ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা ॥ কোটি কোটি টাকার ফান্ড

বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডের অপতৎপরতা

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডের অপতৎপরতা

শংকর কুমার দে ॥ দেশে ও বিদেশে ‘প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড’ তৈরি করে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার শুরু করেছে বিএনপি-জামায়াত। দেশে ও বিদেশে কাজ করতে মাঠে নামানো হয়েছে তাদের অর্ধ শতধিক প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড। এই স্কোয়াডের কাজই হচ্ছে অপপ্রচার ও গুজব ছড়িয়ে দিয়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রীতিমতো ছক কষে অপপ্রচার চালাচ্ছে দেশ-বিদেশে তৈরি করা তাদের স্কোয়াড। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য ব্যায় করার জন্য গঠন করা হয়েছে কোটি কোটি টাকার ফান্ড। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ সরকার ও স্বাধীনতা পক্ষের প্রগতিশীল শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করার হাতিয়ার হিসাবে তৈরি করা হয়েছে প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিএনপি-জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে তৈরি করা হয়েছে প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড। দেশের ভেতরে কাজ করছে বিএনপি-জামায়াতের উগ্রপন্থী কর্মীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক, ইউটিউবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কন্টেন্ট ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এই কন্টেন্টগুলো রাষ্ট্র এবং সরকারকে আক্রমণাত্মক কিছু আপলোড করার মুহূর্তের মধ্যেই মানুষের মোবাইলে ছড়িয়ে পড়ছে। পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত শিবিরের কর্মীরা এটাকে ভাইরাল করছে। কন্টেন্টগুলোকে বুস্ট করা হচ্ছে। সুপরিকল্পিত নীল নক্সার মাধ্যমে প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড পরিচালনা করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে সমস্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এসব কনটেন্ট ছড়াচ্ছেন তারা সবাই তথ্য প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে চাকরি করতেন এমন কর্মীদেরও নিয়োগ করা হয়েছে। দেশে অনৈতিক ও অপরাধমূলক কর্মকা-ের জন্য অভিযুক্ত হয়ে দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন এমন ব্যক্তিদেরও কাজে লাগানো হয়েছে। বিদেশে বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে গিয়ে তারা ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক ইত্যাদির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিরোধী, সরকার বিরোধী, প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। এমনকি স্বাধীনতার বিরুদ্ধেও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে ও যুক্তরাজ্যে স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী তাদের দোসর ও বংশধর এই প্রজন্মের তরুণ-যুবকদের প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডে নিয়োগ করা হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুক ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনভাবে প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হচ্ছে যে কেউ মোবাইল ফোন ওপেন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গেলেই নানা কৌশলে অপপ্রচারের বার্তা পৌঁছানোর জন্য ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। সারাদেশে যে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং হতে যাচ্ছে তাতে জামায়াতের কোন প্রার্থী নেই। বিএনপির প্রার্থীদের গোপনে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। এরপরও সারাদেশেই বিএনপির প্রার্থীদের ভরাডুবি। আন্দোলনেও মাঠে নেই বিএনপি-জামায়াত। এমনকি জামায়াত প্রকাশ্যে বিএনপির মাঠের রাজনীতিতে রাজপথে নামার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে আসছে। বিএনপি-জামায়াতের উগ্রপন্থী গ্রুপগুলোই এখন নীল নক্সা তৈরি করে অপপ্রচার ছড়াতে কাজ করে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে মাঠের রাজনীতিতে পেরে উঠছে না বিরোধীপক্ষ জামায়াত-বিএনপি। মাঠের রাজনীতিতে ব্যর্থ হয়ে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করছে তারা। বিশেষ করে ভার্চুয়াল মাধ্যমকে একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপি জামায়াতে ইসলামী। এ জন্যই গড়ে তোলা হয়েছে সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা স্কোয়ার্ড। