ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নেতাজী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে

প্রকাশিত: ২৩:১৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

নেতাজী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ উপমহাদেশের কিংবদন্তিতুল্য নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্রের দর্শন এবং স্বাধীনতার জন্য তাঁর সশস্ত্র রণনীতি ও রণকৌশল বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল, যার উল্লেখ তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে রয়েছে। মানুষের জন্য নেতাজী এবং বঙ্গবন্ধুর যে ত্যাগ এবং আত্মবলিদান তা কোনভাবেই একটি আলোচনার মধ্য দিয়ে বলে শেষ করা যাবে না। এ দুজন মহান নেতার জীবন ও আদর্শ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। মানব মুক্তির পথ আরও প্রশস্ত করতে হবে। শনিবার উপমহাদেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোগামী নেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মদিন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি উপমহাদেশের এই দুই মহান নেতার প্রতি জানাতে এক ওয়েবিনারের আয়োজন করে। ‘নেতাজী ও বঙ্গবন্ধু : ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেন দেশ বিদেশের বিশিষ্টজনরা। নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। আলোচনায় অংশ নিয়েছেন, এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর শৈশবের বন্ধু অধ্যাপক ক্ষেত্রেশ চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের পুত্র অধ্যাপক মহেশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মুখার্জি তদন্ত কমিশনের অন্যতম সাক্ষী ও কলকাতা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নন্দলাল চক্রবর্তী, নেতাজীর আজাদ হিন্দ ফৌজের গবেষক ও কলকাতার শ্রী শিক্ষায়তন কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক মৈত্রেয়ী সেনগুপ্ত, নির্মূল কমিটির সহ সভাপতি ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম অধিনায়ক লোকমান খান শেরওয়ানীর পৌত্রী শিক্ষাবিদ মমতাজ লতিফ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সেলিম ও নির্মূল কমিটি যশোর শাখার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাজেদ রহমান। সভাপতির বক্তব্যে শাহরিয়ার কবির বলেন, ভারতের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অতুলনীয় বীরত্ব ও আত্মত্যাগ ’৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে। বাংলাদেশের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তার অসমাপ্ত আত্মজীবনী এবং অন্যান্য রচনা ও ভাষণে উল্লেখ করেছেনÑ কীভাবে অখণ্ড ভারতবর্ষের স্বাধীনতার সংগ্রামের মহান নেতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং সূর্য সেন, প্রীতিলতা, বাঘা যতীন প্রমুখ অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক দর্শন ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একই দর্শনের বিশ্বাস করতেন, যা প্রতিফলিত হয়েছে দুই ভ্রাতৃপ্রতিম রাষ্ট্রের সংবিধানে। বঙ্গবন্ধু তার ১০ জানুয়ারির (১৯৭২) ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছেন, দুই দেশের নীতি ও আদর্শের এই মিল হচ্ছে বিশ্বশান্তির জন্য। সমগ্র বিশ্ব আজ ধর্ম, বর্ণ, জাতিসত্তার নামে যুদ্ধ, সন্ত্রাস ও সংঘাতে আক্রান্ত। ১৯৭১-এ পাকিস্তানের সামরিক জান্তা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ নিরস্ত্র নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল ইসলাম ও পাকিস্তান রক্ষার দোহাই দিয়ে। বাংলাদেশ ’৭১-এর গণহত্যাকারীদের বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও পাকিস্তান এখন পর্যন্ত এই গণহত্যার দায় অস্বীকার করছে একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ’৭১-এর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যে উদ্যোগ নিয়েছে আমরা আশা করব স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারত এ ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করবেÑ যেভাবে করেছিল ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে। আমাদের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গণহত্যাকারীদের বিচারের পথ সুগম করবে এবং ভবিষ্যতের গণহত্যাকে নিরুৎসাহিত করবে। ’৭১-এর গণহত্যার জন্য পাকিস্তানী সামরিক জান্তার বিচার না হওয়ার কারণে সে দেশে এখনও বেলুচ, সিন্ধি ও পশতুন জাতিসত্তার ওপর জাতিগত নিধন ও গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে।’ শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, উপমহাদেশে মানব মুক্তির জন্য যে মহান মানুষরা সংগ্রাম করেছেনÑ তাঁদের মধ্যে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সর্বাগ্রে আসে। নেতাজী ঔপনিবেশিক শাসন শোষণের কবল থেকে ভারতবর্ষের মানুষকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র বিপ্লবের পথ বেছে নিয়েছিলেন, একইভাবে বঙ্গবন্ধুও বেনিয়া এবং হানাদার পাকিস্তানী শাসকদের কবল থেকে বাঙালী জাতিকে মুক্ত করার জন্য সশস্ত্র জনযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ে অন্তত তিনবার নেতাজীর কথা বলেছেন। অর্থাৎ কিশোর বয়সেই বঙ্গবন্ধু নেতাজীর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বাংলাদেশে নিয়োজিত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেন, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনস্বীকার্য ক্যারিশমা এবং তাদের ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা যুগ যুগ ধরে ভারতীয় ও বাংলাদেশীদের অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তিনি আজাদ হিন্দ ফৌজ সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতাজীর বীরত্বপূর্ণ প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করেন, যা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ-এর ভাষণ বাংলাদেশের মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেনÑ বিশ্ব ব্যক্তিত্বের এই ত্যাগ তরুণ প্রজন্মকে জাতি গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করতে অনুপ্রাণিত করবে। আজ ভারত ও বাংলাদেশ কেবল উন্নয়নের নিবিড় অংশীদার নয়, আমরা মানব মুক্তির অভিন্ন সংগ্রামেরও অংশীদার একথা উল্লেখ করে দোরাইস্বামী বলেন, ‘প্রতিবেশীই প্রথম’ নীতিমালায় ভারত ভারতে তৈরি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে। তিনি আরও বলেন যে, ভারত ও বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী কোভিড মহামারী মোকাবেলায় একসঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। ওয়েবিনারে অংশগ্রহণকারী অন্য বক্তারা বলেন, নেতাজী ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন যুদ্ধ-সন্ত্রাস কবলিত বর্তমান বিশ্বে বহু সমস্যার সমাধান করতে পারে। ভারত ও বাংলাদেশের পাঠ্যপুস্তকে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও দর্শন তুলে ধরতে হবে, যাতে নতুন প্রজন্ম এই দুই মহান নেতার স্বপ্ন, নেতৃত্ব এবং আত্মত্যাগের মহিমা সম্পর্কে জেনে আলোকিত হতে পারে।
×