ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘন কুয়াশা আর শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

ঘন কুয়াশা আর শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বৃষ্টির পর ফের বাড়ছে শীতের তীব্রতা। আবহাওয়া অফিস জানায় দেশে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অংশের ওপর দিয়ে শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশা শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। শীতে উত্তর জনপদে জনজীবনে নেমে আসছে দুর্ভোগ। শিশু ও বৃদ্ধরা নানারোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। অপর দিকে শীতের মধ্যে ঘন কুয়াশার দাপট বেড়ে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ও পাটুরিনয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। অপরদিকে মহাসড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে যানবাহন। দুদিন বৃষ্টির পর শুক্রবার আবহাওয়া অনেকটাই পরিষ্কার হয়েছে। মেঘ কেটে গিয়ে দেখা মেলে রোদের। কিন্তু রোদ থাকলেও শৈত্যপ্রবাহ শীতের তীব্রতা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। আজ শনিবারের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমবে। সেই সঙ্গে বাড়বে শীতের তীব্রতা। মাঝখানে কয়েকদিন বিরতির পর শুক্রবার থেকে ফের শুরু হয়েছে শৈত্যপ্রবাহ। এর আগে গত বুধ এবং বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দেখা মিলেছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, এই অবস্থা আরও দুদিন চলতে পারে। ফলে এই সময়ের মধ্যে বেশ শীতের আমেজ থাকবে। এরপর আবারও তাপমাত্রা বাড়বে। কমবে শীতের মাত্রা। মাঘ মাসের বাকি সময়ে শীত এভাবেই ওঠানামার মধ্যে থাকবে। এরপরই দক্ষিণা হাওয়ার প্রভাব শুরু হবে প্রকৃতিতে। আসবে বসন্ত। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কিছু অংশের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। সেখানে শীত বাড়ছে। অপর দিকে বিভিন্ন স্থানে মধ্য রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে তাপমাত্রা খুব বেশি কমছে না। কিন্তু শীতের অনুভূতি বাড়ছে ঠিকই। তিনি জনান, সারাদেশের ওপর শীতের বর্তমান অবস্থা আরও দুদিন থাকবে। ঘন কুয়াশায় রংপুর এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ওপর বেশি শীতের অনূভূতি থাকবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। আজ ও কাল তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে। তবে শৈত্যপ্রবাহের এই দফায় তাপমাত্রা খুব বেশি কমবে না। শৈত্যপ্রবাহের বিস্তারও খুব বেশি হবে না। গত মধ্য ডিসেম্বরের পর শুরু হওয়া শীত ঋতুতে এখন পর্যন্ত চার দফায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম দু দফায় শৈত্যপ্রবাহে বড় ধরনের শীতের দেখা মেলেনি। গত ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়ায় শৈত্যপ্রবাহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিস্তার লাভ করার কারণে শীতের আমেজ বাড়তে থাকে। কিন্তু পশ্চিমা লঘুচাপে প্রভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে উত্তরের হিমেল হাওয়া বেশ ছেদ পড়ে। পশ্চিমা লঘুচাপ কেটে যাওয়ার কারণে আরও এক দফায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হলেও এর প্রভাব দেশের অন্য অঞ্চলে খুব বেশি পড়বে না। তবে শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশা যোগ হওয়ায় শীতের অনুভূতি বাড়ছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের নদী অববাহিকা অঞ্চলসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে মধ্য রাত থেকে সকাল অবধি ঘন কুয়াশা ছেয়ে যাচ্ছে। ফলে দৃষ্টিসীমা একেবারেই নেমে যাচ্ছে। এতে সড়ক মহাসড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানায়, শুক্রবার থেকে পঞ্চগড় অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে শৈত্যপ্রবাহ। এদিন তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিকে ঢাকার তাপমাত্রাও কমছে। আগের দিন যেখানে ঢাকার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেখানে একদিনের ব্যবধানে তা ১৪.৪ ডিগ্রীতে নেমে এসেছে। আবহাওয়া অফিস জানায়, আজকের মধ্যে সারাদেশের তাপমাত্রা আরও কমবে। এমকি ঢাকার তাপমাত্রাও আরও কমে শীত বাড়াবে। এদিকে কুয়াশার তীব্রতা দেশের নৌযান চলাচল বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশায় দুর্ঘটনা এড়াতে শুক্রবার প্রায় সাড়ে নয় ঘণ্টা বন্ধ রাখার পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাটে কয়েক শ’ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকে। যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। সাড়ে ৯ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয় বলে জানায় বিআইডব্লিউটিসি আরিচা সেক্টরের ডিজিএম জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, শুক্রবার মধ্যরাতে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় পদ্মা নদীর মার্কিং বাতিগুলো অস্পষ্ট হয়ে ওঠে। ফলে মাঝ পদ্মায় নোঙর করে রাখা হয় চারটি ফেরি। এ অবস্থায় দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। পরে কুয়াশা কমলে ফের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। পরে মাঝ নদীতে নোঙর করা চারটি ফেরি তীরে এসে পৌঁছে। দীর্ঘ সময় ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় উভয় ঘাট এলাকায় কয়েক শ’ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। এখন সিরিয়াল অনুযায়ী গাড়িগুলো নৌপথ পার করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। এদিকে কুড়িগ্রাম থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, শীতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ জেলার মানুষ। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হওয়ার কারণে এসব মানুষ নাজেহাল হয়ে পড়েছেন। হিমেল হাওয়ায় কষ্ট আরও বেড়েছে। দুপুর গড়িয়ে গেলেও অধিকাংশ সময়ে সূর্যের আলো দেখা যায়নি। দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে দূরপাল্লাসহ বিভিন্ন যান চলাচল করতে হয়। প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শুক্রবার কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১১ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা শীতজনিত রোগে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সগুলোতে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ পুলক কুমার সরকার বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় ১২ শিশু, ডায়রিয়ায় ২৭ এবং শিশু ওয়ার্ডে ৬১ শিশু চিকিৎসা নিচ্ছে এবং আউটডোরে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এছাড়াও জেলার বাইরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিউমোনিয়ায় ১২ শিশু, ডায়রিয়ায় ২১ শিশু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ও ৩টি পৌরসভায় শীতার্তদের জন্য ৩৫ হাজার কম্বল, শীতবস্ত্র কেনার জন্য ৬৪ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও ৯ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। প্যাকেটের মধ্যে ১০ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ১ লিটার তেল, ১ কেজি লবণ, ১ কেজি চিড়া ও ১ কেজি চিনি ছিল। এদিকে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশে আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্য জায়গায় হাল্কা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। সারাদেশে রাতে ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। ২৪ ঘণ্টা পরবর্তী ৩ দিনে আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর আরও জানায়, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এদিকে তারা আরও জানায় রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার থেকে দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমছে। ঢাকায় উত্তর/উত্তর-পূর্ব দিকের বাতাস ঘণ্টায় ৫ থেকে ১০ কিলোমিটার বেগে বইতে পারে। আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে সকালের দিকে মাঝারি থেকে হাল্কা কুয়াশা পড়তে পারে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। ঢাকায় এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
×