ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের পর বাস্তবায়ন

টিএসসি ভবন সংস্কারে দুটি নক্সা তৈরির নির্দেশ গণপূর্তের

প্রকাশিত: ২২:২০, ২৩ জানুয়ারি ২০২১

টিএসসি ভবন সংস্কারে দুটি নক্সা তৈরির নির্দেশ গণপূর্তের

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পুরনো ভবন ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা সরে এসেছে গণপূর্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি নতুন করে দুটি নক্সা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। দুটি নক্সার মধ্যে একটিতে পুরনো ভবন ঠিক রাখা- অন্যটায় পুরনোটি ভেঙ্গে নতুন ভবন করার জন্য নক্সা প্রণয়নের এই নির্দেশ দেয়া হয়। দুটি নক্সাই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যে নক্সা অনুমোদন পাবে- সেটাকেই চূড়ান্ত নক্সা হিসেবে ধরে নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা হবে। গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার জনকণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছেন। স্থপতিরা জানিয়েছেন, টিএসসির বয়স এখনও একশ’ বছর হয়নি। আইনীভাবে এটি প্রাচীন ভবন নয়। এরপরেও টিএসসির মতো ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে সাংস্কৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। এসব স্থাপনা নষ্ট করলে মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি হবে। পুরনো ইতিহাস সংরক্ষণ না করলে এগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে খুবই ভয়াবহ। তখন এটি হবে জাতির জন্য গভীর হতাশার। টিএসটির ইতিহাস-ঐতিহ্যের জায়গা ঠিক রেখেই নতুন ভবন নির্মাণ করা উচিত বলে মনে করছেন তারা। এদিকে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) নিয়ে মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্ল্যান) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়ন ও শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ সুবিধা বাড়াতে নেয়া এ মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়িত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও শিক্ষাব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। চার ধাপে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দেয়ার পরই গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে হাত দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সার্ভের মাধ্যমে উন্নয়ন কার্যক্রম করা হবে। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার বলেন, নক্সা তৈরির কাজ করছে স্থাপত্য অধিদফতর। তারা বর্তমান স্থাপনা ঠিক রেখে একটি নক্সা করবে। আরেকটি নক্সা করবে বর্তমান অবস্থা ঠিক না রেখে। দুটি নক্সাই মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে যাবে। সেখান থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হবে। টিএসসির বিষয়টি নিয়ে সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে। আমরা বাস্তবায়নকারী সংস্থা, আমাদের হাতে চূড়ান্ত নক্সা এলে ওই নক্সা ধরে আমরা কাজটি বাস্তবায়ন করব। এখানে আমাদের তেমন কোন কিছু করার নেই। আমরা নিজেরা ইচ্ছে করে কোন কাজ করতে পারব না। বিষয়টি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সব কিছু ঠিক হলে টিএসসির উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। সূত্র জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রথম পর্যায়েই সংস্কারের অভাবে নষ্টের পথে ঐতিহ্যবাহী কার্জন হল মেরামত করে সংরক্ষণ করা হবে। বহিরাগতদের অবাধ যাতায়াতও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের নান্দনিক পুকুরটি সংরক্ষণ করে বসার জায়গা তৈরি করা হবে। প্রযুক্তিগত ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন সঙ্কট দূর, বিশ্বমানের লাইব্রেরি সুবিধা, পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠের আধুনিকায়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, অত্যাধুনিক জিমনেসিয়াম ও সব সুবিধা সংবলিত আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার থাকবে। মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ২৩ ভবন নির্মাণ ও সংস্কার এবং নতুন নতুন হল নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি ভবন আলাদা রং দিয়ে চিহ্নিত করা থাকবে। পুরনো প্রশাসনিক ভবন ভেঙ্গে নির্মাণ করা হবে প্রশাসনিক ভবন। ত্রিকোণাকৃতির ভবনের মাঝামাঝি থাকবে উপাচার্যের অফিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির একটি অংশ ভেঙ্গে ১০তলা ভবন করা হবে। ই-লাইব্রেরির জন্য থাকবে পর্যাপ্ত জায়গা। ডাকসুর বহুতল ভবন তৈরিরও পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে জাদুঘর। পাশাপাশি প্রযুক্তিগত ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, আবাসন সঙ্কট দূর, বিশ্বমানের লাইব্রেরি সুবিধা, পার্কিং, যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ, সবুজায়ন, খেলার মাঠের আধুনিকায়ন, সোলার এনার্জি স্থাপন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, অত্যাধুনিক জিমনেসিয়াম, সুইমিংপুলসহ আধুনিক মেডিক্যাল সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ২৩টি ভবন নির্মাণ ও সংস্কার এবং নতুন নতুন হল নির্মাণ করা হবে। কিছু ভবন ভেঙ্গে ফেলা হবে। ঐতিহ্যবাহী কিছু ভবন সংস্কার করে রেখে দেয়া হবে। দৃষ্টিনন্দন ক্যাম্পাস হিসাবে গড়ে তুলতে যা কিছু করা প্রয়োজন মহাপরিকল্পনায় তার সব কিছু রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী এই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা থাকবে গণপূর্ত অধিদফতর। প্রকল্পের প্রাথমিক কাজ প্রায় শেষ। এখন মূল কাজে হাত দেয়া হবে। গণপূর্ত অধিদফতরের (ডিভিশন-৪) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান এর আগে জনকণ্ঠকে বলেন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজিটাল সার্ভে গণপূর্ত অধিদফতর গ্রহণ করে নিয়ে স্থাপত্য অধিদফতের পাঠানো হয়। স্থাপত্য অধিদফতর নক্সা প্রণয়নের কাজ করছে। প্রকল্পের ঐতিহ্যবাহী ভবনগুলো যেমন আছে ঠিক তেমনিই থাকবে। তবে ভবনগুলো সংস্কার করা হবে। তাছাড়া বেশ কিছু নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের ক্যাম্পাস হবে আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন। বিশ্বের অনেক নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যে ধরনের আছে ওই ধরনের ক্যাম্পাস হবে।
×