্লোগানে মুখর থাকে মহানগরীর অলিগলি। দিনটি অতিবাহিত হয় ভোটের আমেজে। একইসঙ্গে উৎকণ্ঠাও ছিল প্রার্থীদের মধ্যে। দফায় দফায় থেমে যাওয়া প্রত্যাশার এই ভোট আগামীকাল বুধবার। ভোটগ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ইভিএমে (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) ভোট হবে বিধায় হয়েছে মক ভোটিং। প্রচারের শেষদিনেও ছিল আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ অভিযোগেরই সত্যতা মেলেনি বলে জানিয়েছে ইসি কার্যালয়। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বি দল ও প্রার্থীদের মধ্যেও এখন একেবারে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। কারণ ভোটযুদ্ধ একেবারেই সন্নিকটে। সোমবার প্রচারের পাশাপাশি ভোটের কৌশল নির্ধারণেও ব্যস্ত সময় কাটান প্রার্থীরা। এর মধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে ভোট কেন্দ্র ও বুথগুলোতে পোলিং এজেন্ট চূড়ান্ত করার কাজ। এদিন উভয় পক্ষের সংবাদ সম্মেলনও হয়, যেখান থেকে উঠে আসে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা অভিযোগ। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে খানিকক্ষণ অবস্থান করতেও দেখা যায়। তবে এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া অর্ধ শতাধিক আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের অধিকাংশই সত্য প্রমাণিত হয়নি বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে অভিযোগ ও আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশী নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে। শেষ পর্যন্তও ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে নির্বাচন কমিশন বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। এ লক্ষ্যে ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী মহানগরীতে মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর বিপুলসংখ্যক সদস্য। গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে বসেছে চেকপোস্ট। সোমবার রাত থেকেই সীমিত হচ্ছে নগরীতে যানবাহন চলাচল। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী সোমবার ব্যাপক গণসংযোগ চালান বহদ্দারহাটসহ সংলগ্ন বড় এলাকাজুড়ে। চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনসহ নগর আওয়ামী লীগের নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। প্রার্থী এবং নেতৃবৃন্দ ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি তুলে ধরেন বর্তমান সরকারের সময়ে চট্টগ্রামে ব্যাপক উন্নয়ন এবং প্রতিশ্রুতি সম্বলিত প্রচারপত্র। তারা মূলত উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরই জয়যুক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে উল্লেখ করে ভোট প্রার্থনা করেন। রেজাউলের পক্ষে ভোট প্রার্থনা তারকাদের ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে সোমবারও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রচার চালান রাজধানী থেকে আসা চলচ্চিত্র তারকারা। তারা ভ্রাম্যমাণ মঞ্চে আরোহণ করে নগর চষে বেড়ান। নিজেরাই স্লোগান ধরেনÑ ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা/শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’ মহানগরীর কাজির দেউড়ি, জামালখান ও আন্দরকিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়কে তারা এ প্রচার চালান। প্রচারে ছিলেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, রিয়াজ, চিত্র নায়িকা পূর্ণিমা, অরুনা বিশ^াস, বিজরি বরকত উল্লাহ, তানভিন সুইটি এবং অন্য শিল্পীরা। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোনের আহ্বানে তারা চট্টগ্রামে এসে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। চিত্র নায়ক রিয়াজ বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে চট্টগ্রামে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, যা শহরে প্রবেশ করলেই বোঝা যায়। রেজাউল করিম চৌধুরী বিজয়ী হলে এ উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। চিত্রনায়ক ফেরদৌস ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি শেখ হাসিনা ও নৌকাকে ভালবাসি। আপনারাও শেখ হাসিনাকে ভালবেসে নৌকায় ভোট দিয়ে রেজাউল করিমকে মেয়র নির্বাচিত করুন। প্রায় একই বক্তব্য নায়িকা পূর্ণিমার। তিনি বলেন, আমি চট্টগ্রামের মেয়ে। এখানকার পরিবর্তন আমি নিজ চোখে দেখেছি। নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হলে এ ধারা অব্যাহত থাকবে। তাই আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিজয়ী করতে হবে। নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ ডাঃ শাহাদাতের ॥ বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন অভিযোগ করেছেন, মাস্তান, সন্ত্রাসী আর অতি উৎসাহী পুলিশ কর্মকর্তারা নানাভাবে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করছেন। পরিকল্পিতভাবে হামলা, মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। সোমবার দলের মহানগর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, রবিবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬৯ নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও বাসায় বাসায় চলছে তল্লাশি ও ধরপাকড়। উদ্দেশ্য বিএনপির নেতাকর্মী এবং ভোটারদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করা, যাতে তারা ভোটকেন্দ্রে না যায়। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীদের নামে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় ১০টি মামলা হয়েছে। গত ১৯ তারিখ থেকে এই মামলা ও গ্রেফতার শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১ হাজার জনকে মামলার আসামি করা হয়েছে। পুলিশের হয়রানি থেকে মহিলা, শিশুরা পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রবিবার রাতে বাকলিয়া থানায় মহিলা দল নেত্রী মুন্নি ও তার ১২ বছরের শিশুকে ধরে নিয়ে গেছে। নাগরিক ঐক্য পরিষদের বীর মুক্তিযোদ্ধা একরামুল করিম ও তার ছেলেকে রাত সাড়ে ১২টায় বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় চকবাজার থানা পুলিশ। রাত দেড়টায় তাদের থানা থেকে মুক্ত করেছি। জনবিচ্ছিন্ন বলেই বিএনপি প্রার্থীর সিকিউরিটি প্রয়োজন ॥ সোমবার নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর পক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং নেতৃবৃন্দ। এ সময় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি ঘুম থেকে উঠেই ষড়যন্ত্র দেখে। বিএনপির চোখ কখনও আলো দেখে না। এটি ষড়যন্ত্রের পার্টি। তাই বিএনপি চক্রান্ত দেখবেই। তাদের চোখ কখনও জনগণ দেখে না। জনগণের চেয়ে বিচ্ছিন্ন বলেই তাদের জন্য সিকিউরিটির প্রয়োজন হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ জনগণের দল এবং জনগণের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের প্রার্থীর পক্ষে জনগণ আছে, জনগণই নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ হোসেন বলেন, আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ^াস করি। তারা ভোট দিলে জিতব, না দিলে হারব। নির্বাচনে চট্টগ্রামের জনগণ তাদেরই উন্নয়নের স্বার্থে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে জয়যুক্ত করবে বলে তিনি জোরালো আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদ সেলিম মাহমুদ, বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহজাদা মহিউদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন।
×