ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আমদানিতে ভ্যাট কমানোর প্রস্তাবসহ তিন কর্মসূচী

দাম কমাতে ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কর্মকৌশল

প্রকাশিত: ২২:৪৮, ২৫ জানুয়ারি ২০২১

দাম কমাতে ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কর্মকৌশল

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দাম কমাতে এবার ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কর্মকৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে জরুরী ভিত্তিতে তিনটি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগামী রমজান মাস সামনে রেখে তিনমাস আগে থেকে সহনীয় মূল্যে সব ধরনের ভোজ্যতেল বিক্রি করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরের মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। এতে সাধারণ ভোক্তাদের কষ্ট বেড়েছে। দ্রুত দাম কমাতে তিন কর্মসূচী অনুযায়ী -ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর প্রস্তাব দেয়া হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর)। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্য কোন তারিখে কেমন হওয়া উচিত, তা ঠিক করতে একটি কমিটি করা হয়েছে। এছাড়া মূল্য নিয়ে ব্যবসায়ীদের কারসাজি নিয়ন্ত্রণে বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ ও বিক্রি বাড়ানো হবে। রবিবার দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের সাপ্তাহিক বৈঠকে ভোজ্যতেল আমদানিকারক, মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বৈঠকের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ওই সময় বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। কারসাজি করলে কাউকে ছাড়া হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে কী দাম হওয়া উচিত সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের মধ্যে নজরদারি রাখার জন্য একটা কমিটি করা হয়েছে। ট্যারিফ কমিশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে একটা চুলচেরা বিশ্লেষণ করার জন্য একটা কমিটি করার সিদ্ধান্ত এই মিটিং থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। ব্র্যান্ডভেদে প্রতি পাঁচ লিটারের বোতলজাত ক্যান আগে ৪৭০-৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা দাম বেড়ে ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। এছাড়া প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন ৯০ টাকায় বিক্রি হলেও দাম বেড়ে এখন তা ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্যতেলের লাগাম টেনে ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আগামী তিনমাস পর থেকে রমজান শুরু হচ্ছে। বছরের অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে রমজান মাসে বাড়তি আড়াই থেকে ৩ লাখ টন ভোজ্যতেলের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। এ কারণে এখন তেল আমদানি ও সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে রোজায় বড় ধরনের সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠক শেষে জানানো হয়, ভোজ্যতেল আমদানিতে তিন স্তরে ভ্যাট আদায় করা হয়। এতে করে শুধু ভোজ্যতেলের আমদানি উিউটি ২৫ শতাংশের উপরে। এ কারণে ভ্যাট কমানো গেলে দামের ওপর এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। টিপু মুনশি বলেন, দাম কমাতে এবার সব ধরনের ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমানোর জন্য এনবিআরকে প্রস্তাব দেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভোজ্যতেল ৯০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যায়, সেটার প্রভাব পড়ে। জুলাই মাসে প্রতিটন ৭০০ ডলার ছিল, সেটা ১১০০ ডলারের ওপরে উঠেছে, মাঝখানে ১১৯০ ডলারও হয়েছিল। তার মানে অলমোস্ট ৭৫ শতাংশের ওপরে দাম বেড়েছে। আমাদের দেশেও তার দামের প্রভাব পড়েছে। দেশের বাজারে এখন প্রতিকেজি খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৩০ টাকা, যা তিনমাস আগে ছিল ৯০ টাকা (দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ)। প্রতিলিটার ৯৫ টাকার সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। সাম্প্রতিক সময়ে ভোজ্যতেলের এত মূল্যবৃদ্ধি আগে ঘটেনি। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দাম হওয়া উচিত সেটা নিয়েই আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের রেজাল্ট হলো, কী প্রাইস হলে যৌক্তিক হয়, তার একটা ওয়েআউট করব। ভোজ্যতেল আমদানিতে আগে এক স্তরে ডিউটি থাকলেও চলতি অর্থবছরে সেটা তিন স্তর করা হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানান। হয়রানি ও ঝামেলা এড়ানোর জন্য ডিউটি আবার এক স্তরে নিয়ে আসতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানান ব্যবসায়ীরা। মন্ত্রী বলেন, ব্যবসায়ীরা বলেছেন, যে তিন স্তরে ডিউটিটা নেয়া হয় সেটা এক জায়গায় হলেই তাদের জন্য সুবিধা হয়। সেটার বিষয়ে আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি, উত্তর আসেনি। এখন আবার চিঠি ভ্যাট কমানোর প্রস্তাবসম্বলিত চিঠি দেয়া হবে। এছাড়া সারাবছর বাজারে ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ খোলা ভোজ্যতেল আর বাকিটা প্যাকেটজাত তেল বিক্রি হয় বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়। তেলের মান ও সরবরাহ ব্যবস্থা শৃঙ্খলায় রাখতে আরও বেশি পরিমাণ বোতলজাত তেল বাজারজাত করার চেষ্টা চলছে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। আরও বেশি বোতলজাত করা গেলে দামের হেরফের কম হবে। শুধু দামের জন্য না, কোয়ালিটির জন্যও বোতলজাত হওয়া জরুরী। শিল্প মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে চেষ্টা করছে। এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে এটা একটা পর্যায়ে নিয়ে আসা হবে। ৭০ শতাংশ যেন বোতলজাত করা যায়। নকল মাল থেকেও মানুষ রেহাই পাবে। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভোজ্যতেলসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা হবে। কাউকে সুযোগ নিতে দেয়া হবে না। ভোজ্যতেলে সঙ্কট যাতে না হয় সেজন্য সমস্যার গভীরে গিয়ে আমরা সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি। সকল ব্র্যান্ডের খোলা ভোজ্যতেল কনজ্যুমার প্যাক- বোতলে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে, যাতে সহজেই ব্র্যান্ড চেনা যায় এবং ভেজাল প্রতিরোধ করা যায়। পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল পণ্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আমদানি ও মজুদ করার জন্য ব্যবসায়ীদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় টিসিবির মাধ্যমে প্রতি বছরের মতো সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রয় করবে। এবার পণ্য বিক্রয়ের পরিমাণ বিগত বছরের প্রায় তিনগুণ হবে বলে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন, বাংলাদেশ ট্রেড এ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট-এর পরিচালক মোঃ ওবায়দুল আজম, টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেয়িার জেনারেল মোঃ আরিফুল হাসান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তাবৃন্দ, গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং এনএসআই’র পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।
×