ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা

প্রকাশিত: ১৯:২৪, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা

স্পোর্টস রিপোর্টার॥ কি দুর্দান্ত শুরুই হল অধিনায়ক তামিম ইকবালের! নিয়মিত অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মতুর্জার উত্তরসূরী হিসেবে এবারই প্রথম কোন সিরিজ ছিল তার। সেই সিরিজে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে বাংলাদেশ। আজ চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে উইন্ডিজকে ১২০ রানের বিশাল ব্যবধানে বিধ্বস্ত করে টাইগাররা। এর আগে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হওয়া প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটে এবং দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৭ উইকেটে জয় পায় তামিমের দল। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশকিছু রেকর্ডের জন্ম দিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৯৭ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তামিম ৬৪, সাকিব আল হাসান ৫১, মুশফিকুর রহিম ৬৪ ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৬৪ রান করেন। জবাবে ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানেই গুটিয়ে যায় উইন্ডিজ ইনিংস। ইনজুরি কাটিয়ে এ ম্যাচে ফিরেই ঝলক দেখান ডানহাতি পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, তিনি ৫১ রানে নেন ৩ উইকেট। চলতি সিরিজে প্রথমবার আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা একেবারেই ভাল হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ওভারেই শুন্য রানে সাজঘরে ফেরেন লিটন। কিন্তু পরবর্তীতে তরুন নাজমুল হোসেন শান্তও ৩০ বলে ৩ চারে ২০ রান করে আউট হন। শেষদিকে সৌম্য সরকার ৮ বলে ৭ করে রানআউট হয়ে যান। বাংলাদেশের ইনিংসে এ তিনটিই ছোট রানে শেষ হওয়া ইনিংস। তামিম-সাকিব তৃতীয় উইকেটে ৯৩ রানের বড় জুটি গড়ে দলকে ভাল একটি ভিত দেন। তামিম সাগরিকায় প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রানের মাইলফলক পেরিয়ে যান ক্যারিয়ারের ৪৯তম ফিফটি হাঁকিয়ে। তিনি ৮০ বলে ৩ চার, ১ ছক্কায় ৬৪ রান করে বিদায় নেন। এরপর সাকিব-মুশফিক জুটি ৪৮ রানের জুটি গড়লে বড় সংগ্রহের পথ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সাকিব ৮১ বলে ৩ চারে ৫১ রান করে সাজঘরে ফেরেন। এটি ছিল তার ৪৮তম ফিফটি। এর মাধ্যমে দেশের মাটিতে ৩ ফরমেট মিলিয়ে ৬ হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে যান তিনি তামিম ও মুশফিকের পর তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে। তবে বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরমেট মিলিয়ে ৬ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের একমাত্র গর্বিত মালিক হয়ে যান এর মাধ্যমে। শেষদিকে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ ঝড় তোলেন। ৫৮ বলে ৭২ রানের জুটি হয় তাদের। তাদের ব্যাটিংয়ে শেষ ৫ ওভারে ওঠে ৫৭ রান। মুশফিক ৫৫ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রান করার পর সাজঘরে ফেরেন। মাহমুদুল্লাহ ছিলেন শেষ পর্যন্ত। তিনি কিওন হার্ডিংকে ছক্কা হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের ২২তম ফিফটি পূর্ণ করেন। বাংলাদেশ ৬ উইকেটে তোলে ২৯৭ রান। মাহমুদুল্লাহ ৪৩ বলে ৩ চার, ৩ ছক্কায় ৬৪ রানে অপরাজিত থাকেন। এটি সাগরিকায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। তবে সার্বিকভাবে এ মাঠে এটি