স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জন্ম থেকেই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনিরুল ইসলাম (৪৮)। এক চোখে মাত্র কয়েক হাত দূর পর্যন্ত আবছা ছায়ার মতো দেখতে পান তিনি। অসচ্ছল পরিবারে জন্ম নেওয়ায় শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সাথে লড়াই করে চলেছেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনিরুল। পরিবারের সদস্যদের দুই মুঠো খাবার জোগাড়ে যখন যে কাজ পেয়েছেন তাই করেছেন। মনিরুল ইসলামের স্ত্রী জাহানারা খানমও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী।
এই দম্পতির দুই পুত্রের মধ্যে বড় ছেলে জাহিদুল ইসলামও জন্মান্ধ। সংসারে নিত্য অভাব, তারপরেও বহু কষ্টে সংসারের হালধরে রেখেছেন। মনিরুল ইসলাম তার পরিবার নিয়ে থাকতেন বরিশালের সদর উপজেলার উত্তর লামছড়ি গ্রামের পৈত্রিক ভিটায়। জরাজীর্ণ টিনের দোচালা একটি ঘরে ছিল তাদের বসবাস। সামান্য বৃষ্টি হলে চালের ছিদ্র দিয়ে পানি পরতো। সন্তানদের নিয়ে সারারাত জেগে থাকতেন। টাকার অভাবে ঘর মেরামত করার সামর্থ্য ছিলো না।
গতবছর দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মনিরুল ইসলামের বসতভিটা ও ৩০ শতক ফসলি জমি কীর্তনখোলা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকে অন্ধকার জীবনে বাড়তে থাকে আঁধারের গাঢ়তা। পরিবারের সদস্যদের দু’মুঠো খাবার জোগাড়ে যেখানে তাকে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে জমি কিনে ঘর বানানো তার কাছে অসাধ্য ব্যাপার। বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পর তার স্ত্রী দুই পুত্রকে নিয়ে আশ্রয় নেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সেখান থেকে কিছুদিন পর অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাদের। আর মনিরুল ইসলামের আশ্রয় হয় জাতীয় অন্ধ সংস্থ্যার বরিশাল জেলা শাখার কার্যালয়ে। রাতে কাজ শেষ করে সবাই চলে গেলে ওই অফিসের মেঝেতে ঘুমানোর সুযোগ হয় মনিরুল ইসলামের।
এভাবে বসবাসই যখন তার পরিবারের নিয়তি ভাবা শুরু করলেন, তখন উপজেলা প্রশাসন সহায়তার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে এসেছেন। মুজিব বর্ষে বাংলাদেশের একজনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশহিসেবে জমিসহ টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি। ঘর পেয়ে খুশির জোয়ারে ভাসছে মনিরুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা।
বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মুনিবুর রহমান জানান, মুজিব বর্ষে বাংলাদেশের একজনও মানুষ গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নগরীসহ সদর উপজেলার মোট ১ হাজার ৫৭টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ২ শতক জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘর দুইরুমের। সাথে রয়েছে রান্নাঘর, বারান্দা, বাথরুম। এসব ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। সূপেয় পানির জন্য থাকছে গভীর নলকূপ।
গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপিন চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, মুজিববর্ষে উপজেলার ১২০ জন ভূমিহীন পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক দেয়া বসতঘর ও জমির দলিল শনিবার সকালে প্রদান করা হয়েছে। বরিশাল জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে জেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীন ১ হাজার ৫৫৬টি পরিবার ঘর পেয়েছে। নির্দিষ্ট নকশা অনুযায়ী ভালো মানের উপাদান দিয়ে জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে গৃহহীনদের জন্য প্রতিটি ঘর বানানো হয়েছে। খাস জমিতে প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। জেলায় ১ হাজার ৫৫৬টি ঘর নির্মানে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৬ কোটি টাকা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: