ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চম ধাপে পৌর নির্বাচন : ইসলামপুরের প্রার্থীদের চোখ মনোনয়ন বোর্ডের দিকে

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

পঞ্চম ধাপে পৌর নির্বাচন : ইসলামপুরের প্রার্থীদের চোখ মনোনয়ন বোর্ডের দিকে

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর ॥ পঞ্চম ধাপে জামালপুর জেলার ইসলামপুর পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং অফিসার। এই পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২৮ ফেব্রুয়ারি। নির্বাচনকে ঘিরে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থীদের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। ইসলামপুর পৌরসভার অলিগলিতে এখন শোভা পাচ্ছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রায় ডজন খানেক মেয়র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার, ব্যানার আর নানা রঙের ফেস্টুন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন দলের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। পৌর এলাকা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসেবে নূর ইসলাম, সালাউদ্দিন শাহ, রাকিবুজ্জামান লাভলু, খলিলুর রহমান, ডলি মোশারফ, এস এম জাহাঙ্গীর আলমসহ মনোনয়ন প্রত্যাশী মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় ডজনখানেক হলেও মূলত: আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে তিনজন প্রার্থীর নাম উল্লেখযোগ্য। তারা হলেন ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক শিক্ষাবিদ উপাধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, বর্তমান মেয়র আব্দুল কাদের সেক ও প্যানেল মেয়র অংকন কর্মকার। অপরদিকে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে মো. রেজাউল কমির ঢালী চতুর্থবারের মত নির্বাচনে অংশ নিতে প্রচাণায় রয়েছেন। পরপর তিনবার নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হওয়ায় তার ওপর স্থানীয় পৌরবাসীদের এবার বেশ সুনজর রয়েছে বলেও জানা গেছে। আর এ কারণে আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে সামান্য উনিশ-বিশ হলেই বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উপাধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৬৪ সালের ১ মে বর্তমান ইসলামপুর পৌরসভার গাঁওকুড়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম নিজাম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক। তিনি ইসলামপুর কলেজের জমিদাতা ও গাঁওকুড়া জবেদা খাতুন (তার স্ত্রী) এর নামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক এবং আমৃত্যু আওয়ামী লীগের একজন কর্মী। বাবার পথ অনুসরণ করেই উপাধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ১৯৭৮ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তিনি ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং পরপর দুইবার যুগ্মসাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৯৯৩ সালে কলেজ শিক্ষকতায় যোগদানের পর থেকে অদ্যাবধি তিনি শিক্ষা বিস্তারে নিজ এলাকা ইসলামপুর ছাড়াও ইসলামপুরের সীমান্তবর্তী মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ যমুনার অপর পারের গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা, বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা যুমনার চরাঞ্চলের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তার সাহায্যের বাড়িয়ে দেওয়ায় তার প্রশংসা সর্বমহলে আলোচিত। বিশেষ করে তিনি ইসলামপুর কলেজে উপাধ্যক্ষ এবং ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে অত্র এলাকার তিনবারের জাতীয় সংসদ সদস্য ও মাননীয় ধর্মপ্রতিমন্ত্রী মোঃ ফরিদুল হক খানের সহযোগিতায় কলেজটিতে উচ্চ শিক্ষার দ্বার উম্মোচন করেন। আসন্ন ইসলামপুর পৌরসভা নির্বাচনে তিনি মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। সে লক্ষ্যে তিনি পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সৎ নির্ভিক, বিশ্বস্ত আর জনদরদি এই মানুষটি যেন নৌকার প্রতীক পান এটাই বেশির ভাগ পৌরবাসীর প্রত্যাশা। অপরদিকে টানা দুইবারের মেয়র ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কাদের সেক দীর্ঘ সময় মেয়র থাকাকালীন নানা অনিয়ম, দুর্নীতি, কাউন্সিলরদের সাথে দূরত্ব, সরকারি সম্পদের অপচয় ও আত্মসাৎ এবং বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগে দল থেকে বিচ্ছিন্ন। স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অভিযোগ, মেয়র আব্দুল কাদেরসেক দল থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন, কিন্তু বিনিময়ে তিনি দলের জন্য কিছুই করেননি। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েও সংগঠনের জন্য বা সংগঠনের কোন কর্মসূচিতে তাকে দেখা যায় না। পৌর নির্বাচনের সময় ঘটিয়ে আসায় তিনি দলীয় মনোনয়ন পেতে আবারও দলীয় অফিসে ঘন ঘন আসা যাওয়া করছেন বলেও অনেকেই অভিযোগ করেন। গেল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আব্দুল কাদের সেক দলের প্রার্থীর মনোনয়নে বিরোধিতা করে তথাকথিত মহাজোটের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কাছে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে এ আসনে তাই এটা মহাজোটের প্রার্থীকে ছেড়ে দেওয়া উচিত এমন বক্তব্য প্রদান করেছেন বলেও জানা যায়। দলের প্রতি স্ববিরোধী বক্তব্য প্রদানকারীকে আর কখনো মনোনয়ন দেওয়া উচিত হবে না বলেও অনেকেই মনে করছেন। একজন সুচতুর ও লোভী প্রকৃতির মানুষকে আবারও মেয়র মনোনয়ন দিলে দলের সর্বনাশ হবে বলেও মনে করছেন সচেতন মহল। অপরদিকে আওয়ামী রাজনীতিতে ২০১৬ সালে পর্দাপণ করা পৌরসভাটির প্যানেল মেয়র অংকন কর্মকার দলে ঢুকেই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার সুযোগ পান মেয়র আব্দুল কাদের সেকের আশীর্বাদে। ওই সময় তিনি মেয়র কাদেরের গুপ্ত খাজাঞ্চি দেখভাল করতেন এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতেন। আবার স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে অংকন কর্মকার মেয়র কাদেরের বিরুদ্ধে সকল অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরেন উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকি মেয়র কাদেরকে সাসপেন্ড করানোর সকল পরিকল্পনাও করেছিলেন একসময়। সে যাত্রায় মেয়র কাদের তার শক্তিশালী তদবিরের ফলে রক্ষা পান । অংকন কর্মকার ইতিমধ্যেই পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন। রাজনীতির প্রমোশনে তাকে মেয়র মনোনয়ন প্রাপ্তির বিষয়ে আরও আশাবাদী করে তুলেছে। তাছাড়া পৌর এলাকার সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভোট তিনি একচেটিয়া পাবেন এমন আশাও তার মনে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তার স্বজাতিরা বেশির ভাগই তাকে জটিল প্রকৃতির একজন লোক হিসেবে জানেন এমন কথাও শোনা গেছে। যদিও ইদানীং তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ ও বিভিন্ন জনকে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বাকি প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালালেও ভোটারদের কাছে তাদের খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। শখের বশবর্তী হয়ে আবার কেউ বা ভবিষ্যতের জন্য পরিচিতি পাওয়ার আশায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
×