কোন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে সফরকারী শ্রীলঙ্কা ২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭ উইকেটে ৩০৯ রান করেছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেটিই এ ভেন্যুর সেরা, এরপরই বাংলাদেশের আজকের ইনিংস। তবে এক ইনিংসে ৪টি অর্ধশতাধিক রান করলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা তৃতীয়বারের মতো। এর আগে স্কটল্যন্ডের বিপক্ষে নেলসনে ২০১৫ সালে ৪ ফিফটি ও ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ফিফটি ও ১ সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা। এদিন তামিম, মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ- ৩ জনই ৬৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। এটিও এক অনন্য রেকর্ড। ৩ ব্যাটসম্যানের একই সংখ্যার অর্ধশতাধিক রান এই প্রথম ওয়ানডের এক ইনিংসে দেখা গেল। অভিষেকেই এক লজ্জার রেকর্ড গড়েছেন উইন্ডিজ পেসার কিওন হার্ডিং। ১০ ওভারে ৮৮ রান দিয়েছেন। উইন্ডিজ ক্রিকেট ইতিহাসে এর আগে এত রান দেননি কোন অভিষিক্ত বোলার। এরপরও দুই পেসার রেমন রেইফার ও আলজারি জোসেফ ২টি করে উইকেট নেন। জবাব দিতে নেমে আগের দুই ম্যাচের মতোই বিপর্যস্ত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। তবে এদিন তাদের বিপর্যয় এনেছেন পেসাররা। মুস্তাফিজুর রহমান যথারীতি শুরুতেই আঘাত হেনেছেন। আর দীর্ঘদিন পর ইনজুরি কাটিয়ে ফেরা সাইফউদ্দিন শুরুর ৩ ওভারে ২১ রান দিলেও পরে বোলিংয়ে ফিরে বাকি ৬ ওভারে ৩০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সাকিব এদিন বল হাতে বেশিক্ষণ বোলিং করতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। পরিবর্তে বোলিং করতে এসে মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার ১ উইকেট নেন। এছাড়া মেহেদি হাসান মিরাজ এদিনও তার অফস্পিনে কার্যকর ভূমিকা রেখে ২ উইকেট তুলে নেন। দীর্ঘদিন পর ফেরা ডানহাতি পেসার তাসকিন দুর্দান্ত বোলিং করেন শুরুতে। পরে তিনিও রেইফারকে সাজঘরে ফেরত পাঠালে ক্যারিবীয়দের ইনিংসে সমাপ্তি ঘটে। যথারীতি লড়াইটা করেছেন শুধু রোভম্যান পাওয়েল। তিনি ৪৯ বলে ২ চার, ২ ছক্কায় ৪৭ রানের একটি দ্রুতগতির ইনিংস খেলে আউট হয়ে গেলে হার নিশ্চিত হয়ে যায় উইন্ডিজের। রোভম্যানের আগে এনক্রুমাহ বোনার ৬৬ বলে ৩১ ও পরে রেইফারে ৪৬ বলে ২৭ রানের ইনিংস দুটি হারের ব্যবধান খুব বেশি কমাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৪৪.২ ওভারে মাত্র ১৭৭ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়দের ইনিংস। মিরাজ ১০ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। ১২০ রানের জয়ে উইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। অলরাউন্ড নৈপুণ্য দেখিয়ে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় হন সাকিব। সংক্ষিপ্ত স্কোর॥ বাংলাদেশ ইনিংস- ২৯৭/৬; ৫০ ওভার (তামিম ৬৪, মুশফিক ৬৪, মাহমুদুল্লাহ ৬৪*, সাকিব ৫১, শান্ত ২০; আলজারি ২/৪৮, রেইফার ২/৬১)। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস- ১৭৭/১০; ৪৪.২ ওভার (রোভম্যান ৪৭, এনক্রুমাহ ৩১, রেইফার ২৭; সাইফউদ্দিন ৩/৫১, মিরাজ ২/১৮, মুস্তাফিজ ২/২৪)। ফল॥ বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী। ম্যাচসেরা॥ মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)। সিরিজ॥ বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী; হোয়াইটওয়াশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সিরিজ সেরা॥ সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
×