ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বল্প গ্যাস সরবরাহে শীতে এসে সঙ্কটে বিদ্যুত

প্রকাশিত: ২২:৩৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

স্বল্প গ্যাস সরবরাহে শীতে এসে সঙ্কটে বিদ্যুত

রশিদ মামুন ॥ স্বল্প গ্যাস সরবরাহে শীতে এসে সঙ্কটে পড়েছে বিদ্যুতখাত। এখন মোট চাহিদার অর্ধেক গ্যাস পাচ্ছে না বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এতে দেশের বড় বড় গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যুত কেন্দ্রগুলো চালু রাখা কঠিন হবে বলে মনে করছে পিডিবি। এতে করে সামগ্রিকভাবে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির শঙ্কাও তীব্র হচ্ছে। পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, এখন চাহিদার প্রায় অর্ধেক গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি আমরা। এতে করে বিদ্যুত কেন্দ্রে জ¦ালানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। যাতে চাহিদা মেটাতে বেশি বেশি করে তরল জ¦ালানি নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র চালানো হচ্ছে। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দেশে গ্যাসের চাহিদা থাকলেও এলএনজি আমদানি কম হচ্ছে। এতে করে গ্যাস সরবরাহ কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে বিদ্যুতখাতে। প্রতিদিন এক হাজার মেগাওয়াট চাহিদা থাকলেও ৬০০ থেকে ৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি এলএনজি আমদানি করা হয় না। এখন যা প্রতিদিন ২০০ মিলিয়ন ঘনফুটে নেমে এসেছে। ফলে প্রায় এলএনজির জন্যই সাড়ে ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের অতিরিক্ত ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এর বাইরে আগে থেকে আরও ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে। সঙ্গত কারণে সব মিলিয়ে এখন প্রায় এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। শীতে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে যাওয়াতে সঙ্কট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। পিডিবি বলছে ১১ হাজার মেগাওয়াটের গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু গড়ে ছয় হাজারের বেশি চালাতে পারি না। গ্যাস পেলে এই সমস্যা অনেক কমে আসবে। এতে করে দেখা গেছে পিডিবি ক্রমাগতভাবে দামী বিদ্যুতের দিকে ঝুকছে। এতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এখন বিদ্যুতখাতে গ্যাসের চাহিদা এক হাজার ৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট। পাওয়া যাচ্ছে গড়ে এর অর্ধেক গ্যাস। বিদ্যুত কেন্দ্রে অব্যাহত গ্যাস সঙ্কটের কারণে পিডিবি বেশি বেশি করে তেল নির্ভর বিদ্যুত কেন্দ্র চালাচ্ছে। এতে করে বসে থাকতে হচ্ছে সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রকে। দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে বেসরকারী (ভারতের আমদানিসহ) বিদ্যুত কেনা হয়েছে ২৪ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার। অন্যদিকে পিডিবি এবং সরকারী উৎপাদন কেন্দ্রের কাছ থেকে কেনা হয়েছে ১৪ হাজার ১৩৬ কোটি টাকার। গত অর্থবছরে দেখা গেছে, বেসরকারী উৎপাদনকারীদের মধ্যে আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি ব্যয় ছিল ৭ টাকা। অন্যদিকে ভাড়ায় চালিত কেন্দ্রের ইউনিটপ্রতি দাম ছিল ৮ টাকা ৩৪ পয়সা। এছাড়া ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুতের দাম ছিল ইউনিটপ্রতি ছয় টাকা ১ পয়সা। পিডিবি গতবছর আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছ থেকে ৭ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার বিদ্যুত কিনেছে। এছাড়া ভাড়ায় চালিত কেন্দ্র থেকে ৩ হাজার ২১২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা এবং ভারত থেকে ৪ হাজার ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকার বিদ্যুত কিনেছে। কিন্তু এর বিপরীতে সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের মধ্যে পিডিবির ইউনিটপ্রতি ব্যয় ছিল ৪ টাকা ৪৭ পয়সা আর সরকারী অন্য কোম্পানির বিদ্যুতের দর ছিল ৩ টাকা ৮৬ পয়সা। পিডিবির কাছ থেকে ৭ হাজার ৪৬৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার এবং সরকারী বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছ থেকে ৬ হাজার ৬৭১ কোটি ৬৭ লাখ টাকার বিদ্যুত কিনেছে। দাম কম হওয়া সত্ত্বেও সরকারী কেন্দ্রগুলো কেন কম চালানো হচ্ছে এ সম্পর্কে পিডিবির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকভাবেই অনেক কিছুই হয়। এর কোন সঠিক ব্যাখ্যা কারও কাছেই থাকে না। তবে যেসব কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম তুলনামূলকভাবে কম সেই কেন্দ্রগুলো বেশি বেশি চালানোর শর্ত দিয়েছিল বিদ্যুত বিভাগ। এখানে সেটি লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন যেসব কেন্দ্রের উৎপাদন খরচ কম সেই কেন্দ্রগুলো বেশি চালানো হলে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমিয়ে রাখা সম্ভব। এতে করে গ্রাহক পর্যায়েও দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না। কিন্তু এসব দিকে যাদের নজর থাকার কথা তাদেরই নজর নেই। নানা অজুহাতে বেশি বেশি করে বেসরকারী কেন্দ্রের দামী বিদ্যুত ক্রয়ের এই প্রক্রিয়ার যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা দূর করা দরকার। গতবছর বিদ্যুত উৎপাদনে মোট ব্যয় হয়েছে ৪১ হাজার ১৯৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারে ভর্তুকি ছিল দুই হাজার ৩০৯ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই ভর্তুকির মধ্যে সরাসরি বাজেট থেকে এক হাজার ২৯৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সংরক্ষণ এবং উন্নয়ন তহবিল থেকে এক হাজার ১৫ কোটি ২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। পিডিবি দামী বিদ্যুতের বদলে কম দরের সরকারী বিদ্যুত কিনলে এই ভর্তুকি দিতে হতো না।
×