ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৮ ফেব্রুয়ারি থেকে গণপ্রয়োগ

২৭ জানুয়ারি টিকা দেয়া শুরু

প্রকাশিত: ২৩:০৪, ২৪ জানুয়ারি ২০২১

২৭ জানুয়ারি টিকা দেয়া শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী ২৭ জানুয়ারি বুধবার থেকে দেশে করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। মহামারী মোকাবেলায় দেশে প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণ করবেন রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের একজন নার্স। একইদিন আর ২৪ জনকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ কার্যক্রমে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। সারাদেশে গণটিকা দেয়ার জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে অনলাইন নিবন্ধন শুরু হচ্ছে। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে গণপ্রয়োগ শুরু হবে। স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির শুরু থেকেই সারাদেশে একযোগে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। প্রথম মাসেই ৬০ লাখ মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। এভাবে ধারাবাহিকভাবে ভ্যাকসিন প্রয়োগ অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে ভ্যাকসিন পাওয়ার উপযুক্ত সকল নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে। ভ্যাকসিনের কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে সরকারের তরফ থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সহায়তা দেয়া হবে। দেশে প্রয়োগ হতে যাওয়া অক্সফোর্ড এ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের মারাত্মক কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। ফলে অহেতুক ভ্যাকসিন নিয়ে ভীতি বা বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানানো হয়েছে। স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, একজন নার্সকে প্রয়োগের মাধ্যমে আগামী ২৭ জানুয়ারি দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। পরদিন ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে কয়েক শ’ জনকে টিকা দিয়ে দেখার পর ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকাদান শুরু হবে বলে জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি টিকা দেয়ার কার্যক্রম ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন বলে জানান তিনি। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম টিকা দেয়া হবে একজন নার্সকে। এছাড়া আরও ২৪ জনকে টিকা দেয়া হবে। এদের মধ্যে করোনাভাইরাসের সময় কাজ করা সম্মুখযোদ্ধা স্বাস্থ্যকর্মী, বীর মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং সাংবাদিকরা থাকবেন। ঢাকায় ২৮ জানুয়ারি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভ্যাকসিনা দেয়া হবে। সচিব বলেন, হাসপাতালগুলোতে ৪০০ থেকে ৫০০ জনের ওপর টিকা প্রয়োগ করা হবে। তাদের এক সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে রাখার পর ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হবে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল অনুযায়ী প্রথমে কিছু সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার পর এক সপ্তাহ অপেক্ষা করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এতে করে ওইসব মানুষের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায় কি না তা লক্ষ্য করা হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি টিকা দিতে হলে ২৬ জানুয়ারি অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। আগামী ২৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি এ্যাপস তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ্যাপসটি তৈরির কাজ একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ্যাপস-এর মাধ্যমে মোট ছয়ধাপে ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিষয়টি শেষ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই)-এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনগুলো প্রয়োগ করা হবে। ধাপ-১ এ নির্দিষ্ট ওয়েবপোর্টালে যে কোন ব্যক্তি তার এনআইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) নাম্বার দিয়ে ভ্যাকসিন গ্রহণের জন্য নিবন্ধন নেবেন। ধাপ-২ এ ওয়েবপোর্টাল হতে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ করতে হবে। ধাপ-৩ এ নিবন্ধিত ব্যক্তির দেয়া মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রদানের তারিখ এবং তথ্য প্রেরণ করা হবে। ধাপ-৪ এ প্রথম ডোজ নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট তারিখ এবং সময় জানিয়ে দেয়া হবে। প্রথম ডোজ গ্রহণের পর ধাপ-৫ এ দ্বিতীয় ডোজ প্রদানের তারিখ এবং সময় জানানো হবে। দুটি ডোজ নেয়ার পর ওয়েবপোর্টাল থেকে ভ্যাকসিন সনদ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের তরফ থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়। তবে এর আগেই ভ্যাকসিন পেয়ে যাওয়াতে তা চলতি মাসেই শুরু করা হলো। ইতোমধ্যে মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস-এর নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিডিউল চূড়ান্ত করেছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন ওই কমিটিতে। এতে গুরুত্ব বিবেচনায় সারাদেশে কাদের আগে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে তা চিহ্নিত করে কার্যক্রম গ্রহণ করা হচ্ছে। শুরুতে ভারতীয় উপহার পাওয়া ২০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন দিয়ে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ এরমধ্যেই আগাম ২৫ জানুয়ারি ঢাকায় এসে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এভাবে আগামী ছয় মাস পর্যন্ত প্রতিমাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেরামের কাছ থেকে। এরমধ্যে দ্য গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিন্স এ্যান্ড ইমিউনাইজেশন্স গ্যাভি ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন দেবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ফাইজারের ভ্যাকসিন নেবে কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। সরকার এই ভ্যাকসিন গ্রহণে সম্মতি দিয়েছে। এরমধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে ভ্যাকসিন আমদানির বিষয়ে সরকার আলোচনাও শুরু করেছে। যেখান থেকেই কার্যকর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে সেখান থেকেই সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে। তবে এরমধ্যে ভারত এবং চীনের দুটি কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল চালাতে চাইছে। বাংলাদেশ এই ভ্যাকসিন দুটির ট্রায়াল চালানোর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। ভ্যাকসিনের ট্রায়াল হলে ওই কোম্পানির কাছ থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে এ বিষয়ে আলোচনাও শুরু করা হয়েছে। ভ্যাকসিনের তালিকা প্রণয়ন নিয়ে বিশিষ্টজনদের বিবৃতি ॥ করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদানের তালিকা নিয়ে গণ্যমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তালিকায় সংস্কৃতিকর্মীদের নাম না থাকায় উষ্মা প্রকাশ করে তারা বলেছেন, প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দ্রুত ভ্যাকসিন সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। কিন্তু করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগের জন্য যে তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তাতে নানা প্রশ্নের উদ্রেক করেছে। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এই তালিকার কোন পর্যায়ে শিল্পী, সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের নাম নেই যা ইতোমধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। করোনা ভ্যাকসিনের তালিকা প্রণয়নে সংশ্লিষ্ট দফতরকে ন্যায়সঙ্গত ও নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। আমরা মনে করি চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত সকল বয়সের ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী ভ্যাকসিনে অগ্রাধিকার পাবে। এর বাইরে দেশের সকল নাগরিকই করোনা সংক্রমণে সমান ঝুঁকিতে রয়েছে। শ্রেণী-পেশা নয় বয়স বিবেচনায় দেশের সকল নাগরিককে পর্যায়ক্রমে করোনা ভ্যাকসিন দেয়াই হবে মানবিক এবং যুক্তিযুক্ত। এর বাইরে পক্ষপাতদুষ্ট যে কোন তালিকা প্রণয়ন সরকারের সামগ্রিক সাফল্য ও ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করার আহ্বান জানাই। বিবৃতিদাতারা হলেন- অধ্যাপক অনুপম সেন, শামসুজ্জামান খান, রামেন্দু মজুমদার, ডাঃ সারওয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, মামুনুর রশিদ, মফিদুল হক, নাসির উদ্দিন ইউসুফ, গোলাম কুদ্দুছ, মিনু হক, হাসান আরিফ, মিলন কান্তি দে. কামাল পাশা চৌধুরী, কামাল বায়েজিদ, মিজানুর রহমান, আহ্কামউল্লাহ্ ও বিশ্বজিৎ রায়।
×