ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ ইশতেহার ঘোষণা করবেন রেজাউল ও ডাঃ শাহাদাত

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

আজ ইশতেহার ঘোষণা করবেন রেজাউল ও ডাঃ শাহাদাত

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনের আর বাকি মাত্র চারদিন। এর মধ্যে ভোটের প্রচার করা যাবে মাত্র তিনদিন। ফলে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকছেন গণসংযোগ এবং কৌশল নির্ধারণী কাজে। প্রায় ৭০ লাখ লোকের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের প্রধান সড়ক এবং অলিগলিতে ছুটছেন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকরা। লক্ষ্য এই অল্প সময়ের মধ্যে যতবেশি সম্ভব ভোটারের কাছে যাওয়া যায়। প্রচারে প্রাধান্য পাচ্ছে পরিকল্পিত নগরী গড়ার অঙ্গীকার। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীর জন্য এই ভোট মর্যাদার লড়াই। অপরদিকে, বিএনপি চায় মেয়র পদে জয়লাভের মধ্য দিয়ে একইসঙ্গে রাজনীতির মাঠেও ঘুরে দাঁড়াতে। আজ শনিবার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছেন প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির ডাঃ শাহাদাত হোসেন। তুলে ধরবেন নগর উন্নয়নে তাদের পরিকল্পনা। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে জুমার নামাজে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলবিনিময়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রার্থীদের গণসংযোগ। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা লিফলেট হাতে যাচ্ছেন ভোটারের কাছে। বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে উন্নয়নের অঙ্গীকার। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী প্রচারে আনছেন বর্তমান সরকারের আমলে বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন বড় বড় প্রকল্পগুলো। অপরদিকে, বিএনপির মেয়র প্রার্থীর অঙ্গীকার একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন নগরী গড়ে তোলার। অবশ্য মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নিরাপদ নগরী গড়ার অঙ্গীকার দুজনেরই। ভোটারদের মধ্যে দুই মেয়র প্রার্থীরই মোটামুটি পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে। এখনও পর্যন্ত ভোটের প্রচারে দুয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও আচরণবিধি লঙ্ঘনের খুব বড় ধরনের অভিযোগ নেই। যে সকল অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে জমা পড়ছে সে বিষয়ে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিচ্ছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই মাঠে রয়েছে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টিম। ভোটের আগের দিন থেকে বাড়বে স্ট্রাইকিং ফোর্স, যারা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করবেন। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ২০ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে মাঠে নিয়োজিত থাকবে প্রায় ৯ হাজার পুলিশ। এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা, তা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের অনুকূল। শেষ পর্যন্তও এ অবস্থা বজায় রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় ও প্রশাসন। দুই মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী ইশতেহার আজ ॥ আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী এবং বিএনপির প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন এতদিন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটের প্রচার চালালেও ছিল না ইশতেহার। আজ শনিবার কাক্সিক্ষত সেই ইশতেহার ঘোষণা করবেন উভয় প্রার্থী। নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী সকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে এবং ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জামাল খান সড়কে অবস্থিত একটি রেস্টুরেন্টে তুলে ধরবেন তাদের অঙ্গীকার সম্বলিত ইশতেহার। তবে এই ইশতেহার অনেকটা আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। কারণ এতদিন পর্যন্ত তারা গণসংযোগে তুলে ধরেছেন তাদের প্রতিশ্রুতি। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী শুক্রবার গণসংযোগ চালান মহানগরীর উত্তর পতেঙ্গা, দক্ষিণ পতেঙ্গা ও দক্ষিণ হালিশহর এলাকায়। তার সঙ্গে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এবং দল ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রার্থী যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই জড়ো হচ্ছে বিপুলসংখ্যক সমর্থক। ফলে কিছু কিছু স্থানে অনির্ধারিত পথসভায় বক্তৃতাও করতে হচ্ছে। রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে, যা সারাবিশে^ স্বীকৃত ও প্রশংসিত। নৌকা উন্নয়নের প্রতীক। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা এবং দেশের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে নৌকা প্রতীককেই জয়যুক্ত করতে হবে। এতে প্রধানমন্ত্রীর হাত শক্তিশালী হবে। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যেই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামে আর সে সমস্যা থাকবে না। বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডাঃ শাহাদাত হোসেন এদিন ব্যাপক গণসংযোগ করেন মহানগরীর বাকলিয়া এলাকায়। তার সঙ্গেও ছিলেন মহানগর ও জেলা বিএনপি এবং বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। এ গণসংযোগেও মানুষের বিপুল অংশগ্রহণ দেখা যায়। ডাঃ শাহাদাত হোসেন বিভিন্ন পথসভায় বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে পরিকল্পিত উন্নয়ন হয়নি। মাদক, সন্ত্রাসসহ নানা অনাচারে মানুষের জীবন নিরাপত্তাহীন। মেয়র নির্বাচিত হলে একটি বাসযোগ্য আধুনিক পর্যটন নগরী গড়ে তুলব। স্বাস্থ্য খাত তথা চিকিৎসা সেবার উন্নয়নেও বিশেষ গুরুত্ব্ প্রদান করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন ডাঃ শাহাদাত। বক্তব্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ধানের শীষের প্রচারে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা প্রদান এবং হামলার অভিযোগ আনেন। পুলিশ প্রশাসন এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না বলেও অভিযোগ ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীর। তবে এত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সাধারণ ভোটাররা নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে বিএনপিকে জয়যুক্ত করবে বলে আশাবাদ এই প্রার্থীর। আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিল তরিকত ফেডারেশন ॥ চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে সমর্থন দিয়েছে ১৪ দলের শরিক দল তরিকত ফেডারেশন। মহানগরীর মোমিন রোডে আয়োজিত এক কর্মী সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ সমর্থনের কথা জানানো হয়। চট্টগ্রাম মহানগর তরিকত ফেডারেশন আয়োজিত কর্মী সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের নগর সভাপতি কাজী আহসানুল মুরশেদ কাদেরী। বক্তারা বলেন, সুন্নি সুফিবাদী তরিকতপন্থী জনগণ আসন্ন নির্বাচনে মেয়র পদে রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ। তিনি একজন সৎ, বিনয়ী ও জনদরদি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তাকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে চট্টগ্রাম মহানগরের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। কর্মী সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ফেডারেশনের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পীরজাদা মুফতি আল্লামা মাঈনুল ইসলাম জোনাইদ। প্রধান বক্তা ছিলেন শাহজাদা কাজী মাওলানা আব্দুল হালিম শাহ। নৌকা বিজয়ী হলে খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রার্থী বিজয়ী হলে চট্টগ্রামের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে এবং নতুন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে যাবে। আগামী ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরবাসীর মহোৎসবের দিন। মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছে। এতে তারা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে পারছেন। তবে বিএনপির সচেতন অংশও চট্টগ্রামের স্বার্থে শেখ হাসিনার প্রার্থীকেই ভোট দেবেন। কেননা শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করে চলছেন। শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কথাগুলো বলেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন। প্রশাসক হিসেবে তার ছয় মাসের মেয়াদের শেষপ্রান্তে এই সভাটি ছিল অনেকটা বিদায়ের।
×