ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

চসিক নির্বাচনে দুই মেয়র প্রার্থীর ইশতেহার

নান্দনিক নগর গড়ব-রেজাউল, সেবক হতে চাই- শাহাদাত

প্রকাশিত: ২৩:০৬, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

নান্দনিক নগর গড়ব-রেজাউল, সেবক হতে চাই- শাহাদাত

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তিনদিন পূর্বে শনিবার দুপুরে মেয়র পদে প্রধান দুই প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী ও বিএনপি মনোনীত ডাঃ শাহাদাত হোসেন দুই ঘণ্টার ব্যবধানে তাদের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন। রেজাউল করিম দুপুর পৌনে ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে এবং ডাঃ শাহাদাত হোসেন নগরীর জামালখানের একটি রেস্তরাঁয় সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী রেজাউল করিম চৌধুরী তার নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭ দফা দিয়েছেন। পক্ষান্তরে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন বিভিন্ন খাত নিয়ে নয়টি অঙ্গীকার বাস্তবায়নে ৭৪ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। উভয়েরই প্রথম অঙ্গীকারে স্থান পেয়েছে নগরীর জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিমের ৩৭ দফার ইশতেহারের মূল স্লোগান ‘রূপসী চট্টগ্রাম আমার-আপনার অহঙ্কার অঙ্গীকার-সবারযোগে সাজবে নগর।’ ৩৭ দফায় রয়েছেÑ ১. জলাবদ্ধতা নিরসন, ২. ১০০ দিনের অগ্রাধিকার পরিকল্পনা, ৩. যানজট নিরসন থেকে উত্তোরণ, ৪. সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, ৫. নালানর্দমা, খাল নদী দখলদার উচ্ছেদ, ৬. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ৭. চট্টগ্রামকে পর্যটন রাজধানী করা, ৮. হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে নজরদারি ও স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা, ৯. সরকারের চলমান মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখা ১০. বন্ধ হয়ে থাকা নাগরিক পরিষেবা কার্যক্রম পুনর্চালু করা ১১. রূপসী চট্টগ্রামের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা ১২. ব্লুইকনোমি বাস্তবায়নে পরিবেশ সৃষ্টি করা ১৩. পাহাড় হ্রদ বনানী সংরক্ষণ, সবুজায়ন, বেড়িবাঁধ ও সবুজ বেস্টনি গড়ে তোলা ১৪. কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ১৫. মশকমুক্ত নগর গড়ে তোলা ১৬. অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি, সড়ক ও ফুটপাথ দখল নিরুৎসাহিত করা ১৭. আধুনিক পাবলিক টয়লেট ও মহিলাদের নিরাপদ টয়লেট তৈরি করা ১৮. সব সড়ক অলিগলিতে এলইডি বাতি লাগানো ও সিসিটিভি ক্যামরা বসানো, ১৯. স্বল্প খরচে শিক্ষার মানসম্মত বিকাশ ঘটানো ২০. বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা চালু রাখতে অধিকতর উদ্যোগ নেয়া, ২১. রাজস্ব আহরণে পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ তৈরি করা ২২. নগরীর সব উন্নয়ন ও সেবা খাতকে এক ছাতার নিচে আনা ২৩. আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশিষ্ট নাগরিদের নিয়ে অপরাধ নির্মূল কমিটি গঠন করা, ২৪. সাইবার দূষণ ও আশক্তি নির্মূলে ব্যবস্থা নেয়া, ২৫. মহিলা উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা, ২৬. নারীদের জন্য আলাদা পরিবহন চালু করা ২৭. দুস্থ ও বিশেষ চাহিদার নাগরিকদের সেবায় বাড়তি ব্যবস্থা নেয়া ২৮. প্রতি ওয়ার্ডে একটি করে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালু করা ২৯. নগরীতে ইকোপার্ক, থিমপার্ক, শিশুপার্ক গড়ে তোলা ৩০. নগরীতে অবৈধ পার্কিং ও ফুটপাথ দখলমুক্ত রাখা ৩১. ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও সৃজনশীল কাজে উৎসাহ দেয়া ৩২. ডিজিটাল পাঠাগার কমপ্লেক্স গড়ে তোলা ৩৩. পাহাড় কাটা বন্ধ, জলাধার, পুকুর, দীঘি ভরাটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, ৩৪. মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ, বৌদ্ধভূমি চিহ্নিতকরণ ও সুরক্ষায় মনোযোগ দেয়া ৩৫. কিশোর অপরাধী গ্যাংয়ের আখড়া গুঁড়িয়ে দেয়া ৩৬. নাগরিক তথ্য সেবাসহ সব ধরনের সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্কের আওতায় আনা এবং ৩৭. নাগরিক সচেতনতা গড়ে তুলতে মহল্লায় উদ্বুদ্ধকরণ পরিষদ গড়া। ইশতেহার ঘোষণাকালে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সালাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান প্রমুখ। নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শনিবার কোন গণসংযোগ করেননি। তবে বিকেলে তিনি চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। আগ্রাবাদে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়, যার আয়োজক ‘সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।’ চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সভায় বিভিন্ন ট্রেডবডির নেতৃবৃন্দ চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানান। তারা বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানীর পূর্ণরূপ দিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করার বিকল্প নেই। চট্টগ্রামের প্রতি এ সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। তারা এ ধারাবাহিকতা রক্ষার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করে বলেন, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী সমাজ নৌকা প্রতীকের পক্ষে রয়েছে। শুধু তাই নয়, রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে তারা নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখবেন বলেও উল্লেখ করেন। ডাঃ শাহাদাতের নয় দফা ॥ অপরদিকে, দুপুর পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রাম নাগরিক ঐক্য পরিষদের সমর্থনে বিএনপি প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তার নয়দফা নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এতে তার মূল স্লোগান হচ্ছে নগর পিতা নয়, নগর সেবক হতে চাই। তার ইশতেহারে রয়েছে ১. জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়ে তোলা ২. বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে স্বাস্থ্যকর করা ৩. শিক্ষা ব্যবস্থাকে অটোমেশনের আওতায় এনে নগরীকে শিক্ষাবান্ধক হিসাবে গড়ে তোলা ৪. গৃহকর ও আবাসন খাতে নগরবাসী, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের জন্য গৃহকরমুক্ত করা ৫. পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে নান্দনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলা ৬. সন্ত্রাস দমনে উদ্যোগ নিয়ে নিরাপদ চট্টগ্রাম গড়ে তোলা ৭. হাজার বছরের ঐতিহ্যের আলোকে চট্টগ্রামকে সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ করার প্রয়াস নেয়া ৮. চট্টগ্রামকে আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটন নগরীতে গড়ে তোলা ৯. তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে আইটি পার্কসহ আইটি উপশহর গড়ে তোলা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব হাবিবুন নবী খান সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সাবেক মন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর এবং মহানগর ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারা। এছাড়াও শনিবার ডাঃ শাহাদাত হোসেন মহানগরীর উত্তর কাট্টলী ও সরাইপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি পরিবেশবান্ধব নিরাপদ পর্যটন নগরী গড়তে আগামী ২৭ জানুয়ারির নির্বাচনে নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান। তবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কিছুটা সংশয়ের সৃষ্টি এরমধ্যেই হয়েছে। ভোট যেন সুষ্ঠু ও ত্রুটিমুক্ত হয় সে জন্য নির্বাচনের পূর্বে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা তথ্য প্রযুক্তিবিদ দ্বারা মেশিনগুলো পরীক্ষা করার দাবি জানান নির্বাচন কমিশনের কাছে। সিইসির মতবিনিময় আজ ॥ চসিক নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি দেখতে আজ রবিবার চট্টগ্রামে আসছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। এদিন তিনি চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। অবহিত হবেন ভোটগ্রহণের সার্বিক বিষয় এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও প্রদান করবেন। সিইসি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। প্রসঙ্গত, প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারসহ প্রায় ১৬ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন ভোটগ্রহণে। যানবাহন চলাচলে ৩ দিনের বিধিনিষেধ ॥ চসিক নির্বাচন উপলক্ষে চট্টগ্রাম মহানগরীতে কিছু বিশেষ যানবাহনের ওপর ৩ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি রাত ১২টা থেকে ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে যে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে সেগুলো হচ্ছে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিক্সা, মাইক্রোবাস, জীপ এবং পিকআপসহ বিভিন্ন ধরনের ছোট যানবাহন। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করবে। তবে নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দেশী বিদেশী গণমাধ্যম কর্মী, নির্বাচনী কর্মকর্তা কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, নির্বাচনের বৈধ পরিদর্শক, জরুরী সেবা দেয়ার এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুত, গ্যাস, ডাক বিভাগ, টেলিযোগাযোগ ইত্যাদি জরুরী সেবার যানবাহনগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
×