ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকাকে দৃষ্টিনন্দন হিসেবে গড়ে তোলা হবে ॥ তাজুল

মেঘনা নদীকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ২৩:১২, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

মেঘনা নদীকে নিয়ে পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরির উদ্যোগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা শুধু বাসযোগ্য নয় দৃষ্টিনন্দন এবং বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এজন্য রাজধানীর খালসমূহ দখলমুক্ত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে হাতিরঝিলের আদলে নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম। একইসঙ্গে ঢাকাবাসীর জন্য ভবিষ্যতে বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে মেঘনা নদীকে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা ওয়াসার উদ্যোগে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীতব্য ‘মেঘনা নদীর মাস্টারপ্ল্যান’ শীর্ষক এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী এসব কথা জানান। মেঘনা নদীকে দখল, দূষণ এবং নাব্য সঙ্কট থেকে রক্ষা করতে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ এই মাস্টারপ্ল্যান করা হচ্ছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি চার লাখ টাকা। প্রকল্পটি চুক্তি পরবর্তী ১৮ মাসে সম্পন্ন করা হবে। মাস্টারপ্ল্যানটির বাস্তবায়ন করবে সরকারের এ সংশ্লিষ্ট নানা সংস্থা। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও প্রকৌশলী তাকসিম এ খান, স্থানীয় সরকার বিভাগ, ওয়াসা এবং ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডব্লিউএম) এর কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, ওয়াসা থেকে দুই সিটি কর্পোরেশনকে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা এবং খালের দায়িত্ব দেয়ার পরেই দুই মেয়র অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে দিয়েছেন এবং কার্যক্রম চলমান আছে। এছাড়া ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে দখলমুক্ত, দূষণরোধ এবং নাব্য বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কাজ চলছে। তিনি বলেন, খালসমূহ এবং নদীর দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে পরিকল্পিতভাবে ঢাকাকে শুধু বাসযোগ্যই নয়, আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন এবং বিনোদন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হবে। মন্ত্রী জানান, পদ্মা, বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরী, বালু ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে এবং সে অনুযায়ী কাজ চলছে। এছাড়াও সরকার তুরাগসহ ঢাকার অদূরে বেশ কিছু নতুন শহর গড়ার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তাজুল ইসলাম বলেন, মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোগ বেড়েছে আর এ কারণেই ময়লা আবর্জনার পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নদ-নদী, খালসমূহে বিভিন্ন ধরনের বর্জ্য নিষ্কাশন হওয়ার ফলে পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছে যা আমাদের জন্য খুবই উদ্বেগের বিষয়। তিনি বলেন, মেঘনা নদীর পানি দূষণমুক্ত রাখার লক্ষ্যে মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের জন্য আজকের এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আশা করি সকলের সমন্বিত উদ্যোগে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। এলজিআরডি মন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করার পর নদীরক্ষাসহ অনেক জাতীয় কর্মসূচী হাতে নিয়েছিলেন। নদীপথ ব্যবহার করেই বিভিন্ন অঞ্চলে মানুষের চলাচলের পাশাপাশি পণ্য আনা নেয়া করা হতো। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক সময় পিছিয়ে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত দূরদর্শী এবং গতিশীল নেতৃত্বের কারণে দেশ এখন অর্থনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। দেশ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের আগেই উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে রূপান্তরিত হবে। অনুষ্ঠান শেষে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান সাংবাদিকদের মেঘনা নদীর মাস্টারপ্ল্যানের চুক্তি সম্পর্কে বলেন, আজকের এ চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভবিষ্যতে মেঘনা নদীর পানিকে দূষণের হাত থেকে রক্ষার বিশেষ উদ্যোগ। বর্তমানে আমরা ঢাকাবাসীর পানির চাহিদা মেটাতে শীতলক্ষ্যাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলো এবং মেঘনা নদী থেকেও পানি এনে ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় পানি সরবরাহ করি। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বর্তমানের মেঘনা নদীর পানি যেন ভবিষ্যতে দূষিত না হতে পারে ও বুড়িগঙ্গা নদীর ন্যয় নষ্ট না হয়ে যায় তা রোধে দেশের সকল গুরুত্বপূর্ণ নদীকে রক্ষার ঘোষণা দিয়েছেন। এরই অংশ হিসেবে রিভার মাস্টারপ্ল্যান কমিটি মেঘনা নদীটিকে বর্তমানে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রথমেই এর মাস্টারপ্ল্যান করতে উদ্যোগ নিয়েছে। ঢাকা ওয়াসার এমডি বলেন, ভবিষ্যতে যেন ঢাকাবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারি সেজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা এখন থেকেই মেঘনা নদীটিকে কিভাবে পরিবেশ দূষণ ও পানি দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারি ও নদীর পাড়ে কোন কোন স্থাপনা থাকবে বা কোন শিল্প কারখানা গড়ে তোলা যাবে না তা সহ সার্বিকভাবে নদীটির বিশুদ্ধতা ও গতি প্রকৃতি ঠিক করতে মাস্টারপ্ল্যান করার নির্দেশ দিয়েছেন। বৈদেশিক সহায়তায় এই মাস্টারপ্ল্যান কাজ করা হবে। ১৮ মাস পর এই মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী সরকারের নানা সংস্থা এ প্ল্যানের একশানে যাবেন। ফলে ঢাকাবাসী মেঘনা নদী থেকে ভবিষ্যতেও নিরাপদ পানি পাবেন।
×