ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ভারতীয় কিশোরের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটি

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ২২ জানুয়ারি ২০২১

টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ভারতীয় কিশোরের মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কমিটি

নিজস্ব সংবাদদাতা, টঙ্গী ॥ টঙ্গী চেরাগআলী কলেজ গেটের সামনের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দী এক ভারতীয় কিশোরের রহস্য জনক মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে গাজীপুর জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে বৃহস্পতিবার রাতেই এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এরা হচ্ছেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালাম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী কমিশনার আশরাফুল ইসলাম পিপিএম ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক এস এম আনোয়ারুল করিম।গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম এই তদন্ত কমিটি গঠন করেন। উল্লেখ্য করা যেতে পারে, বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ভারতীয় এক বন্দী কিশোর নাগরিক রিজউদ্দিনের (১৭) রহস্যজনক মৃত্যু হয়। সে ভারতের দক্ষিন চব্বিশ পরগনা এলাকার আব্দুর গফুর মোল্লার ছেলে। রিজউদ্দিন কিশোরগঞ্জের একটি মাদকের মামলায় টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে বন্দী হাজতী হিসাবে অবস্থান করছিল অন্য দেশীয় বন্দীদের সঙ্গে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা শুক্রবার দিনভর শিশু নিবাসস্থলে অবস্থান করে মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে তদন্ত কাজ শুরু করেছেন। জেলা প্রশাসকের গঠন করা তদন্ত কাজে আসা কমিটির সদস্যরা তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে কিছু জানাতে অপরগতা প্রকাশ করেন। এদিকে শিশু নিবাসে প্রবেশ করা টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশের ওসি আমিনুল ইসলাম ঘটনাস্থলের বিবরণ দিয়ে শুক্রবার বিকালে মোবাইল ফোনে জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজও মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে সহায়তা করবে। তিনি আরো জানান,রিজউদ্দিনের পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর কারন খোলসা হবে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের লোকজন বলছে, রিজউদ্দিন গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে বাইরে গেটের সামনে অবস্থানরত এবং এলাকাবাসী বলছেন, রিজউদ্দিনকে নিবাসের লোকজনই পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রটিতে এর আগেও কোন না কোন বন্দীর রহস্য জনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে কয়েকবার। বৃহস্পতিবার রাতে ভারতীয় কিশোর বন্দীর রহস্য জনক মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না সেখানকার কর্তৃপক্ষ। নিবাসী এলাকায় শুক্রবারও কার্যত কার্ফু অবস্থা বিরাজ করছে। ভেতরে বিরাজ করছে থমথমে অবস্থা। আতংক জনক পরিস্থিতিও। তথ্য জানার জন্য কোন সাংবাদিককে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের লোকজন ঢুকতে পারলেও সাংবাদিকদের ঢোকা পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা এখনও। সঠিক তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের এমন রহস্যজনক আচরণ মৃত্যু রহস্যর সন্দেহ আরো ঘনীভূত করে ফেলা হচ্ছে। এতে এলাকাবাসীও মনে করছেন এটি হত্যা কান্ডই হবে হয়তো। টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আমিনুল ইসলাম শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে জনকণ্ঠকে জানান, রিজউদ্দিন একটি মাদকের মামলায় টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আটক অবহায় মারা যায়। টঙ্গী হাসপাতালের চিকিৎসকরা জনকণ্ঠকে জানান, টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কম্পাউন্ডার হেলাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রিজউদ্দিনের মৃত দেহ টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসতাল নিয়ে আসে। হেলাল উদ্দিন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের জানান, রিজউদ্দিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। এ দিকে ঘটনার পর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে শুক্রবার অনেক চেষ্টা করেও কোন সাংবাদিক ভেতরে ঢুকতে পারেননি। প্রধান গেটের সামনে থেকে সাংবাদিকদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনকি ভেতরে অবস্হারত কর্তৃপক্ষের কেউ সাংবাদিকদের ফোনও রিসিভ করছেন না। ফলে কারো কোন বক্তব্যও নেয়া যাচ্ছে না মৃত্যু রহস্য সম্পর্কে। টঙ্গী পশ্চিম থানার ওসি আমিনুল ইসলাম শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে আরও জানান, প্রকৃত ঘটনা ময়না তদন্তের পর জানা যাবে। এদিকে ঘটনার পর থেকে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শুক্রবার টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান করে দেখা গেছে, কেন্দ্রের ভেতরে বিরাজ করছে ভূতুড়ে অবস্থা, শুনশান নিরবতায় সর্বত্র এক অজানা আতংক।
×