ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মহাস্থানগড়সহ উত্তরের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে বনভোজনে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ২৩:৩৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

মহাস্থানগড়সহ উত্তরের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে বনভোজনে নিষেধাজ্ঞা

সমুদ্র হক ॥ বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ উত্তরবঙ্গের সকল প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে বনভোজন, রান্না, উচ্চশক্তির শব্দযন্ত্র (লাউড স্পীকার, স্টেরিও সাউন্ড, ডিজিটাল স্টেরিও সাউন্ড, মাইক) ব্যবহার, অযথা হৈ হুল্লোড়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এছাড়াও প্রত্নস্থানের কোন ক্ষতি করা কিংবা ময়লা ফেলে নোংরা করা যাবে না। এই বিধিমালা লঙ্ঘনকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে মামলা দায়ের করা যাবে। তবে পর্যটক ও দর্শনার্থীরা কোন অসুবিধায় পড়লে তাদের নিরাপত্তা দেবে ট্যুরিস্ট পুলিশ। করোনাকালে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনায় পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা ও নিয়ন্ত্রিত ছিল। নতুন স্বাভাবিক অবস্থা শুরু হওয়ার পর পর্যটকদের আগমনে বিধিনিষেধ নেই। শুধু স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে। এর সঙ্গে উল্লেখিত নিষেধাজ্ঞা যোগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, শীতের মৌসুমে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানান, প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তির রাজধানী পুণ্ড্রনগরী খ্যাত মহাস্থানগড় ইউনেস্কোর বিশ^ ঐতিহ্যে (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ) স্থান পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। বর্তমানে বাংলাদেশের তিনটি স্থান- পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ষাটগম্বুজ মসজিদ ও সুন্দরবন বিশ^ ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় মহাস্থানগড়সহ উত্তরবঙ্গ ও পূর্বাঞ্চলের সাতটি প্রত্নস্থানকে বিশ^ ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান দেয়ার জন্য আবেদন করেছে। প্রত্ন নিদর্শন এই এলাকা থেকে প্রত্ন জাদুঘর, রেস্ট হাউস ও প্রত্নবহির্ভূত অবকাঠোমো অন্যত্র নির্দিষ্ট স্থানে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। তবে করোনার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর সূত্র জানায়, মহাস্থানগড়ের চারধারে প্রায় ১১ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে আছে প্রত্নসম্পদ। নওগাঁর পাহাড়পুর বিহার, জগদ্দল বিহার, দিনাজপুরের কান্তজিউর মন্দির, নাটোরের রাজবাড়ি, রংপুরের তাজহাট জমিদারবাড়ি, রাজশাহীর বড়কুঠি, পুঠিয়া জমিদার বাড়ি, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে রবীন্দ্রনাথের কাছারি বাড়ি অন্যতম প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকা। দেশের প্রত্নসমৃদ্ধ সম্পদ রক্ষায় দ্য এ্যান্টিকুইটিজ প্রিজার্ভেশন রুলস ১৯৮৬’র ১০ ও ১১ নম্বর বিধি অনুযায়ী প্রত্নস্থলে উচ্চ শক্তির শব্দযন্ত্র ব্যবহার, উপদ্রব, নাচগান, হৈ হুল্লোড়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। ১২ নম্বর বিধিতে সকল ধরনের ফেরি করা, ১৬ ও ১৭ নম্বর বিধিমতে বনভোজন আয়োজন ও রান্নার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই আইন অমান্য করা হলে প্রত্ন এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও ঐতিহ্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই বিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিধান আছে। এর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের মহাপরিচালক মহাস্থানগড়সহ প্রত্নসমৃদ্ধ এলাকার জেলা প্রশাসনকে বনভোজন ও উচ্চশক্তির শব্দযন্ত্র ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞার চিঠি পাঠিয়েছেন। এদিকে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের চলাচলের সুবিধায় মহাস্থানগড় সংলগ্ন করতোয়া নদীর ওপর দৃষ্টিনন্দন একটি কাঠের সেতু ও আরেকটি কংক্রিটের সেতু নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার ও এডিবির অর্থায়নে মহাস্থানগড়কে পর্যটক আকর্ষণে দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ইতিহাস অনুসন্ধানের কাজ চলমান। গত বছর বগুড়ার ভাসুবিহারে প্রত্নখনন কাজ শুরু হয়। করোনার কারণে তা স্তিমিত হয়। চলতি বছর ভাসুবিহার ও মহাস্থানগড়ের আশপাশে পুনরায় খনন কাজ শুরু হবে। এদিকে পর্যটক আকর্ষণে অধিকতর ব্যবস্থা নিয়ে ২০২১ সালকে আনুষ্ঠানিকভাবে পর্যটক বছর ঘোষণা করার যে আয়োজন ছিল, তাতেও ভাটা পড়েছে। সূত্র জানায়, শীঘ্রই বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হবে।
×