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, দেশের ভেতরে ও বিদেশে বসে স্বাধীনতার পক্ষের প্রগতিশীল শক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কাজে লাগানো হয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীকে। বিএনপি-জামায়াতের প্রশিক্ষিত তরুণ, যুবকদের নিয়ে গঠিত প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডের জন্য ফান্ড গঠন করা হয়েছে কোটি কোটি টাকার। প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডের মধ্যে যারা কাজ করছে তাদের বেতন, ভাতা, ভরণ, পোষণসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। দেশ ও বিদেশ দুই মাধ্যম থেকেই কোটি কোটি টাকার ফান্ড আনা হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই মূলত: সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে দেশে অস্থিতিশীল ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করার চক্রান্তে গঠিত হয়েছে প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী নানা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইতিহাস বিকৃত করাসহ সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে বিষোদ্গার করা হচ্ছে। সরকারকে বেকায় ফেলতে সামনে আনা নানা ইস্যু তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। যা ট্রল করেন এক শ্রেণীর মানুষ। এসব অপপ্রচারের প্রায় প্রতিটি কন্টেন্টের সূত্রপাত হয়েছে বিদেশে। যার কারণে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারছে না। কনটেন্টগুলো বিদেশ থেকে আসায় আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধেও মাঝে মধ্যেই নানা ধরনের বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচার ছড়িয়ে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে ধর্মীয় ইস্যু সামনে এনে জনগণকে ফুঁসলিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর আগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনের নামে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার অপতৎপরতা চালায় জামায়াতের সাইবার টিম। এর আগে বাম ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে ঢুকে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত ও বিএনপি। সরকারকে মারমুখী অবস্থানে আনতে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের মধ্যে উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ নানা সঙ্কটের মোকাবেলা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার এই ধরনের সমস্যাকে মোকাবেলা করে উন্নয়নের কর্মকা- করে মানুষজনের কাছে গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয়তা অর্জন করার ধারাবাহিকতা বজায়ে রেখেছে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক নির্মূল, রোহিঙ্গা সমস্যা মোকাবেলা করে সফলতা অর্জন ও প্রশংসা কুড়িয়েছে তখনই ডিজিটাল পদ্ধতিতে অপপ্রয়োগের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য মাধ্যমে অপপ্রচার ছড়িয়ে দিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডা। সম্প্রতি হেফাজতের ব্যানারে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ নিয়ে প্রোপাগান্ডা চালিয়ে সারাদেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি কোথাও কোথাও অপ্রীতিকর ও অনাকক্সিক্ষত ঘটনাও ঘটানো হয়েছে। এর মধ্যে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাংচর করানোর ঘটনার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম খুললেই এখন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বিরোধী নানা রকম তথ্য প্রোপাগান্ডা গুজব পাওয়া যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে কোন ধরনের আইনী পদক্ষেপ নেয়ার অভাবে এই ধরনের অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানোর বিষয়টি ক্রমেই দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি পাকিস্তানের প্রেতাত্মা বা রাজাকার ও তাদের বংশধর যারা তরুণ ও যুবক বয়সের এই প্রজন্মের তারা বিএনপি-জামায়াতের হয়ে প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডে কাজ করে যাচ্ছে। এই স্কোয়াডের সদস্যরাই অতিতে নিরাপদ সড়কের দাবিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়েছে। এর আগেও একাধিক অরাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলন ঘিরে অপরাজনীতি করেছে বিএনপি-জামায়াত। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের জন্য বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বা মূর্তি ইস্যুকে সামনে এনে ইসলামপন্থী দলগুলোকে মাঠে নামিয়েছে বিএনপি-জামায়াত। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে পূর্ব পরিকল্পিত নীল নক্সা অনুযায়ী প্রোপাগান্ডা স্কোয়াড গঠন করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। অপপ্রচার প্রোপাগান্ডা গোষ্ঠীতে আছে, যুদ্ধাপরাধী, জামায়াত, উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ও বিএনপির উগ্রপন্থী পরিচিত গোষ্ঠী। দেশে বড় ধরনের নাশকতা, নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের প্রোপাগান্ডা। সরকারের পক্ষ থেকে এই প্রোপাগান্ডা স্কোয়াডের দিকে সতর্ক নজরদারি করা হচ্ছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার দাবি।
×