ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্লাস্টিক পণ্য রফতানি

প্রকাশিত: ২০:৪৫, ২৬ জানুয়ারি ২০২১

প্লাস্টিক পণ্য রফতানি

দেশে নানাবিধ প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা বাড়ছে দিন দিন। গরিব থেকে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত এমনকি ধনীরাও বর্তমানে বিবিধ আকর্ষণীয় প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী দৈনন্দিন ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। সংসারে ব্যবহার্য যেসব পণ্য আগে তৈরি হতো মাটি দিয়ে অথবা এ্যালুমিনিয়ামে- সেসব ভঙ্গুর ও মহার্ঘ হওয়ার কারণে বিদায় নিয়েছে অনেক আগেই। কাঁচ কিংবা চিনামাটির সামগ্রী দামী হলেও সেসবও ভঙ্গুর এবং দৈনন্দিন রক্ষণাবেক্ষণও দুরূহ। তুলনায় প্লাস্টিকের তৈরি পণ্য দামে সাশ্রয়ী, প্রায় সবার নাগালের মধ্যে, সর্বোপরি টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী। পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক ক্ষতিকর হলেও অন্যবিধ পণ্যের সঙ্গে প্রধানত মূল্য প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে এসব পণ্য। তদুপরি প্লাস্টিক দিয়ে ছাঁচ ও ঢালাইয়ের মাধ্যমে দৈনন্দিন ব্যবহার্য সম্ভার ছাড়াও প্রায় সর্ববিধ পণ্য উৎপাদন সম্ভব। যেমন- খেলনা, বালতি, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। সেসব দেখতেও সুন্দর, রঙ্গিন দামে কম সর্বোপরি সহজে ভাঙ্গে না বলে দীর্ঘস্থায়ী হয়। প্লাস্টিক প্রকৃতিতে পচনশীল না হলেও একে টুকরো টুকরো করে গলিয়ে পুনর্ব্যবহার সম্ভব এবং তা হচ্ছেও। আগে যেসব পণ্য তৈরি হতো পাট থেকে যেমন- চটের কাপড়, দড়ি, চটের থলে সেসবের উৎপাদন খরচ বেশি বলে বিকল্প হয়ে উঠেছে প্লাস্টিক। সর্বোপরি বাংলাদেশের প্লাস্টিক পণ্যের মানও উন্নত ও দৃষ্টিনন্দন। যে কারণে এসবের রফতানির সম্ভাবনাও উজ্জ্বল, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেমন- ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে, নেপাল ও ভুটানে। এসব দিক বিবেচনায় দেশে প্রথম কেরানীগঞ্জে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইপিইটি)। এটি প্রতিষ্ঠার অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো- প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন শিল্পের জন্য দক্ষ জনবল তৈরিসহ আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব তৈরি। বর্তমানে দেশে ছোট-বড় সাড়ে তিন হাজার প্লাস্টিক শিল্প কারখানা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে বড় শিল্পকারখানা অর্ধশত। এক্ষেত্রে বিপুল কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা সমুজ্জ্বল। বর্তমানে দেশে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে। মাথাপিছু ব্যবহৃত হচ্ছে ৫-৭ কোটি প্লাস্টিক পণ্য। আগামীতে ২০৩০ সাল নাগাদ যা দাঁড়াবে মাথাপিছু ৩৫ কেজিতে। আন্তর্জাতিক বাজারে এর রফতানির সম্ভাবনাও বিশাল। ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ৮৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রফতানির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। সুতরাং প্লাস্টিক সামগ্রীকে আর উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আন্তঃবাণিজ্য ও কানেকটিভি স্বভাবতই বেশি। তদুপরি দুই দেশের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রবন্দর, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন, রেল ও মহাসড়ক যোগাযোগ, যা ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গেও সম্প্রসারিত করছে বাণিজ্যিক সুবিধা। এছাড়াও রয়েছে বাংলাদেশী পণ্যের অবাধ প্রবেশের নিশ্চয়তা উত্তর-পূর্বের ৭টি রাজ্যসহ অন্যান্য অংশে। এও সত্য যে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার বাংলাদেশ। এসব অঞ্চলে প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রফতানির বিপুল সম্ভাবনা। উল্লেখ্য, ২০১১ সালে ভারত বাংলাদেশকে অস্ত্র ও মাদক বাদে প্রায় সব পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়। ভারতে পোশাক রফতানি আরও বাড়তে পারে যদি সে দেশের কাপড় ব্যবহারসহ ডিজাইন ও নক্সায় আরও বৈচিত্র্য আনা হয়। নেপাল, ভুটানও এ ক্ষেত্রে হতে পারে বড় বাজার। পারস্পরিক প্রতিবেশী দেশগুলোর বাণিজ্য আরও সহজীকরণে স্থলবন্দর, রেলপথ, সড়কপথসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে। বাণিজ্য কার্যক্রমের জন্য এক স্থানে সব সুবিধা (সিঙ্গেল উইনডো ফ্যাসিলিটিজ) দেয়ার বিষয়টিও বিবেচনা করা যেতে পারে।
×